ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

টুইটার স্কাইপ ভাইবার- সব সামাজিক মাধ্যম খুলে দেয়া হয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫

টুইটার স্কাইপ ভাইবার- সব সামাজিক মাধ্যম খুলে দেয়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টুইটার, স্কাইপ ও ভাইবারসহ সামাজিক যোগাযোগের সব মাধ্যম খুলে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তিনি বলেন, রবিবার সন্ধ্যায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে এ সাইটগুলো বন্ধ করা হয়েছিল। সরকারের কাছে এমন কোন তথ্য ছিল যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। এ কারণেই ফেসবুক বাদে অন্য এ্যাপসগুলো বন্ধ করা হয়। সোমবার সরকার মনে করছে, এসব এ্যাপস চালু থাকলেও নিরাপত্তার কোন ঝুঁকি নেই। তাই এগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। ভাইবার, হোয়াটস এ্যাপ ও ইমোর মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোন সেবা এখন বন্ধ নেই। রবিবার সন্ধ্যায় মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার, টেলিকমিউনিকেশন এ্যাপ স্কাইপ এবং ইমো বন্ধ করে দেয় সরকার। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে দেশের সব মোবাইল অপারেটর ও টেলিকম সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাঠানো এক চিঠিতে এসব অনলাইন সেবা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়ার বিষয় নিয়ে ব্যবহারকারীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা বলছেন, সরকার তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দেশকে উন্নয়নের দিকে নেয়ার নানা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। আবার এ তথ্যপ্রযুক্তির ওপর নানা সময় নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ সেøাগানের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে তারা মনে করছেন। একদিকে সরকার প্রযুক্তির সুবিধা দিয়ে মানুষকে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত করার হাজারো পথ উন্মুক্ত করেছে। আবার সেই হাজারো পথ মুহূর্তের মধ্যে বন্ধ করে মানসিক চাপে ফেলা হচ্ছে। রবিবার থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২০ ঘণ্টা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বন্ধ থাকায় প্রতিটি ঘরেই এ চাপ সহ্য করতে হয়েছে। আর এ সময়ের মধ্যে মানুষ এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরকারের নানা সমালোচনাও করেছেন। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে নাশকতা হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার, স্কাইপ ও ইমো বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয় রবিবার সন্ধ্যা ৭টায়। এ নির্দেশ পেয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সেবাদানকারী মোবাইল অপারেটর ও টেলিকম সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ পাঠানো হয়। পরে অপারেটররা সোয়া ৭টার দিকে ফেসবুক বাদে অন্য সব সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বন্ধ করে দেয়। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, টুইটার স্কাইপ ও ইমোর মতো সামাজিক যোগাযোগের কোন মাধ্যম বন্ধ করার কোন নির্দেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয়নি। কেন কি কারণে এসব মাধ্যম বন্ধ করা হয়েছে তা তিনি জানেন না। ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ের (আইআইজি) একজন কর্মকর্তা বলেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো একবার বন্ধ আবার খুলে দেয়ার বিটিআরসির নির্দেশ আমাদের চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। এসব সাইট বন্ধ করতে হলে পুরো সিস্টেমের নানামুখী অসুবিধা তৈরি হয়। শুধু তাই নয় সার্বক্ষণিক নজরদারির ওপর রাখতে হয় গেটওয়েগুলো। কয়েক দিন পর পর এমন নির্দেশ পেলে ব্যবসারও চরম ক্ষতি হয়। তাছাড়া দেশে ও দেশের বাইরে থেকে লাখ লাখ মানুষ আত্মীয়স্বজন বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারে না। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে দেশের বিরাট একটা জনগোষ্ঠী মারাত্মকভাবে ক্ষুব্ধ। দেশের বাইরে যারা প্রবাসী তারা তো ভীষণভাবে বিরক্ত। ২০ ঘণ্টার ব্যবধানে আবার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম খুলে দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে লাখ লাখ মানুষ অসুবিধা ভোগ করেছেন। আমরা তো গলদঘর্ম। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে অনেক ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। সেই ব্যবসাগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও কম নয়। এদিকে সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, টুইটার বন্ধের বিষয়টি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ই ভাল জানে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোন নির্দেশ নেই। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটস এ্যাপ, ফেসবুক মেসেঞ্জার বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলাম। আপনারা জানেন গত ১০ ডিসেম্বর ফেসবুক খুলে দিয়েছি। খুব শীঘ্রই বাকিগুলো খুলে দেয়া হবে। উল্লেখ্য, গত ১৮ নবেম্বর বাংলাদেশে ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটস এ্যাপ, ফেসবুক মেসেঞ্জার বন্ধ করার নির্দেশনা দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর ১০ ডিসেম্বর ফেসবুক খুলে দেয়া হয়। এর আগে দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদ- কার্যকরকে সামনে রেখে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ ১২টি এ্যাপস বন্ধ করে দেয় বিটিআরসি।
×