ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জামায়াত শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীতে পতাকা মিছিল

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫

জামায়াত শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীতে পতাকা মিছিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে পতাকা মিছিল হয়েছে রাজধানীতে। সোমবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে ‘বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও’ ব্যানারে এ মিছিল থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। এদিকে একই দাবি জানিয়েছে ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন। বাংলাদেশে বসবাসরত ইসলামধর্মসহ ভিন্ন ধর্মাবলম্বী সকল সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও আহ্বান জানিয়েছেন দলটির নেতারা। সোমবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মিছিল বের করে ‘বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও’। মিছিলের আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির আহ্বায়ক মানবাধিকারকর্মী এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ, মুক্তিযোদ্ধা নাট্য সংগঠক নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডাঃ সারোয়ার আলী প্রমুখ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সন্তোষ প্রকাশ করে সুলতানা কামাল বলেন, এখনও যাদের বিচার হয়নি, আমরা চাই সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে তারা যেন তাদের প্রাপ্য শাস্তি পায়। একাত্তরে যে শকুনেরা জাতীয় পতাকা খামচে ধরেছিল, তা এখনও আমরা সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করতে পারিনি। একাত্তরে গণহত্যার নীলনক্সার অংশ ছিল এ দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা। একাত্তরে যে শকুনেরা জাতীয় পতাকা খামচে ধরেছিল, তা এখনও আমরা সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করতে পারিনি। এখনও মুক্তমনাদের নৃশংসভাবে একাত্তরের মতোই হত্যা করা হচ্ছে। একাত্তরের মতো এখনও আঘাত হানার চেষ্টা করছে। এদের চিহ্নিত করতে হবে। আমাদের সচেতন থাকতে হবে, যাতে এরা প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়তে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রক্তে রঞ্জিত পতাকা সমুন্নত রাখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডাঃ সারওয়ার আলী বলেন, এমন এক সময় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হচ্ছে, যখন বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকারীদের বিচার হচ্ছে এ দেশে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য সরকারের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। তিনি বলেন, মৌলবাদী ও জঙ্গীরা এ দেশের মুক্তবুদ্ধির চিন্তার মানুষ ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মানুষ অগ্রসর হলে সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গীবাদকে অপসারণ করা যাবে। মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, আজ যেমন শোকের দিন, তেমনি প্রত্যয় নেয়ারও দিন। আমাদের এই পতাকার জন্য ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছিলেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এই পতাকা তরুণদের হাতে সমুন্নত থাকবে চিরকাল। নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, এই দিনে সন্তুষ্টির জায়গা হচ্ছে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কয়েকজনের সাজা কার্যকর হয়েছে। এতে শহীদদের আত্মা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে। অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আরও ছড়িয়ে দিতে এ আয়োজন। এছাড়া আমরা চাই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার দায়ে দ-প্রাপ্ত দুই আসামি আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দীনকে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকর করা হোক। বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ে জড়িত সবার বিচার হোক। তিনি বলেন, জামায়াত-শিবির একটি সন্ত্রাসী ও জঙ্গী সংগঠন। শীঘ্রই এদের নিষিদ্ধ করতে হবে। সমাবেশ শেষে সমবেত কণ্ঠে দেশাত্মবোধক গান ‘ও আমার দেশের মাটি’, ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা’ ও ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’ গাইতে গাইতে পতাকা মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহীদ মিনার থেকে বেরিয়ে দোয়েল চত্বর-টিএসসি সড়ক দ্বীপ-ছবির হাট হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিখা চিরন্তনে গিয়ে শেষ হয়। শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীসহ জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ এ পতাকা মিছিলে অংশ নেন। এদিকে পেট্রোলবোমা হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যার দায়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিচার দাবির পর এবার অবিলম্বে জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি করেছে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন। ১৪ দলের শরিক এ দলটি একই সঙ্গে বাংলাদেশে বসবাসরত ইসলামধর্মসহ ভিন্ন ধর্মাবলম্বী সকল সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। সোমবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিয়কালে এ দাবি করেন তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব লায়ন এম এ আউয়াল এমপি। এ সময় তার সঙ্গে দলটির যুববিষয়ক মহাসচিব তৈয়্যবুল বশর মাইজভা-ারি, জাহাঙ্গীর হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এম এ আইয়াল এমপি বলেন, বিগত দুই মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদেশীদের ওপর হামলা হয়েছে, তাজিয়া মিছিলের আগের রাতে হোসেনী দালানে নাশকতা চালানো হয়েছে। সুফীপন্থী খিজির খানকে হত্যা করা হয়েছে। দিনেদুপুরে শিয়া মসজিদে ঢুকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে মুয়াজ্জিন সাহেবকে। এসব হত্যাকা- বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। অনতিবিলম্বে সরকারকে এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। এম এ আউয়াল আরও বলেন, ক্ষমতার জন্য একটি দেশকে শেষ করে দেয়ার সর্বশেষ চক্রান্তে মত্ত রয়েছে জামায়াতী জঙ্গীগোষ্ঠী। মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর ঠেকাতে কত রাষ্ট্র ও সংগঠন এবং সংস্থা কাকুতি-মিনতি করেছে কিন্তু কাজ হয়নি। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান। তবে জামায়াত প্রসঙ্গে সরকারের অবস্থানে সংশয় প্রকাশ করে এম এ আউয়াল বলেন, আমরা এখনও নিশ্চিত নই একাত্তরের ঘাতক দল জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হবে কিনা। এ যাবত সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে সন্দেহ করার মতো যথেষ্ট কারণ আছে বলে মনে করে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন। তার দাবি, দেশের তরুণ প্রজন্ম পরিষ্কারভাবে জামায়াত বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চায়। অন্যথা সরকারের সঙ্গে তরিকত ফেডারেশনের সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। হুমকির মুখে পড়তে পারে জোটের সম্পর্কও। এর একদিন আগেই রবিবার সংবাদ সম্মেলন করে দলটির চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য আলহাজ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারি আন্দোলনের নামে পেট্রোল বোমা, গাড়ি পোড়ানো, মানুষ হত্যাকারী অভিহিত করে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে বিচারের দাবি জানিয়েছেন। চেয়ারম্যান মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতের আশ্রয় নেয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে সকল কর্মকা-ের জন্য পাকিস্তান নিঃশর্ত ক্ষমা না চাইলে তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন ও ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধের আহ্বান জানান।
×