ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ যুক্ত এমন সকল আন্তর্জাতিক সংগঠন থেকে পাকিস্তানকে বহিষ্কারের দাবী

প্রকাশিত: ০১:৩৯, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫

বাংলাদেশ যুক্ত এমন সকল আন্তর্জাতিক সংগঠন থেকে পাকিস্তানকে বহিষ্কারের দাবী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সার্কসহ যেসব আন্তর্জাতিক সংগঠনে বাংলাদেশ যুক্ত রয়েছে সেসব সংগঠন থেকে পাকিস্তানকে বহিষ্কার করার উদ্যোগ নেওয়ার দাবী জানিয়েছে সেক্টর কামান্ডরস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১। শীর্ষ দুই য্দ্ধুাপরাধীর ফাঁসির দন্ডাদেশ কার্যকরের পর পাকিস্তানের সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশে অবস্থিত পাকিস্তান হাইকমিশনের অফিসে প্রতিবাদলিপি পৌঁছে দিয়ে সংগঠনের পক্ষে এ দাবী জানানো হয়। ওই প্রতিবাদ লিপিতে দ্রুত সময়ে পাকিস্তানকে সকল অসত্য বক্তব্য প্রত্যাহার, ৭১’র গণহত্যার জন্য দায়ী পাকিস্তানের ১৯৫ জন সামরিক ব্যক্তির বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়েছে। সোবার সকাল ১১ টায় প্রতিবাদলিপি পৌঁছে দিতে সংগঠনটি মিছিলসহকারে রায়েরবাজার বধ্যভূমি থেকে গুলশানের উদ্দেশ্যে রওনা দিলে পথিমধ্যে বনানী মাঠের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁদের আটকে দেয়। পরে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল হাইকমিশনে প্রতিবাদ লিপি পোঁছে দেয়। প্রতিনিধি দলে ছিলেন সেক্টর কমার্ন্ডাস ফোরামের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল(অব.) কে এম শফিউল্লাহ (বীরউত্তম), সিনিয়র সহ-সভাপতি লে. জেনারেল (অব.) এম হারুন অর রশিদ (বীর প্রতিক) ও সেক্টর কমার্ন্ডাস ফোরামের সেক্রেটারি জেনারেল সাংবাদিক হারুন হাবীব। লিপিটি পৌঁছে দিয়ে এসে দুপুর দেড়টায় বনানী মাঠের সামনের সড়কে মানববন্ধন করে সংগঠনটি। পরে প্রতিবাদ লিপি পাঠ করে শোনানো হয়। প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়েছে, “আমরা পাকিস্তান সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই যে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধকে স্বীকার করে ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ৯ এপ্রিল ১৯৭৪ তারিখে যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করে, তাতে স্পষ্ট অক্ষরে লেখা আছে: ‘পাকিস্তান সরকারের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেছেন তাদের সরকার সংগঠিত অপরাধের জন্য নিন্দা ও গভীর দু:খ প্রকাশ করছে (অনুচ্ছেদ-১৩)।’ চুক্তির অনুচ্ছেদ-১৪ এ এটিও লক্ষণীয় যে, ‘পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রণ জানালে তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন এবং বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাবেন ক্ষমা করতে ও যাতে আগেকার সব ভুল-ত্রুটি ভুলে পুনরায় সমঝোতায় আসা সম্ভব হয়।’ ” লিপিতে আরও বলা হয়, ‘পাকিস্তান সরকারের সাম্প্রতিক বিবৃতিটি সেই ত্রিপক্ষীয় চুক্তিরও অস্বীকৃতি, যদিও পাকিস্তান নিজেই এর অন্যতম স্বাক্ষরদাতা। আমরা সত্যিকার অর্থেই বুঝতে অক্ষম যে, পাকিস্তান সরকার যখন দুই দেশের মানুষের মধ্যে সুসম্পর্কের কথা বলে তখন কী করে এরকম একটি বিবৃতি প্রদান করতে পারে!’ লিপিটিতে বলা হয়,‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে আপনার সরকারের হস্তক্ষেপ পরিপূর্ণ নিন্দায় প্রত্যাখান করছি। আমরা ১৯৭১ এ বাংলাদেশের নিরীহ, নিরস্ত্র জনগণের উপর পাকিস্তান বাহিনীর বর্বরতার জন্যে পাকিস্তানের নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্তনা এবং পাকিস্তান পরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক বিবৃতিটি প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। লিপিতে আরও বলা হয়, পাকিস্তান সরকারের কাছে আমরা আরো দাবি জানাচ্ছি যে, ১৯৭১ সালে যে ১৯৫ জন পাকিস্তানি সামরিক ব্যক্তি গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিল, তাদের বিচার করতে হবে এবং বাংলাদেশের ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’ এর আগে রায়েরবাজার বধ্যভূমি থেকে রওনা দেওয়ার সময় সেক্টর কমার্ন্ডাস ফোরমের সিনিয়র সহ-সভাপতি লে. জেনারেল (অব.) এম হারুন অর রশিদ বলেন, ১৯৭১ সালে সেই র্ববরতা সংগঠিত হয়েছিলো সেটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত। সেই বর্বরতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে বিচার শুরু করেছে। বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থার সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে বিচার কার্য সম্পন্ন হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান অত্যন্ত দু:খজনকভাবে সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে ভঙ্গ করেছে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাদের শাস্তি হয়েছে তাদের হয়ে কাজ করছে এবং তাদের পক্ষে বক্তব্য রাখছে। এতে প্রমাণিত হয় তারা পাকিস্তানের দোসর। সেই দোসরদের বাংলাদেশে জিইয়ে রাখার জন্য পাকিস্তান সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সেক্টর কমার্ন্ডাস ফোরামের পক্ষ থেকে আমরা জোর দাবি জানাই, পাকিস্তান সেই অসত্য বক্তব্য দিয়েছে সেই বক্তব্য প্রত্যাহার করবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের তালিকাভুক্ত ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিচার চালিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, পাকিস্তান আমাদের দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই এবং বাংলাদেশ সরকারকে বলতে চাই- যেহেতু পাকিস্তান সরকার কোনো নীতি মানে না, সেজন্য কোন আন্তর্জাতিক সংগঠন পাকিস্তানের সঙ্গে আমরা থাকবো না। সার্কসহ যেসব আন্তর্জাতিক সংগঠনে বাংলাদেশ যুক্ত রয়েছে সেসব সংগঠন থেকে পাকিস্তানকে বহিষ্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হোক।
×