ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশকে ‘এশিয়ান টাইগার’ বললেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কৌশিক বসু;###;অনেক দেশের জন্য অনুসরণীয় ্রধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ’২০ সালের মধ্যেই প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে উন্নীত হবে

অগ্রগতি সর্বত্রই ॥ বিশ্বব্যাংকের ভূয়সী প্রশংসা

প্রকাশিত: ০৭:২৫, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫

অগ্রগতি সর্বত্রই ॥ বিশ্বব্যাংকের ভূয়সী প্রশংসা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. কৌশিক বসু বলেছেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশ এখন বড় ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এশিয়ার নেতৃত্ব প্রদানকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ এখন এশিয়ান টাইগার উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের উন্নয়ন শুধু এ দেশের উন্নয়ন নয়, এ উন্নয়ন সারাবিশ্বে প্রভাব ফেলে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে ২০২০ সালের মধ্যে এ প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে উন্নীত হবে। রবিবার বিকেলে রাজধানীর শেরেবাংলানগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এক গণবক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। বক্তৃতার বিষয় হচ্ছে : ‘বিশ্ব অর্থনীতি, বাংলাদেশ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা : সমস্যা ও সম্ভাবনা।’ ড. কৌশিক বসু বলেন, গত ২৩ বছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়, বৈদেশিক বিনিয়োগসহ অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রেই উন্নয়ন হয়েছে। কৌশিক বসু বলেন, বাংলাদেশের অবস্থান ভৌগোলিক দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। এই সুবিধা কাজে লাগাতে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের বড় একটি প্রতিযোগী দেশ। দেশটি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশ খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে যা অন্যান্য দেশের অনুসরণ করার মতো। তিনি বলেন, গত ২৩ বছর আগে যখন বাংলাদেশে এসেছিলাম তখন, ঢাকার রাস্তাঘাট ফাঁকা দেখা গেছে। ঢাকায় এসে ট্রাফিক জ্যামে পড়েই বুঝতে পেরেছেন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এশিয়ার নেতৃত্ব প্রদানকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের উন্নয়ন শুধু এ দেশের উন্নয়ন নয়, এ উন্নয়ন সারাবিশ্বে প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশের এ বছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬.৫ শতাংশ হবে উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংকের এই কর্মকর্তা বলেন, পরবর্তী বছরে এ প্রবৃদ্ধি ৬.৭ শতাংশ হতে পারে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে ২০২০ সালের মধ্যে এ প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে উন্নীত হবে। কৌশিক বসুর মতে, সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে গরিবদের জন্য কাজ করতে হবে। কারণ ধনীরা নিজেদের কাজ নিজেরা করে নিতে পারবেন। কাজ করতে হবে গরিবের কল্যাণে। আর এ বৈষম্য কমাতে ধনীদের ওপর অধিক করারোপ করতে হবে। এর মাধ্যমে ধনীদের অর্থ গরিবের কাছে পৌঁছবে। বিশ্বব্যাংকের এ শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বৈষম্য কমাতে উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। সরকারের পক্ষে সবার জন্য চাকরি তৈরি করা সম্ভব নয়। কিছু তরুণ উদ্যোক্তা হতে চায়। সবার জন্য চাকরি নিশ্চিত করতে না পারলেও তাদের জন্য ব্যবসায়িক প্রসেস সহজ করতে হবে। বাংলাদেশের জন্য উন্নতি করা সহজ। কারণ শ্রমবাজার এখানে সস্তা। এটা কাজে লাগাতে হবে। তবে এর জন্য অবকাঠামোগত উন্নতি করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, শুধু ভাল নীতি একটি অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে পারে না। এর জন্য নীতি প্রণয়নের পাশাপাশি তদারকি ব্যবস্থার উন্নয়নও করা জরুরী। একই সঙ্গে সামাজিক, রাজনৈতিক ও মানসিক অবস্থারও পরিবর্তন ঘটালেই অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থানে দাঁড়াবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বাংলাদেশের বিভিন্ন দিকের প্রশংসা করে বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বলেন, সামাজিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ ভারতের চেয়েও অনেক এগিয়ে রয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান, প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল। সমাপনী বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতির অবস্থান তুলে ধরেন। এ সময় তিনি রিজার্ভ নিয়ে বলেন, আমরা আমাদের বড় এ রিজার্ভ নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন নই। এটি নিয়ে ভবিষ্যতে কী কী করা যেতে পারে তা নিয়ে কাজ শুরু করেছি। তবে কৌশিক বসু বলেন, বেশি রিজার্ভ কোন সমস্যা নয়। বড় আকারের রিজার্ভ অনেক দেশেরই রয়েছে। তবে এটা শুধু বেশি থাকলেই হবে না। এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের আর্থিক খাতে সবার অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রমের সাফল্য সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের আমন্ত্রণে শনিবার ৪ দিনের সফরে ঢাকায় আসেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত ॥ রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে দেখা করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু। বাংলাদেশের ৬ দশমিক ৫ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনকে ‘বিরল ঘটনা’ অভিহিত করে অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ। পরে এই বক্তব্য তুলে ধরেন বলে তার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান। প্রেস সচিব সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন আন্তর্জাতিক ঋণদাতা এই সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনীতিতে সাফল্যের পেছনে তার দলের কিছু নীতি রয়েছে। এ সময় বেসরকারী খাতকে উন্মুক্ত করে দেয়াসহ উন্নয়নের জন্য তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। সাক্ষাতের সময় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী ও মসিউর রহমান, মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
×