ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাসেলসে পৃথক মিনি শীর্ষ সম্মেলন ডাকলেন মেরকেল

শরণার্থী প্রশ্নে বিভক্ত ইউরোপ

প্রকাশিত: ০৭:১৮, ১ ডিসেম্বর ২০১৫

শরণার্থী প্রশ্নে বিভক্ত ইউরোপ

ইউরোপে গণ-অভিবাসন সম্পর্কে অভিন্ন নীতি উদ্ভাবন করতে ইউরোপীয়দের কয়েক মাসের চেষ্টা রবিবার ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা অধিকাংশ শরণার্থী গ্রহণ করতে ইচ্ছুক এমন নয়টি ইইউ দেশ জার্মানির নেতৃত্বে এক কোয়ালিশন গঠন করেছে। এতে শরণার্থী গ্রহণ এবং এ কাজে অর্থ যোগান বাধ্যতামূলক করার ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আনুষ্ঠানিকভাবে বিভক্তই হয়ে পড়ল। খবর গার্ডিয়ান অনলাইনের। তুরস্কের সঙ্গে ইইউর অনুষ্ঠিত এক নজিরবিহীন পূর্ণাঙ্গ শীর্ষ সম্মেলনে তুরস্কের মধ্য দিয়ে অভিবাসীদের ইউরোপে আসা বন্ধ করতে এক চুক্তি নিয়ে মতৈক্য হয়েছে। তবে চুক্তিটি ভঙ্গুর বলে মনে হয়। কিন্তু জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল ইউরোপে তার নীতির প্রতি বিরোধিতার কারণে হতাশ হয়ে অন্য সাত নেতার সঙ্গে ব্রাসেলসে এক পৃথক ক্ষুদ্র শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করেছেন। তুর্কিদের সঙ্গে দ্রুত কার্যকর হবে এমন একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর এবং তুরস্ক থেকে বছরে লাখ লাখ শরণার্থী সরাসরি গ্রহণ করা এবং তাদের ইইউ দেশগুলোর মধ্যে ভাগ করে দেয়ার এক নতুন নীতি নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই এর উদ্দেশ। আকস্মিক ক্ষুদ্র শীর্ষ সম্মেলন ডাকা থেকে বোঝা যায় যে, মেরকেল ইইউ জুড়ে শরণার্থীদের ভাগ করে দেয়ার বাধ্যতামূলক পরিকল্পনায় যোগ দেয়ার জন্য তার বিরোধীদের রাজি করানোর চেষ্টা ছেড়ে দিয়েছেন। নতুন নীতির বিষয়ে মেরকেলের মিত্র ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জাঁক্লদ জাঙ্কার ক্ষুদ্র শীর্ষ সম্মেলন প্রসঙ্গে বলেন, এটি সেসব রাষ্ট্রের বৈঠক যেগুলো তুরস্ক থেকে বৈধভাবে বিরাট সংখ্যক শরণার্থী গ্রহণ করতে প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু পরে তিনি আরও বলেন যে, এরূপ যে-কোন চুক্তিই বাধ্যতামূলক নয়, ঐচ্ছিকই হবে। এদিকে, নেদারল্যান্ডস তুরস্ক থেকে সরাসরি বিশালসংখ্যক শরণার্থী গ্রহণ করে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে জার্মান নেতৃত্বাধীন দেশগুলোর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। পূর্ণাঙ্গ শীর্ষ সম্মেলনে দেখা দেয়া মতবিরোধজনিত উত্তেজনা তৎক্ষণাৎ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক ইউরোপ অভিমুখী শরণার্থী স্রোত মন্থর করার ক্ষেত্রে আঙ্কারাকেই আশার সবচেয়ে বড় উৎস হিসেবে দেখতে পশ্চিম ইউরোপীয়দের সঙ্গে এক হতে অস্বীকার করেন। তিনি তুরস্কের সঙ্গে অনুষ্ঠিত পূর্ণাঙ্গ শীর্ষ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেছিলেন। টাস্ক বলেন, আমরা যেন অবুঝ না হই। তুরস্ক অভিবাসন সঙ্কট সমাধানের একমাত্র চাবিকাঠি নয়। আমাদের বহিঃসীমান্ত রক্ষায় আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আমরা এ দায়িত্ব তৃতীয় কোন দেশকে দিয়ে করাতে পারি না। আমি আবার বলব, আমাদের বহিঃসীমান্তের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছাড়া শেনজেন ইতিহাসে পরিণত হবে। তিনি ইউরোপে ২৬ দেশকে নিয়ে গঠিত মুক্ত ভ্রমণ অঞ্চলের প্রতি ইঙ্গিত করছিলেন। অভিবাসীদের চাপ ও জিহাদপন্থীদের সন্ত্রাসের কারণে এ অঞ্চল ভেঙ্গে পড়ার বিপদে রয়েছে। জাঙ্কার বলেন, তিনি তুরস্ক থেকে প্রতিবছর আসা শরণার্থীদের কোটার ভিত্তিতে ইচ্ছুক রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে নতুন করে ভাগ করে দেয়ার ব্যবস্থা উদ্ভাবন করবেন। তিনি ফ্রান্সের আসন্ন আঞ্চলিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সেই চেষ্টা স্থগিত রাখবেন বলে মনে হয়। কারণ এরূপ চেষ্টার ফলে মেরিনলি পেনের ইইউ-বিরোধী, অভিবাসী-বিরোধী ফ্রন্ট ন্যাশনালের নির্বাচনী সম্ভাবনা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এর আগে তুরস্ক নগদঅর্থ, ভিসা ও ইইউতে দেশটির যোগদান প্রশ্নে আলোচনা পুনরায় শুরু করার বিনিময়ে ইউরোপ অভিমুখে শরণার্থীদের ঢল ঠেকাতে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
×