ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শাকসবজি, ফলমূল সংরক্ষণ

প্রকাশিত: ০৪:১০, ১ ডিসেম্বর ২০১৫

শাকসবজি, ফলমূল সংরক্ষণ

হেমন্তের গ্রামবাংলা যেমন সোনালী সুপক্ব ধান এবং রকমারি রঙিন শাকসবজিতে সুশোভিত ও সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে, রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোও তেমন হয়ে উঠেছে আলো ঝলমলে ও বর্ণিল। সত্যি বলতে কী, বর্তমানে ছোট-বড় বাজারভর্তি নানা রঙের রকমারি শাকসবজি, ফলমূল এমনকি মাছ-মাংস-ডিমে। এসবই অনুকূল আবহাওয়া ও ঋতুর সম্ভার। গত কয়েক বছরে দেশে ধান-চালের উৎপাদন বেড়েছে প্রভূত পরিমাণে। খাদ্যে এক রকম স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা চলে। কিছু পরিমাণ চাল রফতানিও হয় বিদেশে। এর পাশাপাশি কয়েক গুণ বেড়েছে শাকসবজি, ফলমূলের উৎপাদন। পাল্লা দিয়ে উৎপাদন বেড়েছে মাছ ও ফলের। এসবই সরকার তথা সাধারণ মানুষ ও ব্যক্তি উদ্যোগের সাফল্য। তবে এও সত্য যে, ইতিবাচক খবরের পাশাপাশি কিছু নেতিবাচক খবরও আছে। কেন যেন ধান-পাটসহ কাঁচাবাজারের সুষ্ঠু ও সমন্বিত বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠতে পারছে না দেশে। এ নিয়ে সময়ে সময়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে বিভিন্ন মহলে; চিন্তাভাবনাও যে নেই, এমন বলা যাবে না। প্রতিবছর ধান-চাল-পাট-চামড়া ইত্যাদির মূল্য নির্ধারণ এবং বেচাকেনা নিয়ে কারসাজি ও নয়-ছয়ের খবর পাওয়া যায়। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য এবং ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজির খবরও অস্বীকার করা যাবে না। এরপরও বাস্তবতা হলো, কৃষক ও চাষীরা কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম পান না। বরং সচরাচর যে দাম পান তাতে তাদের উৎপাদন খরচ ওঠে না। ফলে প্রায়ই হাহাকার রব ওঠে কৃষক ও চাষীর ঘরে। অন্যদিকে খুচরা বাজার থেকে দৈনন্দিন চাহিদার পণ্যদ্রব্য কিনতে গিয়ে গরিব তো বটেই, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম ঘটে। সীমিত আয় ও বাজেটে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। আবার ভিন্নরকম চিত্রও আছে। প্রতিদিন রাজধানীর বাজারগুলোতে কয়েক হাজার ট্রাকভর্তি শাকসবজি, ফলমূল আসে। চালান আসে নৌপথেও। এর জন্যই বাজারগুলো সময় সময় একেবারে উপচে পড়ে নানা রঙের শাকসবজি, ফলমূলের অফুরন্ত সম্ভারে। সচরাচর চাহিদার সঙ্গে ভারসাম্য বজায় থাকলে তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে মোবাইলসহ তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও প্রায়ই ব্যাহত হয় ভারসাম্য। বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এর একটি অন্যতম কারণ। ফলে প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর বাজারগুলোতে বিপুল পরিমাণ শাকসবজি, ফলমূল অবিক্রীত থেকে যায়। কিয়দংশ যায় পচে। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা তা ফেলে দিতে বাধ্য হন। তবে এর জন্য যে তাদের লোকসান দিতে হয়, তা নয়। বরং সকাল-দুপুরে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে অপচয়ের ঘাটতি তারা পুষিয়ে নেন। অন্যদিকে অবিক্রীত পচে যাওয়া বিপুল পরিমাণ পণ্য ফেলে দেন বাজারের ডাস্টবিন ও যত্রতত্র। এসবই পচে-গলে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়ায়। রোগ-শোক ব্যাধির ভাগাড় হয়ে ওঠে। সর্বোপরি জনজীবন দুর্বিষহ করে তোলে। এহেন দুরবস্থার আপাত সহজ সমাধান হতে পারে রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে ছোট-বড় হিমাগার স্থাপন। বড় পাইকারি ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্যোগেই এটি করতে পারেন। এতে তার পণ্যমান সুরক্ষিত হবে, অপচয় হবে কম। অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পক্ষে এটি কষ্টসাধ্য হলে কয়েকজন মিলে বাজার কমিটির সহযোগিতায় এটি করা যেতে পারে। প্রয়োজনে সরকারী-বেসরকারী ব্যাংক থেকেও এর জন্য সহজ শর্তে ঋণ দেয়া যেতে পারে। বর্তমানে বিদ্যুত সমস্যা নেই বললেই চলে। সে অবস্থায় রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে কোল্ডস্টোরেজ তথা হিমাগার স্থাপন এখন সময়ের দাবি। এতে বাজারগুলো হয়ে উঠবে আধুনিক, মানসম্মত, পরিচ্ছন্ন, পরিবেশবান্ধব। সর্বোপরি এতে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্যও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে অনেকাংশে।
×