গৌতম পাণ্ডে ॥ শুধু ছবি আঁকায় সীমাবদ্ধ থাকেননি তিনি। সাহিত্য-কবিতার জগতেও ছিল তার উন্মুক্ত বিচরণ। সামাজিক পরিস্থিতির পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে ভেবেছেন সারাক্ষণ। অসাম্প্রদায়িক এবং মুক্তিযুদ্ধেও চেতনাকে সবসময় হৃদয়ে ধারণ করেছেন। বেঙ্গলের উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের মঞ্চ থেকে গত বছরের এই দিনে চিরবিদায় নিয়েছিলেন বরেণ্যশিল্পী কাইয়ূম চৌধুরী। রাত সাড়ে ৮টার দিকে মঞ্চে উঠে বক্তব্য রেখেছিলেন। এরপর অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বক্তৃতা দিতে দাঁড়িয়েছিলেন। কাইয়ূম চৌধুরী এ সময় ডায়াসে ফিরে বলেন, ‘আমার একটি কথা বলার রয়েছে’। কিন্তু সে কথা আর বলা হয়নি তার। শিল্পীর শিল্প ভুবনে অমলিন হয়ে শিল্পের জয়গাথা রেখে গেছেন আগামী দিনের জন্য। ১৯৩২ সালের ৯ মার্চ ফেনীতে জন্ম নেয়া কাইয়ূম চৌধুরী ১৯৫৪ সালে ঢাকা আর্ট কলেজ থেকে ফাইন আর্টসে ডিগ্রী নেন। এরপর নিজের কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকায় মনোযোগী হয়েছিলেন। অঙ্গসজ্জার পাশাপাশি তেল ও জল রঙে আবহমান বাংলা ও বাংলার লোকজ উপাদানগুলোকে চিত্রে আধুনিক ফর্মে ফুটিয়ে তোলার জন্য কাইয়ুম চৌধুরীর কৃতিত্বকে স্মরণ করেন তার অনুজরা। জহির রায়হানের ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’ গ্রন্থের প্রচ্ছদ আঁকার মধ্য দিয়ে এই শিল্পে তার পদচারণা শুরু। কবি শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’র প্রচ্ছদশিল্পী কাইয়ূম চৌধুরীই। সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম দিকের গ্রন্থগুলোর প্রচ্ছদও তার তুলিতেই আঁকা হয়। ১৯৫৭ সালে তিনি আর্ট কলেজে শিক্ষকতায় যোগ দেন। আর্ট কলেজে নিজের দুই বছরের কনিষ্ঠ তাহেরা খানমকে ১৯৬০ সালে বিয়ে করেন। ওই বছরই কাইয়ূম চৌধুরী আর্ট কলেজ ছেড়ে যোগ দেন কামরুল হাসানের নেতৃত্বে নবগঠিত ডিজাইন সেন্টারে। ১৯৬১ সালে ডিজাইন সেন্টার ছেড়ে অবজাভার হাউসে চীফ আর্টিস্ট হিসেবে যোগ দেন। পরে ১৯৬৫ সালে আবার আর্ট কলেজে ফিরে যান। চারুকলা ইনস্টিটিউট হওয়ার পর অধ্যাপক হিসেবে ১৯৯৪ সালে অবসর নেন তিনি। শিল্পকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৮৬ সালে একুশে পদক লাভের পর ২০১৪ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার পান। এছাড়াও কাজের স্বীকৃতি হিসেবে শেলটেক পুরস্কার, সুলতান পুরস্কারসহ বহু দেশী-বিদেশী সম্মাননা পান তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নোট ডিজাইন এবং ম্যুরাল কমিটির সদস্য ছিলেন কাইয়ূম চৌধুরী। বাংলাদেশে প্রচলিত কয়েকটি টাকার নোটের ডিজাইন তারই করা।