ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১৬শ’ মেগা.ও. বিদ্যুত বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে আদানী

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২৫ নভেম্বর ২০১৫

১৬শ’ মেগা.ও. বিদ্যুত বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে আদানী

রশিদ মামুন ॥ ভারতের বেসরকারীখাতের সব থেকে বড় বিদ্যুত কোম্পানি আদানী পাওয়ার লিমিটেড বাংলাদেশের কাছে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের প্রস্তাবিত দুটি ইউনিট থেকে পিডিবির কাছে প্রতি ইউনিট সাত টাকা ২৬ পয়সা দরে বিদ্যুত বিক্রি করতে চায় কোম্পানিটি। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র বলছে আদানী এবং পিডিবির যৌথ কমিটি আলোচনার মাধ্যমে প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করার বিষয়ে সরকারকে সুপারিশ করবে। তবে দরকষাকষিতে সুদের হার কমানো সম্ভব হলে বিদ্যুতের দাম আরও কমানো সম্ভব বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, এটি উপমহাদেশের বিদ্যুত বাণিজ্যের জন্য একটি অভিজ্ঞতা তৈরি করবে। কোন দেশের বেসরকারী খাত নিজেদের দেশে স্থাপিত বিদ্যুত কেন্দ্রর পুরোটাই অন্যদেশে রফতানির ঘটনা এর আগে ঘটেনি। অতীতে সরকারী দুই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে দেশে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ এমনকি সরকারী সহায়তায় বিদ্যুতের সীমান্ত পেরনোর ঘটনা ঘটেছে। তবে এক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুত বাণিজ্যের পুরোটাই দুই দেশের সরকার পর্যায় নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বিশেষত গ্রীষ্মের সময় ভারতের বিদ্যুত চাহিদা বেড়ে গেলে বাংলাদেশে বিদ্যুত সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়। অন্যদিকে, দেশগুলোর মধ্যে ভাগাভাগিতে ভারত-নেপাল এবং ভুটানে জলবিদ্যুত প্রকল্পে বিনিয়োগের কথা দীর্ঘ দিন থেকেই চলে আসছে। তবে এখনও তা চূড়ান্ত কোন রূপ পায়নি। সূত্র বলছে বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের ঋণ সংগ্রহ, কেন্দ্র নির্মাণ, পরিচালনা, সঞ্চালন লাইন নির্মাণ এমনকি জ্বালানি সংস্থানের দায়িত্ব থাকবে আদানীর ওপর। বাংলাদেশ শুধু সেখান থেকে বিদ্যুত ক্রয় করবে। কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে পরিবেশবাদীদের যে প্রবল বাঁধা তাও স্পর্শ করবে না বাংলাদেশকে। যদিও বিদ্যুত বিভাগ সূত্র বলছে, আদানী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের সুদের হার ১১ শতাংশ ধরে হিসাব করেছে। সুদসহ ঋণ পরিশোধের সময় দেখানো হয়েছে ১০ বছর। আদানীর সঙ্গে দরকষাকষির মাধ্যমে সুদের হার কমানো গেলে বিদ্যুতের দাম আরও কমিয়ে আনা সম্ভব। এখন দেশেই বিশ্বের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক চার শতাংশ সুদে বিদ্যুতখাতে বিনিয়োগ করছে। অন্যদিকে, ভারতের মধ্যে কেন্দ্র স্থাপন করায় কর্পোরেট ট্যক্স দেশটিকে দিতে হবে ৩৩ দশমিক ২২ ভাগ। কয়লা আমদানির ট্যাক্সও ভারত পাবে। কেন্দ্রটি বাংলাদেশে স্থাপিত না হওয়ায় স্বভাবতই বাংলাদেশ এ অর্থ পাবে না। যদিও আদানীর জয়েন্ট প্রেসিডেন্ট কানদ্রপ প্যাটেল প্রেরিত ওই প্রস্তাবে আলোচনার মাধ্যমে দর চূড়ান্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের লভাংশ ভারতকে বিনা কারণেই দেশে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে সরকার। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় দেশটির দুটি বৃহৎ বিদ্যুত কেম্পানি আদানী পাওয়ার লিমিটেড এবং রিল্যায়েন্স গ্রুপ বাংলাদেশে বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। ওই সময় ভারতে স্থাপিত কোন বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুত বিক্রির প্রস্তাব দেয় আদানী পাওয়ার লিমিটেড। তবে ভারতে বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করে সেই বিদ্যুত অন্যদেশে বিক্রির জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারত সরকার এ বিষয়ে অনুমোদন দিলে বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। ভারত সরকারের অনুমোদনের পর গত ১১ আগস্ট পিডিবি এবং আদানীর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। ওই সমঝোতা স্মারকে বলা হয় আদানী ভারতীয় ভূখ-ের সুবিধাজনক স্থানে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করবে। যার পুরোটা বাংলাদেশে রফতানি করবে তারা। এর আগে আদানী বাংলাদেশে মহেশখালিতে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য গত জুনে এমওইউ স্বাক্ষর করে। আদানী বলছে, যতদিন তারা মহেশখালিতে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করতে পারছে না ততদিন তাদের গুজরাটের মুনদারা বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত বাংলাদেশে রফতানি করতে আগ্রহী। এক্ষেত্রে একই টার্মস এ্যান্ড কন্ডিশন মেনে তারা এই বিদ্যুত বাংলাদেশকে দিতে চায়। যে কোন সময় বাংলাদেশ চাইলে এই বিদ্যুত আদানী বাংলাদেশকে দিতে প্রস্তুত রয়েছে। এখন ভারত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করার প্রক্রিয়া চলছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদনের পর দেশটির বেসরকারীখাত থেকে এই বিদ্যুত ক্রয় করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সাব-স্টেশন নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আদানী প্রস্তাবে তাদের দেশে ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেছে তারা আদানী ট্রান্সমিশন লিমিটেডের দেশে পাঁচ হাজার কিলোমিটার হাইভোল্টেজ লাইন রয়েছে। আদানী তাদের অংশের ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণের কাজ করবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ অংশে পিডিবির তরফ থেকে পিজিসিবি এ দায়িত্ব নিতে পারে। দুই পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে ইন্টারকানেকশন এর স্থান নির্ধারণ করা যেতে পারে বলে মতামত দেয়া হয়।
×