ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘পাকিস্তানী বিবৃতি প্রমাণ করে সাকা-মুজাহিদ তাদের এজেন্ট’

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২৫ নভেম্বর ২০১৫

‘পাকিস্তানী বিবৃতি প্রমাণ করে সাকা-মুজাহিদ তাদের এজেন্ট’

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরের পর পাকিস্তানের কয়েকটি পত্রপত্রিকা ও কিছু ব্যক্তির বক্তব্যের কড়া প্রতিবাদ করেছেন আসমা জাহাঙ্গীর। দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার অবস্থান নেয়ায় দেশটির মধ্যে থেকেই সমালোচনা উঠেছে। আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা মানবাধিকার কর্মী ও এই আইনজীবী সে দেশের সরকারকে কঠোর সমালোচনা করেছেন। এছাড়া পাকিস্তানের একাধিক গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি ও টেলিফোন করেছিলেন দেশটির রাজনীতিবিদ এবং খ্যাতনামা ক্রিকেটার ইমরান খান। এদিকে দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে এবার সুর মিলিয়েছে তুরস্ক। সূত্র জানায়, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসি নিয়ে পাকিস্তান সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছে দেশটির মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী আসমা জাহাঙ্গীর। পাকিস্তানের এক্সপ্রেস ট্রিবিউন ও ডন পত্রিকার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি নিয়ে পাকিস্তান সরকারের আচরণের মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত হলো, যাদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে তারা আসলে ছিল রাজনৈতিক এজেন্ট, তারা কাজ করছিল পাকিস্তােেনর স্বার্থের জন্য। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আসমা জাহাঙ্গীর এসব কথা বলেন। পাকিস্তান সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রথম নারী সভাপতি আসমা জাহাঙ্গীর নিজের দেশের সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ইসলামাবাদের আচরণে এমন ধারণা হওয়া স্বাভাবিক যে নিজেদের নাগরিকের চেয়ে বাংলাদেশের বিরোধী দলের সদস্যদের জন্য তাদের ভালবাসা অনেক বেশি। তিনি বলেন, পাকিস্তানের সামরিক আদালতে বা সৌদি আরবে অন্যায্যভাবে কাউকে ফাঁসিতে ঝোলানো হলে সরকারকে এতটা উতলা হতে দেখা যায় না, যতটা বাংলাদেশের বিরোধী দলের দুই রাজনীতিবিদের ক্ষেত্রে দেখা গেল। আমরা আশা করি, সরকারের মধ্যে ওইসব ক্ষেত্রেও সমান আকুতি আমরা দেখতে পাব। আসমা জাহাঙ্গীর বলেন, পাকিস্তান সরকারকে আগে নিজের দেশে ও সৌদি আরবে অন্যায্য বিচারে ফাঁসি দেয়ার বিষয়ে কথা বলতে হবে। তারপর তারা বাংলাদেশের রাজনীতিকদের নিয়ে কথা বলুক। পাকিস্তানের জীবিত নাগরিকদের তুলনায় ওই দুই বাংলাদেশী রাজনীতিক সরকারের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কি নাÑ সে প্রশ্নেরও ব্যাখ্যা চেয়েছেন এই মানবাধিকারকর্মী। ফাঁসি ঠেকাতে ইমরানের চিঠি ও টেলিফোন ॥ বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন ও একটি চিঠিও দিয়েছিলেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির প্রধান ও কিংবদন্তি ক্রিকেটার ইমরান খান। মঙ্গলবার পাকিস্তানের একাধিক গণমাধ্যম এ খবর প্রকাশ করেছে। মঙ্গলবার পাকিস্তানের এক্সপ্রেস ট্রিবিউন ও জেম টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি ঠেকানোর জন্য গত ২১ নবেম্বর প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ওই চিঠিটি পাঠান ইমরান খান। চিঠিতে ইমরান লিখেছিলেন, যদি এই মৃত্যুদ- স্থগিত করা হয় তবে তা শুধু আমাদের এই অঞ্চলই নয় বিশ্বব্যাপী শান্তি ও বিচার প্রতিষ্ঠায় বৃহত্তর ভূমিকা রাখবে। তিনি আরো বলেন, ঘটনার সময় সালাউদ্দিন পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন বলে প্রমাণ রয়েছে। এ কারণে ওই সময়ে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অপরাধগুলো করার কোন সম্ভাবনাই নেই। এদিকে জেমটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ফাঁসি ঠেকানোর জন্য ইমরান খান শেখ হাসিনাকে টেলিফোনও করেছিলেন। এবার নাখোশ তুরস্ক ॥ যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের মৃত্যুদ- নিয়ে পাকিস্তানের পর এবার তুরস্কও নাখোশ হয়েছে। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মৃত্যুদ-প্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার ঘটনায় তারা অত্যন্ত মর্মাহত। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তুরস্ক এরই মধ্যে মৃত্যুদ- প্রথা বাতিল করেছে। তারা বিশ্বাস করে এ ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করে অতীতের ক্ষত প্রশমন করা যাবে না। তুরস্ক মনে করে ভ্রাতৃপ্রতিম বাংলাদেশের উচিত সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য মৃত্যুদ-ের পরিবর্তে অন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা। যুদ্ধাপরাধীরা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাভিক্ষা চাওয়ার পরেও তাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তুরস্ক। বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসির পরদিন রবিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া জানায়। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ওই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানী হাইকমিশনার সুজা আলমকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে তলবের পরে জানিয়ে দেয়া হয়, পাকিস্তান সরকার সরাসরি এখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তান সরকার কোনোভাবেই যেন আর হস্তক্ষেপ না করে, সে বিষয়ে তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়। ১৯৭১ সালের গণহত্যার বিচারের লক্ষ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রতি বাংলাদেশে সাধারণ নাগরিক ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন রয়েছে বলেও জানানো হয় পাকিস্তানী হাইকমিশনারকে। তাই এই বিচার নিয়ে পাকিস্তান যা বলছে, সেটা অগ্রহণযোগ্য ও অনাকাক্সিক্ষত বলেও উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ঢাকায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের এই দুই নেতাকে ফাঁসিতে ঝোলানোর পর এক বিবৃতিতে উদ্বেগের কথা জানায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কাজী এম খলীকুল্লাহ এক বিবৃতিতে বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুদ- কার্যকর আমরা গভীর উদ্বেগ ও বেদনার সঙ্গে লক্ষ্য করলাম। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাকিস্তানী বাহিনীর দোসর কয়েকজনের সাজার পর এই দুজনের মৃত্যুদ- কার্যকরের ঘটনায় ইসলামাবাদের নাখোশ হওয়ার কথাও বলা হয়েছে বিবৃতিতে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের এই বিচারকে ‘প্রহসন’ আখ্যায়িত করে এনিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়ার কথাও বলেছে পাকিস্তান। ১৯৭১ সালের বাঙালীর ইতিহাসের মর্মান্তিক অধ্যায়কে পাশে রেখে ১৯৭৪ সালের ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ চুক্তির আলোকে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ঢাকার প্রতি আহ্বান রেখেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া এই বিবৃতির প্রতিবাদে সোমবার দুপুরে ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সুজা আলমকে তলব করা হয়।
×