ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেহুলা-লখিন্দরের বাসর ঘর না ভিক্ষুদের উপাসনালয়

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ৭ নভেম্বর ২০১৫

বেহুলা-লখিন্দরের বাসর ঘর না ভিক্ষুদের উপাসনালয়

পর্যটনের অপার সম্ভাবনার এই দেশে শুধু শীত মৌসুম নয়, সারা বছরই প্রকৃতির সঙ্গে ইতিহাসের মিশ্রণে বেড়ানোর জায়গাগুলো হাতছানি দেয়। পর্যটনের সব কিছুই বিবেচনায় এনে সরকার ২০১৬ সালকে পর্যটন বছর হিসেবে ঘোষণা করেছে। আগামী বছরের প্রতিটি দিন সারা দেশের দর্শনীয় স্থানগুলোতে দেশী-বিদেশী পর্যটকের আনাগোনায় মুখরিত থাকবে। ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের মিলন মেলায় পরিণত হবে। কি নেই এই দেশে! দেশের সবচেয়ে প্রাচীন পু-্রবর্ধনভুক্তির রাজধানী পু-্রনগরখ্যাত বগুড়ার মহাস্থানগড়ে মাটির নিচে আছে সভ্যতার কয়েকটি কাল। নিত্যদিন হাজারো মানুষ এই পথ দিয়ে এবং সমুখের জাতীয় মহাসড়ক ধরে দূর দূরান্তে যাওয়া আসা করে। চেনা পথের ধারে লুকিয়ে আছে অচেনা অজানা ইতিহাসের কয়েক হাজার বছরের ঐশ্বর্য। বগুড়া জেলা শহর থেকে ১১ কিলোমিটার উত্তরে মহাস্থানগড় পৌঁছার আড়াই কিলোমিটার আগে একটু ভেতরে গোকুলের মোড়ের এতকাল পরিচয় ছিল পৌরাণিক কাহিনী বেহুলা লখিন্দরের বাসর ঘর। ইতিহাসবিদগণ আবিষ্কার করেছেন উঁচু এই ভিটা ছিল বৌদ্ধ ভিক্ষুদের উপাসনালয়। পরে আরও জানা যায় বৌদ্ধদের পরাজিত করে যারা আসে তারা এই উঁচু ভিটাকে সেনানিবাসের দূর দৃষ্টিনিক্ষেপের ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করে। বৌদ্ধদের এই কীর্তির সঙ্গে দিনে দিনে মাটি খুঁড়ে আরও উদঘাটিত হয়, এই অঞ্চলে সংস্কৃতি ও উচ্চ শিক্ষা বিস্তারের পথ বৌদ্ধরাই গোড়াপত্তন করে সম্প্রসারিত করেছে। বাংলাদেশ-ফ্রান্স যৌথ প্রতœখনন কাজে মহাস্থানগড়ের মাটির নিচ থেকে বের হয়ে আসছে মৌর্য সুঙ্গ গুপ্ত পাল সেন সুঙ্গ কুশান যুগের নানা প্রতœ নিদর্শন। মৌর্যদের কালের ব্রাহ্মি হরফে লেখা শিলালিপি প্রমাণ করে বৌদ্ধ শাসনের। ইতিহাসবিদরা আবিষ্কার করেছেন গৌতম বুদ্ধের (সিদ্ধার্থ) পদচারণা ছিল এই মাটিতে। মহাস্থানগড় থেকে প্রায় আট কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে ভাসুবিহারের মাটির নিচ থেকে যে অবকাঠামো বের হয়েছে তার নকশা এবং উদ্ধার সিলমোহর প্রমাণ করে এই স্থাপনা ছিল উচ্চতর বিদ্যাপীঠ। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ। ভাসুবিহার থেকে উত্তর পশ্চিমে নওগাঁ এলাকায় বৌদ্ধদের কীর্তি পাহাড়পুর। যা বিশ্ব কালচারাল হেরিটেজে স্থান পেয়েছে। এভাবেই প্রতœসমৃদ্ধ হয়ে আছে উত্তরাঞ্চল। রাজশাহীর পুঠিয়ার মন্দিরের স্থাপত্য, দিনাজপুরের বিখ্যাত কান্তজীর মন্দির, রাম সাগর, নাটোরের দীঘাপতিয়া ও রানী ভবানীর রাজবাড়ি, যার একটি উত্তরা গণভবন, রংপুরের তাজহাট জমিদার বাড়ি, নীলফামারীর নীল সাগর, পাবনার জোড় মন্দির, জয়পুরহাটের পাঁচবিবির পাথর ঘাটা, শাজাহাদপুরের রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি, নওগাঁর পতিসর রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মুঘল ও সুলতানী স্থাপত্যসহ প্রতিটি জায়গায় রয়েছে দর্শনীয় স্থান। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কুষ্টিয়ায় রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহ কুঠিবাড়ি, তার অল্প দূরেই ছেউরিতে লালন শাহের কীর্তির নিদর্শন ভ্রমণ পিপাসুদের মন ভরিয়ে দেয়। সাধক সেনাপতি খান জাহানআলী পনের শতকে বাগেরহাটে এসে স্থাপত্য গড়েন। খুলনার মংলা বন্দর ও সুন্দরবন পটুয়াখালীর কুয়াকাটা যশোরের কেশবপুর ঝিনাইদহে খানজাহানআলীর স্মৃতির কয়েকটি নিদর্শন কালের সাক্ষীর মিশ্রণে বেড়ানোর বড় আসন করে নিয়েছে। দেশের পূর্বাঞ্চলের কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত দেশের গ-ি ছাড়িয়ে বিশ্বের সকল মানুষকে হাতছানি দেয়। রাজধানী ঢাকার কাছে সোনারগাঁ স্বাধীন সুলতানী ও বাংলার রাজধানী হয়ে ইতিহাস ধরে রেখেছে। লোকশিল্প জাদুঘর পানাম নগর বেড়ানোর সুন্দর স্থান। সোনারগাঁয়ে ব্রহ্মপুত্রের তীরে সুলতানি যুগের সাধক শাহ লঙ্গরের সমাধি ও সুলতান আহমেদ শাহর মসজিদ আজও দৃষ্টি নন্দন হয়ে আছে। বৌদ্ধদের অনেক কীর্তির বড় আরেকটি ময়নামতি। দেশের উত্তরাঞ্চলের বিশাল এলাকাজুড়ে এবং কুমিল্লার ময়নামতি পর্যন্ত বৌদ্ধদের যত স্থাপনা তার সবগুলোই প্রাচীন ইতিহাসের সভ্যতার ধারাবহিকতা তুলে ধরে। ঢাকার বাইরে দিনাজপুরে স্বপ্নপুরী ব্যক্তি উদ্যোগে গড়া বেড়ানোর বড় স্পট। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ডাক বাংলোতে গিয়ে থাকলে রাতে মনে হয় প্রকৃতির এক নিসর্গ। Ñসমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×