ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্য কর্মকর্তারা মুখ খুলছে না

কোটি টাকা লোপাট ॥ মাদারীপুরে ধান ক্রয়ের নামে

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৭ নভেম্বর ২০১৫

কোটি টাকা লোপাট ॥ মাদারীপুরে ধান ক্রয়ের নামে

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ৬ নবেম্বর ॥ খাদ্যগুদামে ধান-চাল ক্রয়ের নামে বিপুল অংকের টাকা লোপাটের ঘটনা ধামাচাপা দিতে প্রভাবশালীরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। চাল বোঝাই ট্রাক আটকের ২ দিন পর অজ্ঞাত কারণে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। উল্লেখ্য, ২ নবেম্বর স্থানীয় মিলার ও ডিলাররা জেলা প্রশাসকের কাছে চরমুগরিয়া খাদ্যগুদামে ৫০ লাখ টাকার খাদ্য ঘাটতি আছে মর্মে লিখিত অভিযোগে দায়ের করেন। জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে ৩ নবেম্বর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। ওইদিন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সফিউর রহমান সরেজমিন তদন্ত করেন। জানা গেছে, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে বাংলাদেশ খাদ্য অধিদফতর কর্তৃক মাদারীপুরের চরমুগরিয়া খাদ্যগুদামে সরকারীভাবে ধান-চাল ক্রয় করে গুদামজাত করার জন্য ৪ অক্টোবর মাদারীপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বরাবর চার শ’ টন ধান ক্রয়ের বিশেষ বরাদ্দের চিঠি পাঠায়। চিঠি পাওয়ার পর চরমুগরিয়া খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) শাহনেওয়াজ আলম জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক তানভীর মাহমুদ ও সদর উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক শাহজাহান খানের সঙ্গে যোগসাজসে তিন দিনের মধ্যে সরকার নির্ধারিত ২২ হাজার টাকা টন দরে চার শ’ টন ধান ক্রয় দেখায়। বিধান রয়েছে প্রকৃত কৃষক প্রতি এক শ’ কেজি থেকে তিন হাজার কেজি পর্যন্ত ধান সরবরাহ করতে পারবে। এতে চার শ’ টন ধান সরবরাহ করতে ১৩৪ কৃষকের প্রয়োজন হয়। চরমুগরিয়া খাদ্যগুদামে যে জনবল রয়েছে তাতে প্রতিদিন ৫০ টন ধানের বেশি আনলোটড করা সম্ভব নয়। তাহলে কিভাবে তিনদিনের মধ্যে চার শ’ টন ধান গুদামজাত করা হলো এনিয়েই জনমনে প্রশ্ন দেখা দেয়। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) শাহ নেওয়াজ আলম ৫ অক্টোবর থেকে ৭ অক্টোবর তিন দিনের মধ্যে চরমুগরিয়া সোনালী ব্যাংক থেকে ধান না ক্রয় করে ধান ক্রয়ের অনুকূলে ১৩৪ ভুয়া কৃষকের নামে সার্টিফিকেট তৈরি করে ৮৮ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। বিলের নং- ২০৩৪২০৭ থেকে ২০৩৪৩০৭ (বাকিগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে)। যাদের নামে সার্টিফিকের তৈরি করে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে সেই সব কৃষকের একজনও জানে না এবং তাদের কোন স্বাক্ষর নেই। এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংক চরমুগরিয়া শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘খাদ্য ক্রয়ের বিলসমূহে স্বাক্ষর দানকারী কৃষকের পরিবর্তে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজে ও অন্য লোকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করতে চাইলে ব্যাংক ম্যানেজার তাতে আপত্তি জানায় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক টেলিফোনে মানেজারকে বিলে আপত্তি না দেয়ার জন্য বার বার অনুরোধ করে’ এবং বলেন, ‘সব কৃষককে ব্যাংকে যেতে হবে এমন কোন কথা নেই।’ এছাড়া দুইজন প্রভাবশালী ব্যক্তিও এ বিষয়ে ব্যাংক ম্যানেজারকে চাপ প্রয়োগ করেন।’
×