ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-জিম্বাবুইয়ে প্রথম ওয়ানডে শনিবার

আসল লড়াইয়ে চমকের প্রত্যাশা টাইগারদের

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৬ নভেম্বর ২০১৫

আসল লড়াইয়ে চমকের প্রত্যাশা টাইগারদের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশ-জিম্বাবুইয়ে সিরিজ শুরু হচ্ছে শনিবার। এদিন তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সোমবার দ্বিতীয় ও বুধবার তৃতীয় ওয়ানডে হবে। ম্যাচগুলো দিবারাত্রিতে হবে। শুরু হবে দুপুর ১টায়। ওয়ানডে সিরিজ শেষে দুইম্যাচের টি২০ সিরিজ শুরু হবে। ১৩ নবেম্বর প্রথম ও ১৫ নবেম্বর দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুইয়ে। টি২০ ম্যাচগুলো বিকেল পাঁচটায় শুরু হবে। সবকটি ম্যাচ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। সিরিজে নামার আগে অবশ্য বাংলাদেশ দলে সুখের স্মৃতি বিরাজ করছে না। আর জিম্বাবুইয়ে দলে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে খেলতে নামার আগেই সুখ স্মৃতি জড়িয়ে পড়েছে। প্রস্তুতি ম্যাচে যে দাঁড়াতেই পারল না বাংলাদেশ। অবশ্য ম্যাচটিতে জাতীয় দলের মাশরাফি, মুশফিক, লিটন, সাব্বির, জুবায়ের, ইমরুল শুধু খেলেছেন। মূল সিরিজে সাকিব, তামিম, মাহমুদুল্লাহ, নাসিররা যুক্ত হবেন। তখন দেখা যাবে আসল লড়াই। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা সিরিজ শুরুর আগে থেকেই নির্ভার। সবার ভেতর এখন একটি ভীত গড়া হয়ে গেছে, যে দলই সামনে আসুক, জেতা খুব ভালভাবেই সম্ভব। প্রতিপক্ষ দলটি আবার জিম্বাবুইয়ে। যে দলটিকে গতবছর অক্টোবর-নবেম্বরে হারিয়েই ক্রিকেটে বাংলাদেশ নতুন দিগন্ত খুঁজে পেয়েছে। নতুনভাবে পথ চলতে শুরু করেছে। যে পথে এখন পর্যন্ত শুধু সাফল্যই ধরা দিচ্ছে। জিম্বাবুইয়েকে তিন ম্যাচের টেস্টে ৩-০ ব্যবধানে হারানোর পর পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ৫-০তে হারায় বাংলাদেশ। সেই যে বাংলাদেশের দুর্দান্ত দিন শুরু হয়ে যায়, এরপর আর তা থামছেই না। বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। এরপর পাকিস্তানকে প্রথমবারের মত ধবল ধোলাই করে। ৩-০ তে সিরিজে হারায় তারা পাকিস্তানকে। ভারতকে ২-১ ব্যবধানে সিরিজে হারিয়ে দেয়। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকাকেও সিরিজে হারায় বাংলাদেশ। অসাধারণ দিন যাচ্ছিল। ক্রিকেটে উড়ছিল বাংলাদেশ। এমন সময় খানিক ঝড় এসে হাজির হয়। সেই ঝড় ক্রিকেটের মাঠে নয়, মাঠের বাইরে ঘটে। এমন উড়ন্ত অবস্থায় অস্ট্রেলিয়ার মত দলকে পেলে হয়ত বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নিজেদের আরও ভাল করে প্রমাণ করতে পারত। বাংলাদেশে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে আসার কথাও ছিল অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের। কিন্তু শেষমুহূর্তে অসিরা নিরাপত্তার অযুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশ সফর স্থগিত করে। মনে হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত খেলতে আসবে অস্ট্রেলিয়া। আসল না। সেই সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা মহিলা ক্রিকেট দলও খেলতে আসল না। এতে করে বাংলাদেশের ক্রিকেট খানিক ধাক্কাই খেল। তবে তা থেকে উতরাতে বেশি সময় লাগেনি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) অনেক চেষ্টা করেছে। অস্ট্রেলিয়া যেহেতু আসেনি, নিরাপত্তা নিয়ে যে কোন সমস্যা নেই তা বোঝাতে একটি দলকে এ মুহূর্তে বাংলাদেশে খেলানো জরুরী ছিল। বিসিবি সেই চেষ্টা করেছে। তাতে সাফল্যও মিলেছে। জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেট বোর্ডকে সিরিজ খেলার প্রস্তাব দিয়েছে। যেহেতু নবেম্বরে খালি সময় আছে। বাংলাদেশের কোন আন্তর্জাতিক খেলা নেই। তাই এ সময়ে জিম্বাবুইয়েকে নির্ধারিত ওভারের খেলা খেলতে প্রস্তাব দেয় বিসিবি। তাতে জিম্বাবুইয়ে রাজিও হয়। এখন জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেট দল ঢাকাতেও আছে। শনিবারই সিরিজ খেলতে নামবে। আগামী বছর জানুয়ারিতে বাংলাদেশে এমনিতেই সিরিজ খেলতে আসার কথা ছিল জিম্বাবুইয়ের। সেই সময়ে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজ খেলার কথা ছিল। সিরিজ থেকে নির্ধারিত ওভারের ম্যাচগুলো নবেম্বরে খেলতে জিম্বাবুইয়েকে আমন্ত্রণ জানায় বিসিবি। জিম্বাবুইয়ে তাই নির্ধারিত ওভারের সিরিজ এখন খেলবে। টেস্ট খেলবে জানুয়ারিতে। যতদূর বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারিতে টেস্টের সঙ্গে টি২০ সিরিজও যুক্ত থাকতে পারে। কারণ, মার্চেই টি২০ বিশ্বকাপ হবে ভারতে। এরআগে বাংলাদেশে টি২০ ম্যাচ খেলতে পারলে জিম্বাবুইয়েরই সুবিধা হবে। তাই টেস্টের সঙ্গে টি২০ ম্যাচও থাকবে। তবে আপাতত যে সিরিজটি শনিবার শুরু হবে এ নিয়েই ভাবতে রাজি বাংলাদেশ ও জিম্বাবুইয়ে। নিরাপত্তা নিয়ে যে সমস্যার কথা বলা হচ্ছে, তা নিয়ে একেবারেই ভাবনা নেই জিম্বাবুইয়ের। বাংলাদেশে এসেই জিম্বাবুইয়ের অধিনায়ক এলটন চিগুম্বুরা নিরাপত্তা নিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমরা আমাদের কাজটা করতে এসেছি, যেটা হচ্ছে ক্রিকেট খেলা। অন্য ব্যাপারগুলো (নিরাপত্তা ইস্যু) নিয়ে যারা যোগ্য, তারা ব্যাপারটা দেখভাল করবেন এবং নিজেদের কাজটা করে যাবেন। তারাই আমাদের সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন এখানে ক্রিকেট খেলতে আসার।’ অধিনায়কের সুরের সঙ্গে কোচ ডেভ হোয়াটমোরও একমত। বলেছেন, ‘আমরা ক্রিকেট বোর্ডের হয়ে কাজ করি, তাদের প্রশাসনের কথা মেনেই চলতে হবে। তারা নিশ্চয়ই কখনো আমাদের এমন জায়গায় ঠেে দেবে না, যেখানে আমাদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট বোর্ডের লোকজন রাজি হওয়ার পরই আমরা এখানে খুশি মনে এসেছি এবং খেলার অপেক্ষা করছি।’ কোচ হোয়াটমোরের কথাই বেশি গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে। জিম্বাবুইয়ে দল ম্যাচ খেলতে চায়। যেখানে সুযোগ পাবে সেখানে খেলতে চায়। নিরাপত্তা ঝুঁকি না থাকলেই হয়। কিন্তু হোয়াটমোর একজন শ্রীলঙ্কান বংশদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক। তাই তার কথাটিই বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া দল নিরাপত্তার জন্য সফরে আসতে না চাইলেও এক অস্ট্রেলিয়ানই এসেছে। ভালভাবে সিরিজটি শেষ হলে নিরাপত্তা নিয়ে যে ক্রিকেটে কোন সমস্যা নেই, তাই প্রমাণ হবে। তাতে করে বাংলাদেশেরই লাভ হবে। জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেটারদের জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। এ সিরিজটি নিরাপত্তা শঙ্কা দূর করার সিরিজও হয়ে উঠেছে। সিরিজটি শুরু হচ্ছে শনিবার।
×