ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;সাক্ষী গোলাম মোস্তফার জবানবন্দী

নাসির ও সামসুদ্দিনের নেতৃত্বে রাজাকাররা ৮ জনকে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৬ নভেম্বর ২০১৫

নাসির ও সামসুদ্দিনের নেতৃত্বে রাজাকাররা ৮ জনকে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের দুই সহোদর এটিএম নাসির আহম্মেদ ও শামসুদ্দিন আহম্মদসহ ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের তৃতীয় সাক্ষী মোঃ গোলাম মোস্তফা ও চতুর্থ সাক্ষী মোঃ আক্কাস জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দী শেষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী আসামিদের জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য রবিবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আসামি শামসুদ্দিনের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বৃহস্পতিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ শাহীনুর ইসলাম ও বিচারপতি মোঃ সোহরাওয়ার্দী। সাক্ষ্যগ্রহণে সাহায্য করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। পরে আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান সাক্ষীদের জেরা শেষ করেন। প্রসিকিউশনের তৃতীয় সাক্ষী মোঃ গোলাম মোস্তফা জবানবন্দীতে বলেন, আসামি নাসির ও শামসুদ্দিনের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী আক্রমণ চালিয়ে আমার চাচা ও চাচাত দুই ভাইসহ ৮ জনকে হত্যা করেছে। অন্যদিকে চতুর্থ সাক্ষী মোঃ আক্কাস জবানবন্দীতে বলেছেন, নাসির ও শামসুদ্দিনসহ অন্য রাজাকাররা মিলে বিদ্যানগর গ্রামে হত্যাকা- ঘটায়। তৃতীয় সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ গোলাম মোস্তফা। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫৮ বছর। আমার ঠিকানা, গ্রাম-আয়লা, থানা-করিমগঞ্জ, জেলা-কিশোরগঞ্জ। আমি বর্তমানে কৃষি কাজ করি। পাশাপাশি কাঠের ব্যবসাও করি। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ১৩/১৪ বছর। সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেন, একাত্তরে ২০ এপ্রিল আসামি মোঃ আঃ মান্নানের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। ওই রাজাকার বাহিনী অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত করিমগঞ্জ থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় হত্যাযজ্ঞ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, মহিলা ধর্ষণ ইত্যাদি অপরাধ করে। একাত্তরে নবেম্বরের প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধারা করিমগঞ্জ থানা এলাকায় আসে। করিমগঞ্জ থানার আয়লা, বিদ্যানগর, ফতুর গোপ, কিরাটন বিলপাড়া তাদের আশ্রয় স্থল হিসেবে বেছে নেয়। রাজাকাররা আয়লা গ্রামে গিয়ে দুই পাশ থেকে ওই গ্রাম আক্রমণ করে এলোপাতাড়ি গুলি করে। রাজাকাররা আয়লা গ্রাম থেকে চলে গেলে আমি আয়লা গ্রামের মজিদের গুলিবিদ্ধ লাশ দেখতে পাই। সাক্ষী আরও বলেন, একাত্তরে ১৩ নবেম্বর আমি আমার নিজ বাড়িতেই ছিলাম। ওই দিন আমার বাবা মাও বাড়িতে ছিল। দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে আমাদের বাড়ি থেকে আনুমানিক তিন কিলোমিটার দূরে বার ঘুরিয়া গ্রামে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। ঐ সময় আমার পাশের বাড়ির ইউনুস আলী (বর্তমানে মৃত) আমাদের জানায় যে, রাজাকাররা আমাদের গ্রামে চলে এসেছে। তোমরা যে যেখানে পারো পালিয়ে যাও। ওই সময় আমার চাচা মিয়া হোসেন বাড়ির সামনে জমিতে ধান মারাই করছিল। আমি এমন সময় দেখতে পাই যে, আসামি এটিএম নাসির তার হাতে থাকা রাইফেল তাক করে তার সঙ্গে আরও ১০/১২ রাজাকার আমার চাচা মিয়া হোসেনকে তাড়া করে দৌড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমি বিলের মাঝামঝি যাওয়ার পরে একটি গুলির শব্দ শুনতে পাই এবং পরে পুকুরের কোনায় ও বিলের পাড়ে একজনের লাশ গুলি বিদ্ধ লাশ দেখতে পাই। রাজাকাররা চলে যাওয়ার পর পুকুর পাড়ে এসে আমার চাচা মিয়া হোসেনের লাশ দেখতে পাই। অন্যদিকে প্রসিকিউশনের চতুর্থ সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেছেন, আমার নাম মোঃ আক্কাস। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬০ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম-বিদ্যানগর, থানা- করিমগঞ্জ, জেলা-কিশোরগঞ্জ। একাত্তর সালে আমার বয়স ছিল আনুমানিক ১৫/১৬ বছর। তখন আমি কৃষি কাজ করতাম। বর্তমানেও কৃষি কাজ করি। সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেন, একাত্তরে ১৩ নবেম্বর আমি বিলের পাড়ে আমার জমিতে পাট ছাড়ানোর কাজ করছিলাম। সেখান কাজ করার সময় দুপুর একটার সময় আমি দেখতে পাই যে, আসামি এটিএম নাসির ও আসামি শামসুদ্দিন আহম্মেদ মিয়া হোসেনকে দৌড়াইয়া বিলের পাড়ে নিয়ে আসে। তাকে বিলের পাড়ে নিয়ে এসে আসামি এটিএম নাসির আহম্মেদ গুলি করে হত্যা করে। এ ছাড়া একাত্তরে ১২ নবেম্বর আসামি এটিএম নাসির, আসামি শামসুদ্দিন আহম্মেদ, আসামি গাজী মোঃ আঃ মান্নানসহ ২০/২৫ রাজাকার বিদ্যানগর গ্রামে গিয়ে ৭/৮ জনকে হত্যা করে।
×