ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৬ নভেম্বর ২০১৫

দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচন

দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধা দূর হলো। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলর এই তিন পদেই দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ পাচ্ছেন প্রার্থীরা। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে এবার সরাসরি রাজনীতির রং লাগছে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতীক এবার এই নির্বাচনেও ব্যবহৃত হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের মতো রাজনৈতিক দলগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও প্রার্থী দেবে। সোমবার এই সংক্রান্ত বিধান রেখে স্থানীয় সরকার পৌরসভা আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এতদিন স্থানীয় সরকার নির্বাচন অরাজনৈতিক পরিচিতি থাকলেও প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত কখনই ছিল না। প্রতীক ছাড়া নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গেই রাজনৈতিক দলগুলো সরাসরি যুক্ত থাকত। অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দিলেও প্রচারকার্য চালানো হতো দলীয় পরিচয়েই। এমনকি গণমাধ্যমে নির্বাচনের ফল ঘোষণার সময়ও প্রার্থীদের দলীয় পরিচয় তুলে ধরা হতো। এতে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন ও জনপ্রতিনিধিদের বিষয়ে জনগণের রায় এবং তাদের আশা-আকাক্সক্ষা পূর্ণ হওয়ার পথ আরও সুগম হবে আশা করা যায়। ডিসেম্বর মাসের শেষ নাগাদ পৌরসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় ওই সময়ে দেশে প্রায় আড়াই শ’ পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন বলেছে, পৌরসভা নির্বাচনে কেবল কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোই তাদের দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পাবে। এর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনের অংশগ্রহণের সুযোগ খসড়া বিধিমালায় রাখা হয়েছে। পৌরসভা নির্বাচনের আগে নতুন কোন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দেয়ার সুযোগ থাকছে না। অনেকে মনে করেন নতুন অধ্যাদেশ জারি করায় এখন থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে অতীতে যে সমস্যার সৃষ্টি হতো এখন তা হওয়ার সুযোগ কমে আসবে। এতে দলীয় সমর্থক, কর্মীসহ সাধারণ মানুষের ভেতরও এক ধরনের উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাবে। নতুন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিও নিজের ও দলের ভাবমূর্তি অক্ষুণœ রাখাসহ জনপ্রত্যাশা পূরণে সুযোগ পাবেন। এ কথা সত্য যে, সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচী বাস্তবায়নের দায়িত্ব থাকে স্থানীয় সরকারের ওপর। স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের রাজনৈতিক পরিচয় থাকলে তাদের কাজে বাধা কম আসবে। কাজে গতি বাড়বে। বিধানে স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হতে হলে মেয়র প্রার্থীর জন্য ৪শ’ ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর জন্য ৫০ জনের সমর্থনের কথা বলা হয়েছে। প্রতি পৌরসভায় দলের ব্যয় সীমা ১ লাখ টাকা নির্ধারণ করে খসড়া বিধিমালা প্রণয়ন করেছে নির্বাচন কমিশন। স্থানীয় পর্যায়ে গণতন্ত্রচর্চা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে স্থানীয় নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দল ও জনপ্রতিনিধিরা দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার দাবি জানিয়ে আসছেন। বিশ্বের অনেক দেশেই দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে স্থানীয় নির্বাচন গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখবে। তৃণমূল পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলো উন্নয়ন কাজে অংশ নিতে পারবে। দলীয়ভাবে নির্বাচন হলে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নজরদারির আওতায় রাখা সহজ হবে। তবে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে কমবেশি সহিংসতা হয়ে থাকে। নির্বাচন যাতে সহিংসতামুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়, সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনও সব বিতর্কের উর্ধে উঠে স্বাধীন ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন পরিচালনা করবে, এই প্রত্যাশা সবার।
×