ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত-দক্ষিণআফ্রিকা প্রথম টেস্ট শুরু আজ

স্পিন বনাম পেসের লড়াই

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৫ নভেম্বর ২০১৫

স্পিন বনাম পেসের লড়াই

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাইরের দলগুলো উপমহাদেশে এলে সবার আগে আলোচনায় উঠে আসে ‘পিচ’। শক্তিধর পেস আক্রমণও এখানে খাবি খায়। অতীত ইতিহাস তাই বলে। অথচ ভারতকে পেস দিয়েই কাবু করার ফন্দি প্রোটিয়াদের, যেখানে অগ্রভাগে ডেল স্টেইন। টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর পেসার নিজেই হুঙ্কার ছুড়েছেন। বলেছেন, পিচ কন্ডিশন যাই হোক স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছাড়খার করতে প্রস্তুত তিনি! অন্যদিকে বরাবর স্পিনে দুর্বল প্রোটিয়ায়দের ‘বশ’ করতে স্পিন প্রাধান্য দিয়েই দল সাজাবে ভারত। কোচ রবি শাস্ত্রী পরিষ্কার বলেছেন, প্রয়োজনে চার স্পিনার নিয়ে মাঠে নামবে তার দল! জমবে লড়াই ভারতীয় ‘স্পিন’ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকান ‘পেস’ আক্রমণে। মোহালিতে চার ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় শুরু হবে। ভারতীয় দলের মেন্টর কাম-অন্তর্বর্তী কোচ শাস্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর প্রত্যেক দেশই এখন নিজেদের মতো উইকেট বানায়। তাহলে আমরা সেটি করব না কেন? মুম্বাইর ঘটনাটি মিডিয়ার অপপ্রচার। টেস্ট ম্যাচে সফল হতে হলে প্রতিপক্ষ, কন্ডিশন সবকিছু মাথায় রাখতে হয়। আশা করছি মোহালির পিচ স্পিন সহায়ক হবে, তাহলে আমরা এখানে চার স্পিনার নিয়েও খেলতে পারি! ওয়েস্ট ইন্ডিজ যদি এক সময় চার পেসার নিয়ে সফল হয়, তবে আমরা কেন চার স্পিনার নিয়ে নামতে পারব না।’ শুধু বোলিং নিয়ে আলোচনা, ক্রিকেট কি কেবলই বোলারদের খেলা? ব্যাটসম্যানরা কী আঙুল চুষবেন? ওয়াসিম আকরামের একটি মন্তব্য হতে পারে এর মোক্ষম উত্তর। সাবেক পাকিস্তান গ্রেট জোর গলায় বলেন, ‘টেস্ট জিততে হলে আপনাকে প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট তুলে নিতে হবে, সেই কাজটা বোলারদের। ব্যাটসম্যানরা ভাল করলে বড়জোড় ড্র উপহার দিতে পারে। সুতরাং টেস্টে বোলারদের ভূমিকাটাই প্রধান।’ খাঁটি কথা। কিন্তু দীর্ঘ সফরে প্রোটিয়ারা যে ভারতীয় কন্ডিশনের সঙ্গে ভালভাবেই মানিয়ে নিয়েছে, ইতোমধ্যে সেটি তারা প্রমাণও করেছে। প্রথমে তিন ম্যাচের টি২০ ২-০তে, এরপর পাঁচ ওয়ানডের সিরিজে জয় ৩-২ ব্যবধানে। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিজেদের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ওয়ানডে ও টি২০তে হারে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। যদিও টেস্টের নেতা ‘ক্রেজি’ কোহলি। আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের পসরা সাজাতে যার জুড়ি নাই। ক’দিন আগে শ্রীলঙ্কা থেকে সিরিজ জিতে ফিরেছেন তিনি। তবে শ্রীলঙ্কা আর দক্ষিণ আফ্রিকা এক নয়। তার ওপর ঘরের মাটিতে দীর্ঘ আড়াই বছর পর টেস্ট খেলতে নামছে ভারত। সব মিলিয়ে কোহলির জন্য চ্যালেঞ্জটা বড়। আক্রমণাত্মক মনোভাব উল্টো না বুমেরাং হয়ে দাঁড়ায়! কারণ হাশিম আমলার নেতৃত্বে প্রোটিয়ারা ভাল করেই পাল্টা দিতে সক্ষম। স্থানীয় ক্রিকেট বিশ্লেষকদের ভয়টা এখানেই। শাস্ত্রী তাদের সঙ্গে একমত নন। টিম ইন্ডিয়ার বস আরও যোগ করেন, ‘ও নতুন। বিরাটের নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলার সময় এখনও আসেনি। ওকে সময় দিতে হবে। যত বেশি ভিন্ন কন্ডিশনে খেলবে তত বেশি পরিণত হবে।’ সিরিজটিকে ২০১১ ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, ‘ধৈর্য ধরুণ এবং দেখুন, চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজে অনেক চমক অপেক্ষা করছে!’ কি সেই চমক- র‌্যাঙ্কিং? বর্তমানে এক নম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারত পাঁচ নম্বরে থাকলেও মাঝে রেটিংয়ের ব্যবধান খুবই কম। তাই যেকোন ব্যবধানে সিরিজ জিতলে পাকিস্তান, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসবে ভারত। শাস্ত্রীর স্বপ্নের পালে হাওয়া দিচ্ছে স্পিন-আক্রমণ। ইনজুরি কাটিয়ে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে আজ মাঠে নামছেন দলটির ‘নাম্বার ওয়ান’ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। সঙ্গে পাবেন অমিত মিশ্র আর রবিন্দ্র জাদেজাকে। তাহলে স্টেইন যে হুঙ্কার ছুড়লেন সেটির কী হবে? সেøা-উইকেটে তিনি কি আদৌ পারবেন- থাকছে সেই প্রশ্নও, ‘একজন ভালমানের পেসার হাওয়ার (বাতাসে) মধ্যেই বোলিংয়ের জাদুটা দেখান। উইকেট কেমন, তা বুঝে আমার লাভ কী?’ বলেন স্টেইন। তরুণ কাগিসো রাবাদা, পরীক্ষিত মরনে মরকেল, ভারনন ফিল্যান্ডারকে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার পেস আক্রমণ আসলেই ‘ভয়ঙ্কর’। টি২০-ওয়ানডে সিরিজেও সেটি দেখা গেছে। ১৯৯২ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ২৯ টেস্টে মুখোমখি হয়ে ১৩ জয়ে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতের সাফল্য ৭। ৯ টেস্ট ড্র হয়। ১০ সিরিজের ৫টিতে জয় প্রোটিয়াদের, ভারতের ২। ১৯৯৯-এ ভারতের মাটিতে ২-০তে সিরিজ জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখানে সর্বশেষ ২০০৯ সালের দুটি ম্যাচ ১-১এ অমীমাংসিত। আর ২০১৩-এর ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে ২ টেস্টের সিরিজ ১-০তে হারে ভারত। ওই সফরেই দু-দল শেষবারের মতো টেস্ট খেলে। যেখানে ১০ উইকেটের বিশাল জয়ের স্মৃতি প্রোটিয়াদের উজ্জীবিত করবে।’
×