ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কাঠমান্ডুর অভিযোগ অস্বীকার নয়াদিল্লীর

ভারত নেপালে ইউনিফর্মবিহীন সৈন্য পাঠিয়েছে

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ৪ নভেম্বর ২০১৫

ভারত নেপালে ইউনিফর্মবিহীন সৈন্য পাঠিয়েছে

ভারত নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য নেপালে ইউনিফর্মবিহীন সৈন্যদের পাঠিয়েছে। নেপালের দফতরবিহীন মন্ত্রী সত্য নারায়ণ ম-ল সোমবার এই অভিযোগ করেছেন। এই অভিযোগ নিয়ে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। ভারত নেপালের এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। এর আগে নেপালী পুলিশের গুলিতে সীমান্ত এলাকায় এক ভারতীয় নাগরিক নিহত হলে দু’দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। খবর হিমালয়ান টাইমস ও বিবিসি অনলাইনের। কাঠমান্ডুতে ভারতের দূতাবাস জানিয়েছে, নেপালের দফতরবিহীন মন্ত্রী সত্য নারায়ণ ম-লের একটি মন্তব্যের প্রতি ভারতের মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছে। সোমবার বিরাটনগরে সংবাদ সম্মেলনকালে ম-ল বলেন, ভারত নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য ইউনিফর্মবিহীন সৈন্যদের নেপালে পাঠিয়েছে। মঙ্গলবার ভারতের দূতাবাস থেকে দেয়া বিবৃতিতে একে উস্কানি, ভিত্তিহীন ও অসদুদ্দেশ্যপূর্ণ বলে মন্তব্য করা হয়। এর আগে সোমবার নেপালে সে দেশের পুলিশের গুলিতে এক ভারতীয় প্রতিবাদকারীর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। ভারতের দূতাবাস থেকে দেয়া ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মন্ত্রীর পদমর্যাদায় আসীন এক ব্যক্তির কাছ থেকে এ রকম মন্তব্য আসাটা খুবই দুঃখজনক। এটি দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। দূতাবাস কড়া ভাষায় এর নিন্দা জানিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার স্বার্থে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে আরও সংযত আচরণ প্রত্যাশা করা হয়। এতে আরও বলা হয়, ভারত নেপালের জনগণের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নতি কামনা করে এবং এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য নেপালের সরকার ও জনগণের প্রতি ভারতের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। এর আগে নেপালের পুলিশ সোমবার গুলি করে সীমান্ত এলাকায় একজন ভারতীয় নাগরিককে হত্যা করে। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে শত শত মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে পুলিশ গুলি চালালে ওই ভারতীয় নিহত হন। জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী আমদানির জন্য সীমান্তের ওই পথটি খোলা রাখা প্রয়োজন। নেপাল-ভারত সীমান্তের বীরগঞ্জ পোস্টে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে পুলিশ রাস্তার ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেয়ার চেষ্টা করছিল। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের ওপর হামলা চালালে পুলিশ পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় এক বিক্ষোভকারীর মাথায় গুলি লাগলে হাসপাতালে তিনি মারা যান। নিহত ওই ব্যক্তির নাম আশীষ কুমার রাম। তার বাড়ি ভারতের বিহার রাজ্যে বলে জানা গেছে। বিক্ষোভকারীদের অধিকাংশই ছিল নেপালের দক্ষিণাঞ্চলীয় নিম্নভূমিতে বসবাসরত একটি জাতিগত সংখ্যালঘু মদেশীয় সম্প্রদায়ের লোকজন। তারা নতুন সংবিধানের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছিল। আগস্টে নেপালে নতুন সংবিধান প্রণীত হয়েছিল। তাদের আশঙ্কা, এই সংবিধান অধিকার হরণ করে তাদের আরও দুর্বল করে তুলবে। স্থানীয় পুলিশের প্রধান রাজবাবু শ্রেষ্ঠা বিবিসিকে বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা ভারত থেকে সীমান্ত পার হয়ে নেপালে ঢুকেছিল। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়েছে। সংঘর্ষে সাতজন বিক্ষোভকারী ও নয়জন পুলিশ আহত হয়েছে। নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লাখমি ঢাকাল জানিয়েছেন, পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়ানোর চেষ্টা করলে দুই বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মঙ্গলবার দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘নেপালের বর্তমান সঙ্কটটি রাজনৈতিক, শক্তি প্রয়োগ করে এর সমাধান সম্ভব নয়। পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেয়া হবে তার ওপর নেপাল সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা ও দক্ষতা নির্ভর করছে।’ এর আগে সংঘাত সম্পর্কে বিভিন্ন রকম খবর পাওয়া যায়। একটি খবরে বলা হয়েছিল পুলিশ শক্তি প্রয়োগ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আরেকটি খবরে বলা হয় পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। আরেক খবরে বলা হয় পুলিশ জোর করে ঘুমন্ত প্রতিবাদকারীদের তুলে নিয়ে ট্রাকে করে ভারত পাঠিয়ে দিয়েছে। এদিকে পৃথক এক খবরে বলা হয়েছে ভারতের শুল্ক কর্মকর্তাদের আরোপিত অবরোধের জন্য দু’মাস ধরে ভারত থেকে জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীবাহী ট্রাকবহর নেপালে ঢুকতে পারছে না।
×