ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কারখানায় অভিযান

মি. বেকারের কেকও ভেজালমুক্ত নয়, জরিমানা

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৪ নভেম্বর ২০১৫

মি. বেকারের কেকও ভেজালমুক্ত নয়, জরিমানা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আপনি পনেরো হাজার টাকা খরচ করে অভিজাত শোরুম থেকে সেরা ব্র্যান্ড মি. বেকারের একটি কেক কিনলেন বাচ্চার জন্মদিনে। বাসায় সেই কেক দেখে যারা খুশি হতেন, তাদের এখন মাথায় হাত। কারণ বাজারের সেরা দাবিদার এই কেকের মাঝেও ধরা পড়েছে অবিশ্বাস্য রকমের ভেজাল। র‌্যাবের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত মঙ্গলবার যখন বেকারের কারখানায় অভিযান চালায়, তখন তাদের কাছেও বিস্ময় ঠেকেছে। তাহলে বাজারে ভাল থাকল কী- এমন কৌতূহলী প্রশ্ন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের। বলেছেন, এতদিন তাহলে এমন ভেজাল কেক বিক্রি করা হয়েছে দেদার? রাজধানীর ওপাশে টঙ্গী শিল্প এলাকায় আনারকলি সিনেমা হলসংলগ্ন মি. বেকারের প্রধান কারখানায় র‌্যাব পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান দেখার জন্য কৌতূহলী মানুষের কমতি ছিল না। যারাই অভিযানের সারমর্ম নিজের কানে শুনেছে, চোখে দেখেছে- তারাই বিস্ময় প্রকাশ করেছে। বলেছে, এত সুনাম যাদের তাদের কেকের অবস্থাই যদি এই হয়- তাহলে সাধারণ কেকের গুণগতমান আর কত ভাল হবে? এ কারখানার কেকে কতটা ভেজাল, কতটা দূষিত? নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম সারওয়ার জানালেন, এখানে প্রধানত তিনটি বিষয়ে বড় ধরনের ভেজাল বা দূষণের প্রমাণ মিলেছে। প্রথমত মেয়াদোত্তীর্ণ রং ব্যবহার করা, দ্বিতীয়ত বাজার থেকে ফেরত আসা পুরানো পচা-বাসি কেক ভেঙ্গে নতুনের সঙ্গে মেশানো ও তৃতীয়ত এখানকার নোংরা ও ময়লা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা। অভিযানের সময় র‌্যাব দেখতে পায়, ওই কারখানায় তৈরি জন্মদিনের কেকে যে রং ব্যবহার করা হয় সেগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ। ৫১টি বোতলের রং পরীক্ষা করে দেখা যায়, এগুলোর মেয়াদ চলে যাওয়ার পর ঘষামাজা করে নতুন করে লেখা হয়েছে মেয়াদের তারিখ। এ রং কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বা কান্ট্রি অব অরিজিন উল্লেখ নেই। মেয়াদোত্তীর্ণ এমন রং দিয়েই তৈরি করা হচ্ছে জন্মদিনের বিশালাকারের দামী কেকগুলো, যা বাজারে পাঁচ থেকে পনেরো হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। বাজারে পাঠানোর পর অবিক্রীত কেকগুলো ফিরিয়ে আনা হয় এই কারখানায়। সংবিধি-বিধান হচ্ছে- বাজার থেকে ফেরত আসা বাসি কেক ধ্বংস করে দেয়া। কিন্তু এখানে ওই বাসি কেকগুলো ভেঙ্গে সেগুলো দিয়ে নতুন কেক তৈরি করে নতুন মেয়াদ দিয়ে ফের পাঠানো হচ্ছে বাজারে, যা বাজারের কোন ক্রেতার পক্ষে ধরা সম্ভব নয়। শতাধিক জনবলের এই কারখানার অভ্যন্তরীণ পরিবেশ এতই নোংরা ও ময়লাযুক্ত যে, সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কষ্টকর। যে পাত্রে কেকের ময়দা গোলানো হয় সেটাতে ময়লার স্তর জমেছে প্রায় এক ইঞ্চি পুরু। বছরের পর বছর ধরে ব্যবহৃত এই পাত্র কখনই পরিষ্কার করা হয় না। এখানে যারা কাজ করছে তাদের হাতের বড় বড় নখের ভেতরেও ময়লার স্তূপ দূর থেকে দেখা যায়। তাদের পরনের জামাকাপড়েও ময়লার কমতি ছিল না। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম সারওয়ার বলেন, সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে এ কারখানায় নেই কোন পানি শোধনাগার। সরাসরি ওয়াসার পাইপ দিয়ে আনা কাঁচা পানি দিয়ে তৈরি করা হয় কেক, যা খেলে শিশু থেকে বৃদ্ধ যে কোন বয়সের ভোক্তারই পেটের পীড়া নিশ্চিত। নিয়ম হচ্ছে শোধানাগারে পানি ফুটিয়ে সেটা দিয়ে কেক তৈরি করা। কেন এ ধরনের ভেজাল ও অনিয়ম করেছেন- এমন প্রশ্ন রাখেন ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। কোন সদুত্তর দিতে পারেননি কারখানার ম্যানেজার ইফতেখার। শুধু করজোড়ে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন- স্যার, ভুল হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে আর এমন হবে না। কারখানার উপস্থিত কর্মকর্তারা নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় ম্যাজিস্ট্রেট তাৎক্ষণিক ৬ লাখ টাকা জরিমানা করেন। একই সঙ্গে কতগুলো বিধিনিষেধ আরোপ করেন। বিএসটিআই প্রণীত বিধি মোতাবেকে যা যা করণীয় তা আগামীতে পূরণ করার জন্য দুই সপ্তাহ সময় দেয়া হয়।
×