স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুষ্টি চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল চালের ওপর। দেশের মানুষের খাদ্যশক্তির (ক্যালরি) ৭১ শতাংশ এককভাবে পূরণ করে চাল। গত দুই দশকে পুষ্টিমানসমৃদ্ধ অন্যান্য খাদ্যশস্য, ফলমূল, সবজির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চালের ওপর দরিদ্র মানুষের নির্ভরশীলতা বেড়েছে। এর ফলে সার্বিকভাবে দেশের পুষ্টিচিত্রের কাক্সিক্ষত উন্নতি হয়নি। তবে বৈশ্বিক পুষ্টিমান অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঠিক পথেই এগোচ্ছে। এক্ষেত্রে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় (শ্রীলঙ্কা প্রথম)। বৈশ্বিক পুষ্টি প্রতিবেদনের আটটি সূচকের মধ্যে দুটিতে বাংলাদেশের অগ্রগতি সন্তোষজনক। বাকি ছয়টি সূচকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এখনও অনেক পেছনে রয়ে গেছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর কাওয়ানবাজারের একটি হোটেলে ‘গ্লোবাল নিউট্রিশন রিপোর্ট : ২০১৫’ প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। একদল স্বাধীন বিশেষজ্ঞ জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের সার্বিক পুষ্টিচিত্রের ওপর এ গবেষণাটি করেছেন। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের খর্বাকৃতি, উচ্চতার তুলনায় কম ওজন, ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের রক্তশূন্যতা, শিশুদের নিবিড় স্তন্যপান, মাত্রাতিরিক্ত ওজন, স্থূলতা এবং ডায়বেটিসÑ এই আটটি সূচককে গবেষণার ভিত্তি ধরা হয়েছে। গবেষণায় অর্থায়ন করেছে একাধিক দেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থা। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শিশুদের খর্বাকৃতির হার কমানোর বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জনে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ দ্রুত এগোচ্ছে। দেশে শিশুদের খর্বাকৃতির হার ৩৬ শতাংশ। ভারতে এই হার ৩৯ শতাংশ। উচ্চতার তুলনায় কম ওজনের শিশুর সংখ্যাও কমছে। ২০১১ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৯ শতাংশে। তবে প্রজননক্ষম নারীর রক্তশূন্যতা (৪৪ শতাংশ) ও স্থূলতার (২৬ শতাংশ) হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেনি। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শিশুদের নিবিড় স্তন্যপানের হার বর্তমানে ৫০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এক্ষেত্রে কয়েক বছর আগে অর্জিত সাফল্যের অবনমন ঘটেছে। প্রশিক্ষিত নার্স ও মিডওয়াইফের অভাব, কম বয়সে গর্ভধারণসহ বিভিন্ন কারণে নারীদের মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা বিঘিœত হচ্ছে। তবে স্থূলতার ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যাই বেশি বলে জানানো হয়।
আয়োজক ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইফপ্রি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও গবেষক দলের কো-চেয়ার ড. লরেন্স হাদাদ বলেন, সারাবিশ্বের পুষ্টি পরিস্থিতি সার্বিকভাবে হতাশাজনক। পুষ্টির ধারণা বহুমাত্রিক ও বাস্তবায়ন জটিল হওয়ায় কোন দেশই কাক্সিক্ষত পুষ্টিমান অর্জন করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে স্থূলতার হার ৬৬ শতাংশ। তাই পুষ্টিহীনতা কেবল উন্নয়নশীল দেশের একার সমস্যা নয়। পুষ্টিসূচকে আফ্রিকা মহাদেশ উন্নতি করছে। কেনিয়া, ঘানা, উগান্ডার মতো দেশগুলো খর্বাকৃতি, স্থূলতা, মাত্রাতিরিক্ত ওজনহার কমানোর ক্ষেত্রে সাফল্য দেখাচ্ছে। এজন্য সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পুষ্টিকে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বের প্রতি তিনজন মানুষের একজন অপুষ্টিতে ভুগছেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেনÑ ইফপ্রির চীফ অব পার্টি ড. আকতার আহমেদ, কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট শফিকুল করিম প্রমুখ।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: