ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি

দলীয় ভিত্তিতে পৌরসভা নির্বাচনের বাধা দূর হলো

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ৪ নভেম্বর ২০১৫

দলীয় ভিত্তিতে পৌরসভা নির্বাচনের বাধা দূর হলো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দলীয় ভিত্তিতে পৌরসভা নির্বাচনের আর কোন বাধা নেই। সোমবার এ সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি হওয়ায় সব বাধা দূর হয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে অধ্যাদেশ পাওয়ার আগেই পৌরসভা নির্বাচনের প্রার্থীদের আচরণ বিধিমালা এবং নির্বাচন বিধিমালার খসড়া তৈরি ছিল। এখন এটি দ্রুত চূড়ান্ত করে পৌরসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া হবে। আগামী ডিসেম্বেরের শেষ নাগাদ পৌরসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। তবে অধ্যাদেশ জারি হওয়ায় জাতীয় সংসদের মতোই দলের মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থী হবেন প্রতিদ্বন্দ্বিরা। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, পৌরসভা নির্বাচনে শুধুমাত্র কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোই তাদের দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পাবে। এর বাইরের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনের অংশগ্রহণের সুযোগ খসড়া বিধিমালায় রাখা হয়েছে। সিইসি এর আগে জানান, ডিসেম্বরের পৌরসভা নির্বাচনের আগে নতুন কোন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দেয়ার সুযোগ নেই। ফলে যেসব সংগঠন ইসিতে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে তারা এ নির্বাচনে দলীয়ভাবে নির্বাচনের সুযোগ পাবে না। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ দেশে প্রায় আড়াই শ’ পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। আইন অনুযায়ী এসব পৌরসভার নির্বাচন পেছানোর কোন সুযোগ ছিল না। কিন্তু সরকারী সিদ্ধান্তের পর এতদিনে অধ্যাদেশ না দেয়ায় এ নির্বাচন নিয়ে কিছুটা দ্বিধদ্বন্দে ছিল ইসি। তবে সোমবার রাতে অধ্যাদেশ জারি হওয়ায় সব বাধা দূর হয়েছে। এখন দলীয় প্রতীকে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের জন্য কাজ শুরু করেছে। মঙ্গলবার দুপুরের নির্বাচন কমিশন সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ডিসেম্বর সারাদেশের সব পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, দলীয় প্রতীকে পৌরসভা নির্বাচন করার অধ্যাদেশের গেজেট আমরা পেয়েছি। অধ্যাদেশ পাওয়ার আগেই প্রার্থীদের আচরণ বিধিমালা এবং নির্বাচন বিধিমালার একটা খসড়া করে রাখা হয়েছিল। খুব দ্রুতই এটি চূড়ান্ত করা হবে। কমিশন সচিব আরও উল্লেখ করেন, মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলর এই তিন পদেই দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে করে ব্যালটের আকার অনেক বড় হয়ে যাবে। এর ফলে ব্যালট ভাঁজ করা, সীল মারাসহ পুরো প্রক্রিয়াটাই কঠিন হয়ে যাবে। যে কারণে সরকারী প্রেসগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নির্বাচন এক দফায় হবে, নাকি কয়েক দফায় নেয়া হবে তা আলোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন। সোমবার জারিকৃত অধ্যাদেশে বিদ্যমান আইনের ২নং ধারায় নতুন দফায় সংসদ নির্বাচনের মতো গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়ে সংজ্ঞা যুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ২০নং ধারায় পৌরসভায় মেয়র ও কাউন্সিলর পদে রাজনৈতিক দল মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিধানটি যুক্ত হয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অধ্যাদেশ নিয়ে পরবর্তী বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে কমিশন সভা আহ্বান করা হবে। এতে বিধিমালা চূড়ান্ত ও ভোটের তারিখ নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে। নির্বাচন কমিশন এ অধ্যাদেশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালা চূড়ান্ত করবে। ইসি সচিব জানান, কমিশনের প্রস্তুতি রয়েছে। এখন দ্রুততার সঙ্গে বিধিমালা চূড়ান্ত করে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সরকারের অনুমোদন পেলেই ইসি তা গেজেট আকারে প্রকাশ করবে। নতুন সংশোধিত বিধিমালার আলোকে দলভিত্তিক পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করেন তিনি। উল্লেখ্য গত ১২ অক্টোবর মন্ত্রী পরিষেদের এক বৈঠকে দেশের সব স্থানীয় পরিষদ নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এ প্রস্তাব অনুমোদনের পর সিটি কর্পোরেশন থেকে শুরু করে। পৌরসভা, উপজেলা জেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে করতে হবে। সরকারী এ সিদ্ধান্তের ফলে নতুন এসব স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইনের আওতায় ৩২৩টি পৌরসভা, ৪ হাজার ৫৫৩টি ইউনিয়ন পরিষদ, ৪৮৮টি উপজেলা, ১১টি সিটি কর্পোরেশন এবং ৬৪টি জেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হবে। সরকারের সংশোধনী অনুযায়ী, পাঁচ বছরের নির্দিষ্ট মেয়াদ পূরণের পর কোন কারণে নির্বাচন না হলে প্রশাসকের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বিশ্বের অনেক দেশেই দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়ে থাকে। দেশে এ পদ্ধতিতে স্থানীয় নির্বাচন গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখবে। তাদের মতে, দেশে অনেক দিন ধরেই নির্দলীয় ব্যানারে দলীয় ছায়ায় পরিচালিত হয়ে আসছে স্থানীয় নির্বাচন। সরাসরি দলীয় ভিত্ততে স্থানীয় নির্বাচনের সরকারী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এখন আইনগত ভিত্তি লাভ করেছে মাত্র। বাকি সবকিছুই দলীয়ভাবে পরিচালিত হয়ে এসেছে এতদিনে। আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারত পাকিস্তানসহ বিশ্বের অনেক দেশে এ ধরনের ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
×