ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাঠদান করছেন পিয়ন

১০ বছর শিক্ষক নেই চাঁপাই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্কুলে

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ৩ নভেম্বর ২০১৫

১০ বছর শিক্ষক নেই চাঁপাই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্কুলে

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ সময়কাল টানা দশ বছর। একটি সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকবিহীন চলে আসছে। এই দীর্ঘ সময়ে দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত রয়েছেন একজন পিয়ন। পিয়ন হয়েও দশ বছর ধরে শিক্ষকের হাল ধরে শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন। এমন অবিশ্বাস্য কাহিনীর জন্ম দিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্কুলটি। বর্তমানে সঙ্কট আরও তীব্র হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির এই খুঁড়িয়ে চলা অবস্থা থেকে উত্তরণে এখন পর্যন্ত কেউ এগিয়ে আসেনি। শিক্ষার্থীরা শিক্ষক সঙ্কটের কারণে স্কুল ছেড়েছে। ২০০৫ সালে অবসরে যাওয়া একজন শিক্ষকের পর আর নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। বর্তমানে ১ম শ্রেণী থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ছয় জন। অথচও এক সময়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অর্ধশতাধিক ছিল। তারা প্রাথমিক শিক্ষা পেরিয়ে মাধ্যমিকেও পড়াশোনা করেছে। কিন্তু শিক্ষকবিহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব প্রতিবন্ধীর পড়ানোর এখন কেউ না থাকায় বাধ্য হয়ে প্রতিষ্ঠান ছেড়ে গেছে তারা। পিয়ন হিসেবে নিয়োগ পাওয়া রবিউল আওয়াল বিলাপের সুরে বলছেন বাধ্য হয়ে যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তাকে নিয়মিত সকাল আটটা বাজলেই স্কুলে এসে ক্লাসে যেতে হয়। মুখ থুবড়ে পড়া শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে বার বার সমাজকল্যাণ বিভাগের কাছে দেন-দরবার করেও শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার কোন উদ্যোগ নেই। ১৯৭৫ সালে কামাল উদ্দীন বালিকা বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হলেও তা সীমাবদ্ধ ছিল এক রুমের মধ্যে। ২০০৫ সাল পর্যন্ত থাকা একজন শিক্ষক একটি মাত্র রুমে পাঁচটি ক্লাস নিয়ে থাকত। নানা সমস্যা ও শিক্ষক না থাকার কারণেই শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমতে কমতে ছয়জনে নেমে এসেছে। এদের মধ্যে তিনজন প্রথম শ্রেণী ও দুই জন দ্বিতীয় শ্রেণীর এবং একজন তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী রয়েছে। ব্রেল নামের বিশেষ পদ্ধতি প্রয়োগে পাঠদান করা হলেও শিক্ষকের অভাবসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা না থাকায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা এই স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে এখন একেবারে নামকা ওয়াস্তে নামসর্বস্ব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি চালু রেখেছে সমাজকল্যাণ বিভাগ। অনুমান করা হচ্ছে কর্মরত পিয়ন রবিউল অবসরে না যাওয়া পর্যন্ত কাগজে-কলমে প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা হবে।
×