ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেপ্টেম্বর শেষে স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৮২ শতাংশ

স্প্রেড নির্দেশনা মানেনি ২১ ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২ নভেম্বর ২০১৫

স্প্রেড নির্দেশনা মানেনি ২১ ব্যাংক

রহিম শেখ ॥ ব্যাংকের আমানত ও ঋণের সুদহারের ব্যবধান বা স্প্রেড ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের নিচে থাকলেও ২১টি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মানেনি। সেপ্টেম্বর শেষে ৬টি বিদেশী ও ১৫টি বেসরকারী ব্যাংকের স্প্রেড ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপরে রয়েছে। সবচেয়ে বেশি স্প্রেড রয়েছে বিদেশী খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের। ব্যাংকটির স্প্রেড ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ। এরপরে রয়েছে বেসরকারী খাতের ব্র্যাক ব্যাংকের। ব্যাংকটির স্প্রেড ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত স্প্রেডসংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের দীর্ঘদিনের দাবি ব্যাংক ঋণের সুদহার ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা। সুদহারের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও ব্যাংকগুলোকে সুদহার কমিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়ে আসছে। গত কয়েক মাস ধরে আমানত ও ঋণ উভয় ক্ষেত্রে সুদ হার কমছে। আগস্ট মাসে স্প্রেড কমে আসে ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। তবে সেপ্টম্বর শেষে একটু বেড়ে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৮২ শতাংশ। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রদর্শিত তথ্যের মধ্যে ২০১৩ সালে পরে সর্বনিম্ন। এর আগে স্প্রেড ৫ শতাংশের নিচে ছিল ২০১৩ সালের এপ্রিলে ৪ দশমিক ৯৯, মে ৪ দশমিক ৯৮ এবং ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশীয় পয়েন্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ঋণের সুদহার যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ এবং স্প্রেড ৪ শতাংশের কাছাকাছি নামিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। বর্তমানে বিচার বিবেচনাপূর্বক প্রকৃত ঋণগ্রহীতা নির্বাচন করে ঋণ সম্প্রসারণের মতো পর্যাপ্ত তারল্যও ব্যাংকগুলোর হাতে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ঋণের ক্ষেত্রে ১০ দশমিক ১৯ শতাংশ হারে সুদ আদায় করেছে। আমানতের বিপরীতে দিয়েছে ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ সুদ। স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশীয় পয়েন্ট। বিশেষায়িত ব্যাংকের স্প্রেড সবচেয়ে কম মাত্র ২ দশমিক ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট। আমানতের বিপরীতে দিয়েছে ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ সুদ। এই খাতের ব্যাংকগুলোর ঋণের ক্ষেত্রে ভারিত গড় সুদহার ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। বেসরকারী খাতের ১৫ ব্যাংকের স্প্রেড ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপরে অবস্থান করছে। গত সেপ্টম্বর মাসে বেসরকারী ব্যাংকগুলো ঋণের ক্ষেত্রে ১১ দশমিক ৯৫ শতাংশ হারে সুদ আদায় করেছে। আমানতের বিপরীতে দিয়েছে ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ সুদ। স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ০৬ শতাংশীয় পয়েন্ট। বিদেশী ব্যাংকগুলোর স্প্রেড এখনও ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপরে রয়েছে। বিদেশী ব্যাংকগুলো আমানতের বিপরীতে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ সুদ দিয়ে ঋণের বিপরীত আদায় করছে ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ সুদ। এ খাতের ব্যাংকগুলোর স্প্রেড সবচেয়ে বেশি ৭ দশমিক ৬ শতাংশীয় পয়েন্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঋণের সুদের হার কমানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মানছে না ২১টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এর মধ্যে ১৫টিই বেসরকারী ও ৬টি বিদেশী ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণের সুদের হার কমাতে ঋণ ও আমানতের সুদের হারের ব্যবধান (স্প্রেড) ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার নির্দেশ রয়েছে। যেসব ব্যাংকে বেশি ব্যবধান রয়েছে তাদের নামিয়ে আনার জন্য একাধিকবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি স্প্রেড রয়েছে বিদেশী খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের। ব্যাংকটির স্প্রেড ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ। এরপরে রয়েছে বেসরকারী খাতের ব্র্যাক ব্যাংকের। ব্যাংকটির স্প্রেড ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির ঋণের একটি বড় অংশই হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) খাতের। এই খাতের ঋণের সুদের হার বেশি। এ ছাড়া তাদের ভোক্তা ঋণের সুদের হারও বেশি। যে কারণে তাদের ঋণের গড় সুদের হার বেশি। এদিকে তারা আমানতের বিপরীতে খুব কম সুদ দেয়। যে কারণে তাদের স্প্রেড বেশি। ঋণ ও আমানতের সুদের হারের ব্যবধানের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে বেসরকারী খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। তাদের এই ব্যবধান ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। এই ব্যাংকটিও খুব কম সুদে আমানত সংগ্রহ করে। আবার ঋণের সুদের হার বেশি। যে কারণে তাদের স্প্রেডও বেশি। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ওয়ান ব্যাংকের স্প্রেড ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ। চতুর্থ অবস্থানে থাকা উত্তরা ব্যাংকের স্প্রেড ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। পঞ্চম অবস্থানে থাকা আইএফআইসি ব্যাংকের ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে দি সিটি ব্যাংকের ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ, এবি ব্যাংকের স্প্রেড ৫ দশমিক ৩১, প্রাইম ব্যাংকের ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ, ঢাকা ব্যাংকের ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ, ব্যাংক এশিয়ার ৫ দশমিক ১২ শতাংশ, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের স্প্রেড ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ, মধুমতি ব্যাংকের ৭৭ শতাংশ, মেঘনা ব্যাংকের ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ, এনআরবি ব্যাংকের ৫ দশমিক ১১ শতাংশ। নির্দিষ্ট পরিমাণ জমার অজুহাত দেখিয়ে বিদেশী ব্যাংকগুলো সঞ্চয়ী হিসেবে সুদ দেয় না। এ ছাড়া নির্ধারিত ছকের বাইরে টাকা তোলার কারণেও সুদ দেয় না। এসব কারণে বিদেশী ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা সঞ্চয়ী হিসাবের বিপরীতে কোন সুদ পায় না। বিদেশী ব্যাংকগুলোর মধ্যে বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের স্প্রেড ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ, সিটি ব্যাংক এন, এর ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ, উড়ি ব্যাংকের ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ, এইচএসবিসি ব্যাংকের ৬ দশমিক ৭২, স্টেট ব্যাংক ইন্ডিয়ার ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ ও কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। উল্লেখ্য, শতাংশ থেকে শতাংশের মধ্যে কম-বেশির তুলনা করতে শতাংশীয় পয়েন্ট ব্যবহার করা হয়। যেমন ৫ শতাংশ থেকে কমে ৩ শতাংশ হলে এটি ২ শতাংশীয় পয়েন্ট কমল বলে বিবেচিত হবে।
×