ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যশোরে প্রেমিককে আটকে রেখে কলেজছাত্রী ধর্ষণ

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২ নভেম্বর ২০১৫

যশোরে প্রেমিককে  আটকে রেখে  কলেজছাত্রী  ধর্ষণ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ শনিবার শহরের শেখহাটি এলাকার একটি ছাত্রাবাসে প্রেমিক ও তার বন্ধুকে আটকে রেখে এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে রিমন হোসেন নামে এক যুবক। ধর্ষণের পরে পরিবারের কাছে ৪০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করলে বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর পুলিশ শনিবার রাতেই অভিযুক্ত রিমন হোসেনকে আটক করে। আটক রিমন যশোরের বাঘারপাড়ার আদমপুর গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে ও যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শেষ বর্ষের ছাত্র। ধর্ষণের শিকার মেয়েটির ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মোবাইল ফোনে প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে শনিবার মেয়েটি মাগুরা থেকে আর তার প্রেমিক রনি খুলনা থেকে যশোরে দেখা করতে এসেছিলেন। যশোরে প্রেমিককে আটকে রেখে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার শিকার কলেজছাত্রী রবিবার বাদী হয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় ৩ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ২/৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেছেন। যশোর কোতোয়ালি থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান জানান, কলেজছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় রবিবার সকালে ৩ জনের নাম উল্লেখসহ আর ২/৩জন অজ্ঞাত আসামি করে ধর্ষণের মামলা করা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলো যশোরের বাঘারপাড়ার ইয়াকুব আলীর ছেলে রিমন হোসেন, শহরের নীলগঞ্জ এলাকার শুভ ও সিটি কলেজপাড়ার বুলেটসহ অজ্ঞাত আর ২/৩ জন। মেয়েটি নিজেই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। ভিকটিমের ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ জানায়, মোবাইল ফোনে প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে মাগুরা সরকারী মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী ও খুলনার রূপসার নন্দনপুর এলাকার আলমগীর শেখের ছেলে রনি শেখ শনিবার যশোরে দেখা করতে আসেন। রনির সঙ্গে মুরাদ নামে তার এক বন্ধুও ছিল। সেই বন্ধুর পরিচিত সিটি কলেজপাড়ার বুলেট। তাদের সাক্ষাতের জন্য মুরাদ তাকে একটি নিরিবিলি স্থান খুঁজে দিতে বলেন। খবর পেয়ে যুবক বুলেট তার বন্ধু শুভকে নিয়ে তাদের সামনে হাজির হয়। এরপর তারা বেলা ১১টার দিকে শহরের শেখহাটি এলাকার একটি ছাত্রাবাসে তাদের নিয়ে যায়। ওই ছাত্রাবাসের সদস্য রিমন। সেখানে পৌঁছানোর পর রিমন, বুলেট ও শুভ কৌশলে রনি ও তার বন্ধু মুরাদকে আটকে মারপিট করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে আটকে রাখা হয়। এক পর্যায়ে রিমন ওই মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। এরপর তারা মেয়েটির বাবাকে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে। কিন্তু তার বাবার কাছ থেকে কোন সাড়া না পেয়ে রনির বাবার কাছে ফোন দিয়ে টাকা দাবি করে। রনির বাবা তাদের ৪০ হাজার টাকা দেন। এরপর বিকেলে এলাকায় বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশ সেখানে হাজির হয় এবং রিমনকে আটক করে। পালিয়ে যায় বুলেট, শুভ, মুরাদ ও রনি। যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার আককাছ আলী জানান, মেয়েটি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। আটক রিমন ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। লক্ষ্মীপুরে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, লক্ষ্মীপুরে ব্র্যাক স্কুলের এক শিশুছাত্রী নিজ বাড়িতে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার সকাল ৮টায় সদর উপজেলার নবগঠিত চন্দ্রগঞ্জ থানার খাগুড়িয়া গ্রামে। সমাজের এক শ্রেণীর মাতব্বর ধর্ষণের ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে শিশুটির পরিবারকে রবিবার পর্যন্ত থানায় অভিযোগ করতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, খাগুড়িয়া গ্রামের কুমারবাড়ির মৃত আনোয়ার উল্লার পুত্র, ৩ সন্তানের জনক ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা আব্দুল কাদের প্রতিবেশী এক দুস্থ পরিবারের স্থানীয় ব্র্যাক প্রি-প্রাইমারী স্কুলের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রীকে (১১) ঘরে ঢুকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। ধর্ষণের শিকার শিশু সাংবাদিকদের জানান, তাকে লালন পালনকারী তার বিধবা নানি তাকে ও তার ছোট বোনকে একাকী বাড়িতে রেখে তার অসুস্থ খালাত ভাইকে দেখতে যান। এ সুযোগ নিয়ে লম্পট যুবলীগ নেতা আব্দুল কাদের তাদের বসতঘরে প্রবেশ করে তাকে মুখে ওড়না ঢুকিয়ে দিয়ে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর তার নানিবাড়িতে এলে শিশুটি নানিকে জানায়। বিধবা নানি ঘটনাটি এলাকার সাবেক মেম্বার আব্দুল হাই ও বর্তমান মেম্বার আব্দুল মতিন এবং ধর্ষকের বড়ভাই নুরুল আমিনসহ মাতব্বরদের জানান। মাতব্বররা তাকে ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার আশ্বাস দেন। এ ব্যাপারে থানায় মামলা দায়ের করা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউপি সদস্যগণ ও ধর্ষকের বড় ভাই অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কাদের ঘটনাটি ঘটিয়ে ফেলেছে, আমরা বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা ঘটনাটি নিয়ে বসে মীমাংসা করে দেব। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্র্যাক (শিক্ষা) হাজিরপাড়া এরিয়া ম্যানেজার খোরশেদ আলম জানান, আমরা রবিবার সকালে আমাদের কেন্দ্র শিক্ষিকার মাধ্যমে ঘটনাটি জেনে ঘটনাস্থলে গিয়ে ধর্ষিতা শিশু ও তার বিধবা নানির সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আমরা শিশুটিকে আইনী সহায়তা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার একাধিক লোক জানান, কাদের এলাকার চিহ্নিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। ইতোপূর্বেও সে আরও বেশ কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে। এলাকায় সে প্রতিনিয়ত অস্ত্র উচিয়ে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কেউ তার অপকর্মের প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। ওই যুবলীগ নেতার বিষয়ে জেলা এবং উপজেলা নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার সেল ফোনে চেষ্টা করে তাদের কোন মতামত পাওয়া যায়নি। চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির জানান, ঘটনাটি শোনার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সত্যতা এবং অভিযোগ পাওয়া গেলে অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×