ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চার নদীর মৃত্যুঘণ্টা

প্রকাশিত: ০৭:১৭, ১ নভেম্বর ২০১৫

চার নদীর মৃত্যুঘণ্টা

উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী বটে, তবে সে উদ্যোগের বাস্তবায়ন না হলে সব বৃথা। উদ্যোগ বাস্তবায়নে ধারাবাহিকতাও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চার নদীকে বাঁচানোর জন্য বহু উদ্যোগ সত্ত্বেও নদীগুলোর মৃত্যুঘণ্টা বেজেই চলেছে। হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে নদীমৃত্যু আমাদের চেয়ে চেয়েই দেখতে হবে। এটাকে নদীহত্যা বলাই বোধকরি সঙ্গত। অর্ধ যুগ আগে উচ্চ আদালতের আদেশবলে পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষ থেকে চার নদীর তীরবর্তী অঞ্চলকে ‘পরিবেশগত সঙ্কটাপূর্ণ এলাকা’ (ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়াÑইসিএ) ঘোষণার পরও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। দখল-দূষণের ধারাবাহিক শিকার ওই চার নদী রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে উদাসীনতার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে জরুরী ভিত্তিতে। এ ব্যাপারে ছাড় দেয়ার আর কোন সুযোগ নেই। শুধু চার নদী নয়, দেশের বহু নদীই আজ মরণাপন্ন। বল হারিয়ে দুর্বল হয়ে গেছে বাংলার কত শত নদী! আমরাও বাঁধ দিয়ে গলা টিপে ধরেছি কত নদীর। এক সময়ের প্রমত্তা সব নদ-নদী এখন কালের সাক্ষী মাত্র। নাব্য হারিয়ে বিরাণ ভূমিতে পরিণত হওয়াই কি তার নিয়তি! দখলবাজদের কবলে শুধু রাজধানীর চার নদীই নয়, দেশের অসংখ্য নদীর অস্তিত্ব বিলীন হতে বসেছে। নদীবহুল বাংলাদেশের অসংখ্য নদী দূষণের শিকার হয়ে বিপন্ন বিপর্যস্ত; মানুষের অপরিণামদর্শিতার কারণে বহু নদী ধুঁকে ধুঁকে মরছে। বিশ্বের আর কোথাও এদেশের মতো এমন নদীহত্যার নজির নেই। বহির্বিশ্বে প্রকৃতির উপহার সংরক্ষণের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেয়া হয়। নদীকে প্রাণবন্ত, দূষণমুক্ত রাখা এবং তার প্রবাহ অবাধ রাখার জন্য রীতিমতো আইন প্রণয়ন হয়। দীর্ঘদিন যাবত রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণের কথা বলা হচ্ছে। কালে কালে সেই দূষণ এমন ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, নদীটির পানি সংশোধনের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। নয়টি চিহ্নিত অঞ্চল থেকে শিল্প বর্জ্যে নির্বিচারে নদী দূষণ চলছে। ঢাকায় দৈনিক পানির চাহিদা ২২০ থেকে ২৩০ কোটি লিটার। ঢাকা ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিতে থাকে মাত্রাতিরিক্ত দুর্গন্ধ ও ময়লা। দীর্ঘ সময় ধরে ফোটানো হলেও কিছু এলাকার ওয়াসার পানি থেকে দুর্গন্ধ যাচ্ছে না, তা পানযোগ্যও করা যাচ্ছে না। তাছাড়া পানিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক মেশানোয় দুর্গন্ধ দেখা দিয়েছে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে বুড়িগঙ্গার ৯টি স্থানের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ লিটারে এক মিলিগ্রামের নিচে; শুষ্ক মৌসুমে যা নেমে আসে শূন্যের কাছাকাছি। অথচ এক লিটার পানিতে ছয় মিলিগ্রাম দ্রবীভূত অক্সিজেন না থাকলে তা শোধনের অযোগ্য বিবেচিত হয়। বর্তমানের বুড়িগঙ্গার জীর্ণশীর্ণ নোংরা ও দূষণকে মধ্য ইউরোপের রাইন ও লন্ডনের টেমস নদীর দূষণকালীন কৃষ্ণবর্ণ ও মলিনতার সঙ্গে তুলনা করা হয়ে থাকে। টেমস ও রাইনকে যদি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে রক্ষা করা সম্ভব হয়, তাহলে বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চার নদীকেও রক্ষা করা সম্ভব। এখনও সময় আছে। যথাযথ পদক্ষেপ নিলে সেটা অবশ্যই সম্ভব। এ লক্ষ্যে দেরি না করে সরকারকে উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স এবং মনিটরিং টিম গঠন করে চার নদীর জীবন রক্ষায় দৃঢ় ভূমিকা নিতে হবে। বলাবাহুল্য নদী না বাঁচলে, রাজধানীকে বাঁচানো অসম্ভব।
×