ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এ্যামনেস্টির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে সারাদেশ, ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধারা

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১ নভেম্বর ২০১৫

এ্যামনেস্টির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে সারাদেশ, ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধারা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার দাবি করা প্রশ্নবিদ্ধ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ‘এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’-এর বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে সর্বস্তরের মানুষ। সংগঠনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। শনিবার রাজধানীতে পৃথক পৃথক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে এ্যামনেস্টির সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি তাদের কার্যক্রম অনুসন্ধান এবং কেন যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সংস্থাটির অবস্থান তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রুখতে সরকারের প্রতি বিদেশী লবিস্ট নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, গবেষক, কূটনীতিক ও রাজনীতিবিদরা। ২৭ অক্টোবর এ্যামেনেস্টির পক্ষ থেকে সাকা ও মুজাহিদের মুক্তির দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের বিচারের দাবি জানিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধের কথা উল্লেখ করে ওয়েবসাইটে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। এর পর পরই মিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। শনিবার রাজধানীর গুলশানে স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় বাস্তবায়ন ও নিরাপত্তা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম পৃথক কর্মসূচীর আয়োজন করে। আজ রবিবার এ্যামনেস্টির কলাবাগান কার্যালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। গুলশানে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকের শুরতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিজিওনাল এন্টি টেরোরিস্ট রিচার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনালের (অব) মোহাম্মদ আলী শিকদার। বৈঠক সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা অহিদ। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, শুধু দু’একজন ব্যক্তির বিচার করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। এক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত দল ও সংগঠনগুলোরও বিচার দ্রুত করতে হবে। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিচার হবে আর জামায়াত বসে থাকবে তা ভাবার কোন কারণ নেই। তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে লবিস্ট নিয়োগ করেছে। সে লবিস্ট নিয়োগের ফলেই এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো সংগঠনগুলো একতরফা বক্তব্য দিচ্ছে। দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার করার দাবি জানান তিনি। শাহরিয়ার বলেন, আমাদের দেশের আইনে আমাদের দেশের অপরাধীর বিচার হচ্ছে। তা নিয়ে কোন বিদেশী সংগঠন প্রশ্ন তুলতে পারে না। এ অধিকার তাদের নেই। এটা স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ বলে মনে করেন তিনি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, আমরা আন্তর্জাতিকমানের অনেক উপরে উঠে এ বিচারকাজ সম্পন্ন করছি। অভিযুক্তদের অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছি। কাউকে কাউকে জামিনও দেয়া হয়েছে। এছাড়া তারা সংবাদ সম্মেলন করার সুযোগ পেয়েছে। পৃথিবীর আর কোন আদালতে এমন সুযোগ দেয়া হয়নি। অথচ এ বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আর এ ষড়যন্ত্র করছে তিনটি সংগঠন ও একজন সাংবাদিক। সংগঠনগুলো হলোÑ এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও আলজাজিরা এবং ব্যক্তিটি হলেন এ দেশের প্রখ্যাত একজন আইনজীবীর মেয়ের জামাই। তিনি বলেন, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নব্য হানাদারবাহিনী ও রাজাকারে পরিণত হয়েছে। একাত্তরে রাজাকার, আলবদর, আলশামসরা যেভাবে কথা বলত, সেই একই ভাষায় কথা বলছে সংগঠনটি। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের বিচারের কথা বলে ঔদ্ধত্য প্রদর্শনও করছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) মোঃ আবদুর রশীদ বলেন, বিদেশী হত্যাকা-, শিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার মাধ্যমে সরকারকে অস্থিতিশীল করে অসাংবিধানিক সরকারের ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে। এতে সহযোগিতা করছে উন্নয়ন সহযোগীরা। তিনি বলেন, দু’জন বিদেশীকে হত্যা করা হলো। হামলা করা হলো শিয়া সম্প্রদায়ের ওপর। এ হামলাগুলো আর কিছু না, এগুলো প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চলছে। নিরাপত্তাকে জিম্মি করে চলছে এ রাজনীতি। নিরীহ মানুষকে হত্যা করে রাজনীতির নামে এ অপরাজনীতি বন্ধ করা দরকার। এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে সংস্থাটির স্বচ্ছতা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল। তিনি বলেন, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ডলারের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। তারা এখন মানবাধিকারের ব্যবসা করে। তাদের বিরুদ্ধে কী করা যায় তা সরকারকে খতিয়ে দেখতে হবে। সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে মেজবাহ কামাল বলেন, যুদ্ধপরাধীরা বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করছেন। সরকার কেন লবিস্ট নিয়োগ করতে পারছে না? আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধে তাদের (যুদ্ধাপরাধী) ভূমিকাকে তুলে ধরতে হবে। এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালানোর আহ্বান জানিয়ে ওয়্যার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ড. এমএ হাসান বলেন, বিচার প্রশ্নবিদ্ধ করতে, থামিয়ে দিতেই বিতর্কিত করা হচ্ছে। এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কার্যক্রমের অনুসন্ধান চালানো উচিত। ড. হাসান বলেন, এ্যামনেস্টির নব্বইয়ের দশকে ভাল ভূমিকা ছিল। সংস্থাটির মহাসচিব আইরিন খান চলে যাওয়ার পর তারা এখন কোন এ ভূমিকায় গেল তার অনুসন্ধান করা দরকার। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও কূটনীতিক ওয়ালিউর রহমান বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করতে ট্রাইব্যুনালের রায় আপীল বিভাগে নেয়া হচ্ছে, পুনর্বিবেচনার সুযোগ রাখা হয়েছে। এভাবে রায় কার্যকর করতে ২০ বছর লেগে যাবে। আমরা বিচার শুরু করেছি শেষ করার জন্য। সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী এএম আমিনুদ্দিন বলেন, আমাদের বিচার ব্যবস্থা চলছে সংবিধান অনুযায়ী। কিন্তু এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিচার চলমান অবস্থায় তা নিয়ে বিতর্কিত কথা বলছে, যা সংবিধান পরিপন্থী। বক্তব্য রাখেনÑ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. একে আজাদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান, জাপান স্টাডি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, ব্যারিস্টার আহসান হাবিব ভূঁইয়া, ইসলামী চিন্তাবিদ হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান, সাবেক মন্ত্রী কার্নেল (অব) জাফর ইমাম বীরবিক্রম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, রাত্রির নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব) মোহাম্মদ আলী শিকদার, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম প্রমুখ। এ্যামনেস্টিকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার দাবি ॥ মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার চাওয়া এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করার দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের ফাঁসির দাবি জানান তারা। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১ আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়। বক্তারা বলেন, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে নির্লজ্জ দালালি করেছে। এই দালালির অংশ হিসেবে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার করার কথা বলেছে। তারা বলেন, এ্যামনেস্টি স্বাধীন বাংলাদেশে থেকে এতবড় ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস কোথা থেকে পায়? এই ধৃষ্টতা দেখানো এ্যামনেস্টির সব কার্যক্রম বন্ধ করে তাদের বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেনÑ ম হামিদ, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের ভাইস চেয়ারম্যান আবু ওসমান চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুর রহমান, সংগঠনের যুগ্ম-মহাসচিব আবুল কালাম আজাদ পাটোয়ারী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোশারফ হোসেন প্রমুখ। বিবৃতি অসত্য ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত Ñনির্মূল কমিটি ॥ ’৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সাফাই গেয়ে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অসত্য ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিবৃতির তীব্র নিন্দা করেছে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’। শনিবার সংগঠনের সভাপতি বিচারপতি মোহম্মাদ গোলাম রাব্বানী, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, সহ-সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, চলচ্চিত্র নির্মাতা শামীম আখতার ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুলসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে ’৭১-এর গণহত্যাকারী, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যে ভাষায় বিবৃতি দিয়েছে, গণহত্যাকারীদের দল জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সহযোগীরা গত পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে একই ভাষায় কথা বলছে। এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গণহত্যাকারীদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য যেভাবে মরাকান্না জুড়েছে, গণহত্যার ভিকটিমরা যে চার দশকের অধিককাল বিচারের দাবিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে মাথা ঠুকেছে সে বিষয়ে তারা কোন উদ্বেগ বা সহমর্মিতা প্রকাশ করেনি। এমনকি ’৭১-এ এই গণহত্যা চলাকালেও এ্যামনেস্টি এর নিন্দা করে গণহত্যাকারীদের বিচার ও শাস্তি দাবি করেনি।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘হঠাৎ করে ’৭১-এর মুক্তিযোদ্ধাদের বিচারের দাবি জানিয়ে এ্যামনেস্টি গণহত্যাকারী পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে। জামায়াত-বিএনপি কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে আমেরিকা ও ইউরোপে লবিস্ট নিয়োগ করেছে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা এবং মহাজোট সরকারকে উৎখাত করার জন্য। বাংলাদেশবিরোধী এসব তৎপরতা চালানোর অর্থের উৎস কী এবং জামায়াত-বিএনপি ও তাদের ভাড়া করা লবিস্টরা বিদেশে কী ধরনের ষড়যন্ত্র করছে তা গোয়েন্দা নজরদারিতে আনার পাশাপাশি এ্যামনেস্টির মতো সংগঠন কিভাবে জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের গডফাদার জামায়াতের পক্ষে কাজ করছে এসব তথ্যপ্রমাণসহ আন্তর্জাতিক ফোরামসমূহে তুলে ধরার জন্য আমরা সরকারের নিকট দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে রিভিউর নামে গণহত্যাকারী সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের মৃত্যুদ- কার্যকর বিলম্বিতকরণে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’ এ্যামনেস্টি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেছে ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মুক্তি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিচারের দাবি করে বিবৃতি দিয়ে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন গণহত্যা ও আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নীরব ভূমিকা পালন করে প্রতিষ্ঠানটি মানবাধিকার নিয়ে কথা বলার নৈতিক অধিকার ও গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধৃষ্টতামূলক বক্তব্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি যে অপরাধ করেছে এজন্য তাদের অবিলম্বে এই বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। যদি তা না করা হয়, তবে এই প্রতিষ্ঠানকে বহিষ্কার করে দেশে নিষিদ্ধ করতে হবে। শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মূল ভবনের সামনে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে সংস্কৃতিকর্মীরা সরকারের প্রতি এ দাবি জানান। এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। সমাবেশে জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে এবং আবৃত্তিশিল্পী রফিকুল ইসলামের উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেনÑ সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সহ-সভাপতি ম হামিদ, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর, পথনাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরা, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান প্রমুখ। সভাপতির বক্তব্যে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করার পর থেকেই দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র আমরা লক্ষ্য করেছি, কখনও গণতন্ত্রের নামে, কখনও ধর্মের নামে, কখনও মানবাধিকারের নামে এই ধরনের ষড়যন্ত্র দেখতে দেখতে আমরা ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে গেছি। এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত কয়েক বছর ধরে মিথ্যা তথ্য দিয়ে লাগাতারভাবে এই বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তৎপর রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপি কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশে যেসব লবিস্ট নিয়োগ করেছে তার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি। এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে ’ন্যাস্টি ইন্টারন্যাশনাল’ আখ্যায়িত করে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সহ-সভাপতি ম হামিদ বলেন, যখন আমেরিকা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তখন এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল চোখ-কান-মুখ বন্ধ করে বসে থাকে। এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিভিন্ন ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাংস্কৃতিক ও নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, আমেরিকার বিভিন্ন অমানবিক কর্মকা-ে চুপ থেকে তারা এখন আইএসের প্রতি সহমর্মিতা দেখাচ্ছে। আলজাজিরা চ্যানেলে লন্ডনে থাকা যুদ্ধাপরাধী মইনুদ্দিনের ইন্টারভিউ প্রকাশ করা হচ্ছে। এ সবকিছুই একই সূত্রে গাঁথা। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আমাদের বিরোধিতা করেছিল এবং এখনও সেই ভূমিকাই পালন করছে। এ্যামনেস্টিকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধের দাবি ॥ দেশের সূর্যসন্তান মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীন সার্বভৌমত্বকে নিয়ে ষড়যন্ত্রকারী পাকিস্তানী ভাবধারায় মানবতাবিরোধী সংগঠন এ্যামনেস্টিকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ)। সংগঠনের সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময় ও সাধারণ সম্পাদক আজম আজিম এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, বিশ্ব মানবতা যেখানে ধ্বংস হয় সেখানে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নীরব থাকে।
×