ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খুলনায় সেমিনারে মুনতাসীর মামুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগ্নেয়গিরির ওপর বসে আছেন

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ৩১ অক্টোবর ২০১৫

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগ্নেয়গিরির ওপর বসে আছেন

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী ও ১৯৭১ : গণহত্যা নির্যাতন আর্কাইভ জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগ্নেয়গিরির ওপর বসে আছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের দ্বীপ শিখা জ্বালিয়ে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালালেও তাঁর সরকারের প্রশাসনের উচ্চপদে আসীন অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কাজ করছেন। দলের এমপি-মন্ত্রীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা বললেও চেতনা বাস্তবায়নে আন্তরিকতা নেই। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে মুক্তিযুদ্ধের সকল অর্জন নস্যাত হয়ে যাবে। ড. মামুন একশ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, মন্ত্রী-এমপি ও তাঁর সহকর্মীদের সমালোচনা করেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দৃষ্টিভঙ্গি না বদলালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। ড. মামুন বলেন, যে ভাবে দেশ চলছে তাতে মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অগ্নেয়গিরির ওপর বসে আছেন। খুলনায় একাত্তরের প্রথম রাজাকার ক্যাম্পের পরিচিতিমূলক ফলক স্থাপনে বাধা দানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা কাদের প্রশাসনের উচ্চপদে বসাচ্ছেন এটা যাচাই করে দেখার সময় এসেছে। তিনি বলেন, দেশ অর্থনীতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিকই কিন্তু শিক্ষা-সংস্কৃতিতে উন্নয়ন না হলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধরে রাখা সম্ভব নয়। সাংস্কৃতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সরকারকে রক্ষা করতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন আক্ষেপ করে বলেন, বংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, জাতির ইতিহাস পড়ানো হয় না। একমাত্র দেশ বাংলাদেশ যেখানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি রয়েছে। তিনি বলেন, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ইতিহাস ও বাংলা সাবজেক্ট নেই। এ দু’টি সাবজেক্ট খোলার ব্যাপারে আন্তরিকতাও নেই। তিনি প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে বাংলা ও ইতিহাস থাকতে হবে বলে দাবি করেন। ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর প্রসঙ্গে ড. মামুন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সকল প্রকারের সহযোগিতা না পেলে আমরা এই কাজটি করতে পারতাম না। তিনি না থাকলে স্বাধীনতাবিরোধীরা এটি করতে বাধা দিত, ফলক তুলে ফেলত, জাদুঘর ভেঙ্গে ফেলত। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে হলে সমাজের ও রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে হবে। ড. মামুন শুক্রবার সকালে খুলনায় বিএমএ ভবন মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী খুলনা আয়োজিত দিনব্যাপী আঞ্চলিক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। সংগঠনের খুলনা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ সুনীল কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান, বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান ও ১৯৭১ : গণহত্যা নির্যাতন আর্কাইভ জাদুঘর ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শেখ বাহারুল আলম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, ইতিহাস সম্মিলনী খুলনার সাধারণ সম্পাদক অমল কুমার গাইন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অধ্যাপক শংকর কুমার মল্লিক। দুই পর্বে বিভক্ত সেমিনারে একাত্তরে গণহত্যাবিষয়ক ৬টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। প্রথম অধিবেশনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের সভাপতিত্বে খুলনা শহরের গণহত্যা-নির্যাতন বিষয়ে সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী, কলেজ শিক্ষক ড. দিব্যদূতি সরকার মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা : পাটকেলঘাটা ও কলেজ শিক্ষক পারভীন সুলতানা রংপুর গণহত্যা ও নির্যাতন বিষয়ে এবং ১৯৭১ : গণহত্যা নির্যাতন আর্কাইভ জাদুঘর ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শেখ বাহারুল আলমের সভাপতিত্বে দ্বিতীয় অধিবেশনে কলেজ শিক্ষক শংকর কুমার মল্লিকের ঝাউডাঙ্গা গণহত্যা : রক্তাক্ত মানবতা, কলেজ শিক্ষক অসিফ আলতাফ মুক্তিযুদ্ধে দিঘলিয়ার গণহত্যা : একটি পর্যালোচনা এবং আবু তাহের প্রিন্স কপিলমুনি রাজাকার ক্যাম্পে গণহত্যা ও নির্যাতন শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
×