ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইস্ট বেঙ্গল ১-৩ গোলে পরাজিত

চট্টগ্রাম আবাহনী চ্যাম্পিয়ন

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৩১ অক্টোবর ২০১৫

চট্টগ্রাম আবাহনী চ্যাম্পিয়ন

রুমেল খান, চট্টগ্রাম থেকে ॥ এর চেয়ে মধুর ও সুন্দর চিত্রনাট্য আর কী হতে পারত? ‘শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট’-এর ফাইনালে গ্যালারিতে প্রথমবারের মতো কানায় কানায় দর্শক পূর্ণ, আগে গোল খেয়েও প্রতিপক্ষকে হারিয়ে স্বাগতিক দলের শিরোপা জিতে গোটা দেশবাসীর প্রত্যাশা কড়ায়-গ-ায় পূরণ ... হ্যাঁ, শুক্রবার এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ৩০ হাজার দর্শকের সামনে বীরবিক্রমে ভারতের কিংফিশার ইস্ট বেঙ্গলকে ৩-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা বাংলাদেশে রেখেছে চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড। ম্যাচের প্রথমার্ধে স্কোরলাইন ছিল ১-১। বিজয়ী দলের এলিটা কিংসলে জোড়া গোল করেন। অপর গোলটি করেন হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস। এ জয়ের মাধ্যমে গ্রুপ ম্যাচে ইস্ট বেঙ্গলের কাছে ২-১ গোলে হারের বদলাটা ভালমতোই নিল চট্টগ্রাম আবাহনী। ম্যাচ শেষে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টুর্নামেন্টের সমাপ্তি ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিজয়ী দলের হাতে ট্রফি তুলে দেন বাফুফে ও সাফের সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন। শুরুতে ইস্ট বেঙ্গলের খেলা ছিল গোছাল। আর চট্টগ্রাম আবাহনীর খেলা ছিল অপরিকল্পিত। যদিও প্রথমার্ধে বেশি আক্রমণ আবাহনীই করেছে। ১০ মিনিটে বিপক্ষ দলের এক খেলোয়াড়ের কাছ থেকে বল কেড়ে নেন আবাহনীর উইঙ্গার জাহিদ হোসেন। তিনি থ্রু পাস দেন ডি-বক্সের ভেতর ঢুকে পড়া ফরোয়ার্ড এলিটা কিংসলেকে। তিনি বাঁ পায়ের যে উড়ন্ত মাইনাস করেন, তা থেকে আরেক ফরোয়ার্ড মিঠুন চৌধুরী হেড করলে স্বাগতিক দর্শকদের হতাশ করে সেই বল চলে যায় পোস্ট ঘেঁষে। ১১ মিনিটে পাল্টা আক্রমণ থেকে গোল করে ইস্ট বেঙ্গল। আবাহনীর বক্সের ভেতর বল পেয়ে ডিফেন্ডার অভিনব বাগ যে বাঁ পায়ের শটটি নেন, তা আবাহনীর ডিফেন্ডার রেজাউল রেজার মাথায় লেগে গতিপথ বদলে গিয়ে জড়িয়ে যায় জালে। প্রাণপণ ঝাঁপিয়ে পড়েও বলটি রুখতে পারেননি গোলরক্ষক রাসেল মাহমুদ লিটন। এগিয়ে যায় পশ্চিম বাংলার ক্লাবটি (১-০)। ৩০ মিনিটে আবাহনীর জাহিদ ফ্রি-কিক নেন। সেটা বাঁক খেয়ে গোলপোস্টে ঢোকার মুহূর্তে ইস্ট বেঙ্গলের গোলরক্ষক দিবেন্দ্যু সরকার কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। ৩১ মিনিটে ইস্ট বেঙ্গলের ডি-বক্সের বাইরে বল পেয়ে হেমন্ত যে দূরপাল্লার তীব্রগতির শটটি নেন, তা পোস্ট উঁচিয়ে বাইরে চলে যায়। ৩৫ মিনিটে আবাহনীর মিঠুন কর্নার করেন। প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারের মাথায় লেগে সেই বল চলে যায় হেমন্তর পায়ে। তার শটটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে গোল শোধের সুযোগ হারায় চট্টলার দলটি। ৪৩ মিনিটে ইস্ট বেঙ্গলের সীমানার বাঁ প্রান্তে বল পান জাহিদ। তিনি ডান পায়ের বাঁক খাওয়ানো শট নেন। সেটা দিবেন্দ্যু কোনমতে ঠেকিয়ে রক্ষা করেন দলকে। ইনজুরি টাইম (৪৫+১ মিনিট) পাল্টা আক্রমণ থেকে গোল করে সমতায় ফেরে আবাহনী। বাঁ প্রান্তে বল পান মিঠুন। তিনি ডান পায়ের বাঁকানো ও উড়ন্ত সে ক্রসটি ফেলেন ডি-বক্সের মধ্যে, তা চমৎকারভাবে হেড করে জালে জড়াতে মোটেও ভুল করেননি নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড এলিটা কিংসলে (১-১)। গো-ও-ল! উল্লাসে কেঁপে উঠে গ্যালারি, মাতোয়ারা হয় গোটা বাংলাদেশ! দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণ অব্যাহত রাখে আবাহনী। ৪৭ মিনিটে কর্নার থেকে বল পেয়ে প্রথমে এলিটা, তারপর মিঠুন শট নিলে সেই শট পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়। ৫৪ মিনিটে ডান প্রান্তে জাহিদ নিচু ফ্রি কিক নেন। সেই বল ডাইভ দিয়ে হেড করতে ব্যর্থ হন মিঠুন। তখন ফাঁকায় দাঁড়ানো সুযোগসন্ধানী এলিটা বাঁ পায়ের উঁচু প্লেসিং শটে বল জালে জড়িয়ে দেন (২-১)। ৫৭ মিনিটে আবারও ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় আবাহনী। ডি-বক্সের বাঁ প্রান্ত দিয়ে এলিটা উঁচু ক্রস করেন। ডি-বক্সের ভেতরে দৌড়ে গিয়ে হেমন্ত সেই বলে মাথা ছুঁইয়ে দিয়ে দলকে আবারও এনে দেন পরম আনন্দের উপলক্ষ্য (৩-১)। টানা তিন গোল হজম করে ঠা-া মাথায় খেলা ইস্ট বেঙ্গলের খেলোয়াড়রা যেন হয়ে পড়েন হতচকিত, উদভ্রান্ত! কি থেকে যেন কি হয়ে গেল তাদের! ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ইস্ট বেঙ্গল ২-১ গোলে চট্টগ্রাম আবাহনীকে হারিয়ে শুভসূচনা করে। পাকিস্তানের করাচী ইলেকট্রিককে ৩-১ গোলে হারায় দ্বিতীয় ম্যাচে। শেষ ম্যাচে তারা গোলশূন্য ড্র করে ঢাকা আবাহনীর সঙ্গে। সেই সঙ্গে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে উন্নীত হয় সেমিতে। সেমিতে ঢাকা মোহামেডানকে হারায় ৩-০ গোলে। পক্ষান্তরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের কিংফিশার ইস্ট বেঙ্গলের কাছে হারে চট্টগ্রাম আবাহনী। ঢাকা আবাহনী লিমিটেডকে দ্বিতীয় ম্যাচে ২-১ গোলে হারিয়ে সেমিতে যাওয়ার আশা বাঁচিয়ে রাখে। শেষ গ্রুপ ম্যাচে পাকিস্তানের করাচী ইলেকট্রিক ফুটবল ক্লাবকে ৪-২ গোলে হারিয়ে শেষ চার নিশ্চিত করে তারা। সেমিতে ৩-১ গোলে হারায় আফগানিস্তানের ডি স্পিন ঘার বাজান ফুটবল ক্লাবকে। ইস্ট বেঙ্গলকে হারিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলে স্মরণীয় এক অধ্যায় রচনা করল চট্টগ্রাম আবাহনী।
×