ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সমকালীন ভাবনাতাড়িত দশ তরুণ শিল্পীর প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩১ অক্টোবর ২০১৫

সমকালীন ভাবনাতাড়িত দশ তরুণ শিল্পীর  প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কালো জমিনে আঁকা ক্যানভাসের চারপাশে কাঁটাযুক্ত ক্যাকটাসের ফুল ও লতাপাতা। চিত্রপটের মাঝ বরাবর দৃশ্যমান একই নারীর পৃথক দুইটি মুখচ্ছবি। রংয়ের আশ্রিত আলোÑআঁধারির খেলায় ভিন্নতা দেখা দিয়েছে দু’টি মুখাবয়বে। এভাবেই উঠে এসেছে চলার পথে নারীর আনন্দ-বেদনার কথা। বর্ণের আভায় মুখশ্রীতে উদ্ভাসিত হয়েছে প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে নারীর এগিয়ে যাওয়ার বয়ান। জাহারিয়া আলম জেনিফারের আঁকা জীবনের রং শিরোনামের এই চিত্রকর্মটি এখন শোভা পাচ্ছে ধানম-ির গ্যালারি টোয়েন্টিওয়ানে। এখানে চলছে উদীয়মান দশ নবীন শিল্পীর প্রদর্শনী। তারা সবাই তরুণ চিত্রশিল্পী। সদ্য সম্পন্ন করেছেন চারুশিক্ষা। আঁকাআঁকির ক্ষেত্রে প্রত্যেকেরই ঝোঁক রয়েছে ফিগারেটিভ কাজের প্রতি। রঙের পরে রঙ চাপিয়ে অবয়বের ওপর মেলে দিয়েছেন ভাবনাকে। এমন দশ প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীর যৌথ চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে গ্যালারি টোয়েন্টিওয়ান। গতানুগতিকতার বাইরে সমকালীন বিষয়কে উপজীব্য করে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনীর শিরোনাম এরা। শুক্রবার হেমন্তের সন্ধ্যায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। যৌথভাবে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন চিত্রশিল্পী অধ্যাপক নিসার হোসেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রদর্শনীর কিউরেটর ঢাবি চারুকলা অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকবাল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গ্যালারির নির্বাহী পরিচালক শামীম সুব্রানা। প্রদর্শনী প্রসঙ্গে মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, মেধাবী তরুণ শিল্পীদের নিয়ে এই শিল্পসম্ভারের আয়োজন করা হয়েছে। এই শিল্পীদের শিল্প সৃজনের ক্ষেত্রে একটি জায়গায় বিশেষ মিল রয়েছে। সেটা হচ্ছে তাঁরা প্রত্যেকেই ফিগারেটিভ কাজের প্রতি আগ্রহী। সময়কে ধারণ করে তাঁদের ক্যানভাসে প্রাধান্য পেয়েছে সমকালীন ভাবনাতাড়িত নানা বিষয়। এছাড়া প্রত্যেকের চিত্রপটই স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। সদ্য চারুশিক্ষা সমাপ্ত করা এই শিল্পীদের নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজনের মাধ্যমে তাঁদের উৎসাহ আরও বেড়ে যাবে। শিল্পের ভুবনে মসৃণ হবে তাঁদের পথচলা। আর তরুণ শিল্পীদের নিয়ে এ ধরনের প্রদর্শনী আয়োজনের ফলে অন্য গ্যালারিগুলোও নবীন শিল্পীদের প্রতি আগ্রহী হবে। তাঁদের সৃজনশীলতা প্রকাশের পরিসরটা বৃদ্ধি পাবে। প্রদর্শনালয়ের দেয়ালজুড়ে সাজানো হয়েছে দশ নবীন শিল্পীর সমকালীন ভাবনাতাড়িত বিচিত্র বিষয়ের চিত্রকর্ম। ক্যানভাসে উজ্জ্বল রং ছড়িয়ে ছবি এঁকেছেন নাবিলা মেহজাবিন। ঝকঝকে হলদে বর্ণে তাঁর চিত্রপটে উপস্থাপিত হয়েছে দু’জন নারীর অবয়ব। আর একটি অবয়বের ওপর উল্টোভাবে এসে মিশে গেছে আরেকটি অবয়ব। দুই হাত দিয়ে নিজেদের মুখটি ঢেকে রেখেছে অবয়ব দু’টি। একই অভিব্যক্তির মাধ্যমে এভাবেই শিল্পী প্রকাশ নারীর হতাশা ও প্রতিবন্ধকতাকে। তেলরংয়ে চিত্রিত ছবিটির শিরোনাম ওভারল্যাপিং রিপারকেশন। আর এভাবেই প্রদর্শনীর চিত্রসম্ভারে যেমন প্রতিফলিত হয়েছে শিল্পীদের সময়ভাবনা, কাল-যন্ত্রণা; পাশাপাশি উপস্থাপিত হয়েছে শিল্প দক্ষতা ও চিন্তার উৎকর্ষতা। এ যেন সময়ের দ্রোহ-দাহের কাব্য। চারদিকে যেন বাস্তবতার চেয়ে পরাবাস্তবতার ঘনঘটা বেশি। এ যেন দালি, রেনে ম্যাগ্রিটদের পুনরুত্থান। এই শিল্পীদলের কাজেও যেন তার প্রতিধ্বনি। ক্যাকটাস-মস্তক, কিংবা নিজের ছিন্নভিন্ন করে কেটে নতুনভাবে সাজানো, সাধুবাবার হাত ফুরিয়ে বেরিয়ে এসেছে ত্রিশালÑএমন নানা বিষয়ে বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পরাবাস্তবতা। এই শিল্পীদের মধ্যে কেউ কেউ আবার রূঢ়তার ভাষা এড়িয়ে এক ধরনের সুরিয়েল- রোমান্টিকতায় আচ্ছন্ন হয়েছেন সৃজন করেছেন আপন শিল্পকর্ম। জানালা গড়িয়ে সমুদ্র ঢুকে পড়েছে ঘরে, তাতে গোল্ড ফিসের দাপাদাপি, কাল্পনিকভাবে সমুদ্রে বিচরণÑএ সব যেন এক ধরনের পরাবাস্তব ভাবনা থেকে উৎসারিত। একজন সাধুকে পদ্ম আসনের বদলে লাউডস্পীকারের আসনে বসিয়ে দেয়া নিঃসন্দেহে চিত্তাকর্ষক। এই প্রদর্শনী ও শিল্পীদের প্রধান বৈশিষ্ট হচ্ছে মানব দেহ অঙ্কনে পারঙ্গমতা। রং আর রেখার ছোঁয়ায় মানব অবয়বের ভেতর থেকেই মেলে ধরেছেন নিজস্ব ভাবনাকে। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী ১০ জন নবীন শিল্পী হলেনÑ জুয়েল এ রব, আজমল হোসেন, বুবলি বর্ণা, জাহারিয়া আলম জেনিফার, নাবিলা মেহজাবিন, নাফিয়া জাহান মুন্নি, পারভেজ হাসান রিগ্যান, সৈয়দ ফিদা হোসেন, তানভীর জালাল ও উপমা দাস তৃণা। ১১ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী শেষ হবে ৯ নবেম্বর। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। গণগন্থাগারে মুক্তধারার বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আবৃত্তিসন্ধ্যা ॥ কাব্যিক শব্দমালা উচ্চারণের মাধ্যমে জীবনকে ছুঁয়ে দেখার অভিপ্রায়ে ছুটে চলেছে আবৃত্তি সংগঠন মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র। ‘মানুষের জন্য আমরা মানুষকে স্পর্শ করতে চাই’ সেøাগানে পথচলা এই সংগঠনটি তাদের প্রতিষ্ঠান রজতজয়ন্তী উপলক্ষে হাতে নিয়েছে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। এরই অংশ হিসেবে দেশের প্রবীণ ও নবীন আবৃত্তিশিল্পীদের এবং আবৃত্তিদলগুলোকে একে অপরের সঙ্গে নতুন এক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করা লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হলো আবৃত্তি ও গানের মনোজ্ঞ ধারাবাহিক আয়োজন ‘সহযাত্রী’। শুক্রবার সন্ধ্যায় মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের আয়োজনে শাহবাগের সুফিয়া কামাল কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ‘সহযাত্রী’ শীর্ষক এ অনুপম অনুষ্ঠান। বাংলার মুখ লোকোৎসবের সমাপনী আজ ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ এবং ‘আইসিটির টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’ অর্জন উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির উš§ুক্ত প্রাঙ্গণে চলছে বাংলার মুখ আয়োজিত তিন দিনের লোকোৎসব। শুক্রবার ছিল উৎসবের ™ি^তীয় দিন। এদিনও বর্ণিল আয়োজনের মুখর ছিল উৎসব প্রাঙ্গণ। মঞ্চে বিকেল চারটা থেকে ১০টা পর্যন্ত ছিল লোক সুর আর নৃত্যের ঝঙ্কার।
×