ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পঙ্গপালের মতো ফুটবল দর্শক মাঠে ও মাঠের বাইরে!

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৩১ অক্টোবর ২০১৫

পঙ্গপালের মতো ফুটবল দর্শক মাঠে ও মাঠের বাইরে!

রুমেল খান, চট্টগ্রাম থেকে ॥ বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। আর ফুটবলের প্রাণ কি বলুন তো? দর্শক। একটি খেলা দেখতে গ্যালারিতে দর্শকদের ঢল নামবে, টিকেট কালোবাজারি হবে, লাইন ধরে গ্যালারিতে ঢুকতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি হবে, হুড়োহুড়ি হবে, চেঁচামেচি হবে, পুলিশ মৃদু লাঠিচার্জ করবে ... তবেই না হবে ফুটবল দেখার আসল মজা। বহুবছর ধরে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এমনটি দেখা যায় না। অথচ একসময় আন্তর্জাতিক ম্যাচ তো বটেই, ক্লাব পর্যায়েই হরহামেশা দেখা যেত এই দৃশ্য। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় ফুটবলের জোয়ারে পরিলক্ষিত হয় ভাটা। দর্শকরা হয়ে পড়েন স্টেডিয়ামবিমুখ। অবস্থা এমনই দাঁড়ায় যে, বিনা টাকায় খেলা দেখার ঘোষণা দিয়েও দর্শক আনা যায় না মাঠে! তবে এর বিপরীত চিত্র সবসময়ই দেখা যায় ঢাকার বাইরে। সিলেটে, যশোরে, রাজশাহীতে। এবার চট্টগ্রামে ‘শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট’-এ। বাংলাদেশে এর আগে যা হয়নি, তাই হয়েছে এবার। কোন আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন। সেটা করেছে চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড। সহায়তা করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। গত ২০ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া আসরটি শেষ হয়েছে শুক্রবার। ফাইনালে মুখোমুখি হয় স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড বনাম ভারতের কিংফিশার ইস্ট বেঙ্গল ফুটবল ক্লাব। এ টুর্নামেন্টের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল স্টেডিয়ামে প্রচুর পরিমাণে দর্শক সমাগম। শুরুর দিকে কিছুটা কম হলেও শেষের দিকে বেড়েছে। আয়োজকরা অবশ্য দর্শক কম হওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন দুর্গা পূজাকে। ৩০ হাজার ধারণক্ষমতার এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে যে ক’দিন খেলা হয়েছে, তাতে সেমিফাইনাল পর্যন্ত এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ২০ হাজার দর্শক এসেছে বলে আয়োজক সূত্রে জানা গেছে। তবে শুক্রবারের ফাইনালে দর্শকসংখ্যা ছাপিয়ে যায় আগের সব হিসেবকেই। গ্যালারি তো টইট¤ু^র ছিলই, স্টেডিয়ামের বাইরেও অনেক দর্শক টিকেট কিনতে না পেরে দাঁড়িয়ে ছিল। সংখ্যাটা ছিল বিস্ময়করÑ প্রায় হাজার দশেক! এদের ভিড় সামলাতে বেরসিক পুলিশকে মাঝে মধ্যে লাঠিচার্জও করতে হয়েছে। অনেকে আবার টিকেট কিনেও ঢুকতে পারেননি স্টেডিয়ামে! আফসোস আর কাকে বলে! অথচ দিনের শুরুতে এই পরিমাণ দর্শক আদৌ হবে কি না, এ নিয়ে সংশয় ছিল। কেননা, সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। জুম্মার নামাজের পর আবার মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। ফলে আশঙ্কা হচ্ছিল দর্শকরা স্টেডিয়ামে আসবেন কি না এবং মাঠ পানিতে জলমগ্ন হয়ে ম্যাচই বাতিল হয়ে যায় কি না! তবে ম্যাচ শুরুর আড়াই ঘণ্টা আগে একেবারেই থেমে যায় বৃষ্টি। মাঠকে খেলার উপযোগী করতে আদাজল খেয়ে কাজে নেমে পড়েন মাঠকর্মীরা। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর চেষ্টায় মাঠটি অনেকটাই খেলার উপযোগী হয়ে ওঠে। আবহাওয়া অনুকূল হওয়াতে দর্শকরাও পঙ্গপালের মতো পিল পিল করে হাজির হতে থাকেন স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে। ফাইনাল ম্যাচটি যেন দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণীর মানুষরা স্টেডিয়ামে এসে দেখতে পারেন, সেজন্য তাদের জন্য গ্যালারির একটি অংশ বরাদ্দ ছিল। সেখানে তারা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম দামে টিকেট কিনে খেলা দেখার ব্যবস্থা করা হয়। এমনিতেই শুক্রবার, ছুটির দিন। তার ওপর পূজা শেষ। ফলে এখানকার স্থানীয় মানুষদের মাঝে ফাইনাল ম্যাচ নিয়ে দারুণ উত্তেজনা লক্ষ্য করা গেছে। কেননা, তাদের স্বাগতিক দলই তো ফাইনালে! ফাইনালে যে দলই জিতুক না কেন, এই টুর্নামেন্টের আসল উদ্দেশ্য কিন্তু অর্জিত হয়েছে। এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের ফুটবলের জোয়ার সৃষ্টি করা।
×