ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁপাইয়ে মাদক জোনে বেপরোয়া কারবারিরা

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৩১ অক্টোবর ২০১৫

চাঁপাইয়ে মাদক জোনে বেপরোয়া কারবারিরা

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ মাদক জোন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও তৎসংলগ্ন পতœীতলা উপজেলা থেকে র‌্যাব ও পুলিশ পৃথক দুটি অভিযানে শুক্রবার রাতে ১৮২৯ বোতল ফেন্সিডিল আটক করেছে। দুটি চালানের একটি পেয়ারার ট্রাকে ও অপরটি একটি ভ্যানে বহন করা হচ্ছিল। আইন প্রয়োগকারীরা ট্রাক ও ভ্যানসহ দু’জনকে আটক করেছে। এসব ফেন্সিডিল পূজার বাজার ধরার জন্য আনা হয়েছিল। অপর ২১টি চালান নির্বিঘেœ গন্তব্যে চলে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এই ২১টি চালানে এসেছে ১৯ হাজার বোতল ফেন্সিডিল। পূজার বাজার ধরতে ও সরবরাহ করতে এই জোনে চোরাকারবারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাই হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় মাদক। উল্লেখ্য উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহত মাদক জোন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাসহ সংলগ্ন গোদাগাড়ীর পুরোঅঞ্চল। গত দেড় বছরে এ অঞ্চল হতে আইনপ্রয়োগকারীদের হাতে শুধু হেরোইন আটক হয়েছে ১০ কোটি টাকার। পাশাপাশি ফেন্সিডিল আটকের ঘটনা সহস্রাধিক। আটক বোতলের পরিমাণ ছাড়িয়ে গেছে অর্ধকোটি। ধরা পড়েছে ২৪ মাদক ব্যবসায়ী। একই অঞ্চল থেকে আটক গাজার পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিন শত কেজি। এর সঙ্গে বর্তমানে যোগ হয়েছে ইয়াবার মতো ভয়ঙ্কর উষ্ণ মাদক। যার পরিমাণ প্রায় পাঁচ লাখের কাছাকছি। একটি স্পর্শকাতর সরকারী বিভাগের সদস্যসহ বয়সে তরুণীরা চট্টগ্রাম থেকে এসব ইয়াবা বহন করে নিয়ে আসছে। ইতোমধ্যেই ফেন্সিডিলসহ ২টি করে আটক করেছে আইন প্রয়োগকারীরা। হঠাৎ করেই সীমান্তজুড়ে মাদক পাচার বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ অন্য যে কোন চোরাচালান পণ্যের চেয়ে অধিক লাভজনক এই পণ্যটি বহন করলে। গত জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের ২২ তারিখ পর্যন্ত এমনকি দিন বা রাত বাদ পড়েনি যে আইন প্রয়োগকারীদের হাতে মাদক নিয়ে কোন চোরাকারবারী আটক হয়নি। এই হলো গত দেড় বছরে মাদক আটক হওয়ার ঘটনা। আর আটক না হয়ে সীমান্ত গলিয়ে আসা মাদক ঝুঁকিবিহীনভাবে গন্তব্যে পৌঁছার পরিমাণ টাকার অঙ্কে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মাদক অধিদফতরের অবসরে যাওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক উর্ধতন কর্মকর্তার। চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ গোদাগাড়ীর প্রায় আড়াই শত পয়েন্ট বা রুট দিয়ে পাচার হয়ে আসছে এসব ভয়ঙ্কর মাদক। প্রায় সময়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি উত্থাপন করলেও তেমনভাবে আমলে নেয়া হয় না। এমনকি সংসদ সদস্যরাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। গোদাগাড়ী উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করার পরেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা অন্য দেশের মাদক উৎপাদন ও পাচারকরীদের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বিঘেœ মাদক ও চোরাচালানী পণ্য দেশে ব্যাপক হারে অবৈধ পথে আমদানি করছে। দুটি অঞ্চলের মধ্যে শিবগঞ্জের ১৩টি পয়েন্ট, ভোলাহাটের ১১টি ও সদরের ২৫টি পয়েন্ট এবং গোদাগাড়ীর সারাংপুর, জামাতির মোড়, ফাজেলপুর, শ্রীমন্তপুর, সুলতানগঞ্জ রেলবাজার আঁচুয়া, গড়ের মাঠ, করিডর মোড়, শিবসাগর, হাটপাড়া, বারুইপাড়া, মাদারপুরসহ ৩৫টি পয়েন্ট দিয়ে মাদক আনা হচ্ছে। আইন প্রয়োগকারীদের হাতে ধরা পড়া বা আটক মাদকের পরিমাণ খুবই নগণ্য। সীমান্তবর্তী পথে প্রতিদিন ২০ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত হেরোইন, হাজার বোতল ফেন্সিডিল, মণ খানেক গাঁজা আসছে। নতুন করে যোগ হয়েছে মাদক ইনজেকশান। সঙ্গে যৌন উত্তেজনক ট্যাবলেট। ভারতের মুর্শিদাবাদ, লালগোলা, চাটাইডুবি, কৃষ্টপুর, লতিফপাড়া, বানিপুর, হিজলগড়সহ তাদের সীমান্তে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। মাদক পাচারকারীদের পদ্মার দুই পাড়ে নির্মাণ করেছে বিশাল বিশাল বিলাসবহুল বাড়ি, মোবাইল দোকান, জুতার দোকান, সোনার দোকান, গার্মেন্টস, সবগুলোই লোক দেখানো। কিছু কিছু বাড়ি ও দোকানে বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে মাদক মজুদ করে রাখা হয়। পরে সুযোগ বুঝে সড়ক ও রেলপথে ঢাকা, চট্টলাসহ বিভিন্ন জেলায় পাচার করা হয় বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
×