ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নর্থ বেঙ্গল চিনি মিলের আখ মাড়াই উদ্বোধন করলেন শিল্প মন্ত্রী

প্রকাশিত: ০২:১৩, ৩০ অক্টোবর ২০১৫

নর্থ বেঙ্গল চিনি মিলের আখ মাড়াই উদ্বোধন করলেন শিল্প মন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রায় সাড়ে পাঁচশ কোটি টাকা লোকসানের জর্জরিত দেশের ১৫ চিনি মিলকে সচল করার লক্ষ্য নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে নির্ধারিত সময়ের এক মাস আগে দেশের বৃহৎ লালপুরের নর্থ বেঙ্গল চিনি মিলে ২০১৫-১৬ আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে আ’লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও শিল্প মন্ত্রী আমির হোসেন আমু এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য, মোনাজাত ও ডোঙ্গায় আখ নিক্ষেপের মাধ্যমে এ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) চেয়ারম্যান এ কে এম দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নাটের জেলা আ’লীগ সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এমপি, সহ-সভাপতি এ্যাড. আবুল কালাম আজাদ এমপি, নাটের জেলা পরিষদের প্রশাসক বীরমুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. সাজেদুর রহমান খাঁন, লালপুর উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক ইসাহক আলী। স্বাগত বক্তব্য দেন মিলের এমডি আব্দুল আজিজ। এ সময় সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, ইক্ষু গবেষণা ইনসিন্সটিউটের মহাপরিচালক ড. মু খলিলুর রহমান, জেলা প্রশাসক মশিউর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহাব উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, শুধু নিজেরা চিনি মিলের নিকট থেকে সুযোগ সুবিধা নিলেই হবে না। আখ চাষীদেরও মিলকে সহযোগিতা করতে হবে। মিল জোন এলাকায় কোনো ভাবেই গুড় তৈরি করা যাবে না। গুড় তৈরি করে সাময়িক ভাবে লাভবান হলেও প্রত্যেকটি আখ চাষি পরিবারসহ মিলের সাথে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী মারাত্বক ক্ষতির সম্মুখিন হবে। কারণ মিলে আখ সরবরাহ ঠিক থাকলে এলাকার স্কুল-কলেজ, রাস্তা-ঘাট, মসজিদ, মন্দিরসহ সামাজিক উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে।মিল ক্ষতিগ্রস্থ হলে শুধু এলাকাবাসীই নয় ভবিষৎ প্রজন্মও মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। চিনি মিলগুলো লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিনত হলেও এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়ন, কর্ম সংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র বিমোচনসহ জনগনের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে এ শিল্পের যুগান্তকারী ভূমিকা রয়েছে। সরকারের একার পক্ষে চিনি শিল্প রক্ষা করা সম্ভব হবে না। এ শিল্প রক্ষায় সবাইকে ঐকবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এ শিল্পকে লাভজনক করতে হলে মিলগুলোর বিদ্যমান জমি, মেশিনারি, অবকাঠামো, জনবলসহ সকল সম্পদের শতভাগ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। মিল বাচিয়ে রাখতে কর্মকর্তা কর্মচারি শ্রমিকদের রাত দিন পরিশ্রম করতে হবে। ব্যক্তি বা গোষ্ঠির স্বার্থকে জলাজ্জলি দিয়ে মিলের স্বার্তে কাজ করতে হবে। সিবিএ, স্থানয়ি জন প্রতিনিধি, শ্রমিক কিংবা কর্মচারি সংগঠন, রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ সবাইকে আগে মিলের স্বার্থ বিবেচনায় নিতে হবে। মিলগুলো বেচে থেকে লাভজনক হলে সকলের স্বার্থই কম-বেশি রক্ষা হবে। চিনি মিলগুলো বন্ধ হয়ে গেলে এ প্রভাব শুধু আখ চাষিদের উপরই পড়বে না। সামগ্রিক ভাবে এলাকার জনরগন পাওয়ার ক্রাসারসহ সকলের উপর পড়বে। মাড়াই উদ্বোধন হওয়ার আড়েই মিল জোন এলাকায় পাওয়ার ক্রসারে গুড় উৎপাদন কোনো ভাবেই প্রত্যশিত নয়। নর্থ বেঙ্গল চিনি মিলসহ অন্যান্য ধ্বংস প্রাপ্ত চিনি মিলগুলোকে উজ্জিবিত করতে হবে। এ মিলকে সচল করার মাধ্যমে এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক জোন গড়ে তুলতে হবে। এ কারনেই নির্ধারিত সময়ের এক মাসে আগে আখ চাষিদের দাবীর প্রেক্ষিতে আখ মাড়াই উদ্বোধন করা হলো। তিনি আরও বলেন, দেশকে পাকিস্থানের মতো অকার্যকর করতে জামায়াত শিবিরের দোসর এবং বিদেশী চক্র ষড়যন্ত্র করছে। তারা এ দেশের চিনি শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। বেগম খালেদা জিয়া চলতি বছরে ৯৩ দিন দেশ ব্যাপী অরাজকতা সৃষ্টি করেছেন। পেট্রল বোমা মেরে মানুষ হত্যা ও গাড়ি পুরিয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উনিশ বার প্রান নাশের চেষ্টা করা হয়েছে। আল্লাহ তাকে রক্ষা করেছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের মানুষের ভাত কাপড়সহ পাঁচটি মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। শিক্ষার হার সাতচল্লিশ থেকে বেড়ে একাত্তরে উন্নীত হয়েছে। মানুষের গড় আয় ছিল সাড়ে আটশ ডলার এখন হয়েছে তের’শ ডলার। খাদ্যে স্বয়ং সম্পন্ন হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যেই এদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। যদিও বিদেশীরা এখনই বলা শুরু করেছে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হয়েছে। উল্লেখ্য, দেশের লোকসানী মিলগুলোকে রক্ষার কৌশল হিসেবে দেশে এই প্রথম নির্ধারিত সময়ের এক মাস আগে নর্থ বেঙ্গল চিনি মিলের ২০১৫-১৬ আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করা হলো। এ মৌসুমে ২ লাখ ৪০ হাজার মে.টন আখ মাড়াই করে ১৯ হাজার ৫’শ ৬০ মে.টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্র নির্ধারন করা হয়েছে। চিনি আহরনের হার ধরা হয়েছে শতকারা ৮ দশমিক ১৫ ভাগ। ২০১৪-১৫ মৌসুমে বিরুপ আবহাওয়া বিরাজ করায় শতকরা ২৫ ভাগ জমিতে পানি জমা, আখের গোড়া পচে যাওয়া, চিনির মূল্য থেকে গুড়ের মুল্য বেশি হওয়া, চাষি কর্তৃক আখ মিলে সরবরাহ না করে গুড় তৈরি করায় ও মিলে বিলম্বে মাড়াই শুরু হওযায় লক্ষ্য মাত্রা অর্জিত হয় না। এবং চিনি রিকভারি হারও অর্জন করা সম্ভব হয়নি।
×