ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কবিতা

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ৩০ অক্টোবর ২০১৫

কবিতা

দেবশিশু (আয়লান কুর্দিকে নিবেদিত) সুজন হাজারী আকাশ ভরা একরাশ তারার মিতালি কী গোপন কথা হয় পরস্পর তাহাদের সাথে নীরব জ্যোৎস্নার নিবিড় সম্পর্কে শব্দহীন উচ্ছ্বাস ফেটে পড়ে। নীরবতার গহীন অতল থেকে ক্রোধান্মিত প্রতিবাদ জলসমুদ্রে আন্দোলিত ঢেউয়ে শোকার্ত গর্জন। অনতিদূরে উবু হয়ে পড়ে আছে দেবশিশু ¯েœহময়ী মায়ের পাতানো বালির বিছানায় লালজামা সবুজ প্যান্ট জমকালো দু’রঙের প্যাকেজ এ দেশের প্রাণের পতাকা পত্ পত্ ওড়ে মুজিবীয় কাব্যের অহিংস শক্তিতে এদেশে তার ঘর নেই, কেউ নেই আমি তার মানবাতœীয় দ্রোহে জেগে উঠি জেগে ওঠে মানুষ, জাগালো পৃথিবী তুরস্ক আলোকচিত্রী নীলুফা দেমারীর ক্লিক শর্টে বন্দী মৃত্যুঞ্জয়ী দেবশিশু আয়লান। মুহূর্তে ঝড়ের আলোড়নে কাঁপালো বিশ্ব যেন ঠিক এডওয়ার্ড মিঙ্ক এর পেইন্টিং ধ্বনিহীন নির্বাক সমস্ত ছবিজুড়ে গচ্ছিত সংবেদন দূরবর্তী সংকেত দেশহারা উদ্বাস্তুর ঐকতান। ধনুকের তীরের মতো দ্রুত ধাবমান যা কেবল ছুড়তে পারেন ফিদেল ক্রাস্ত্রো দেশে মহাদেশে মানুষ প্রকৃতির গোধূলি আকাশে কে না শুনেছে গালিপ আয়লানের মর্মন্তুদ চিৎকার! ফিরে যাবো কি যাবো না দেলওয়ার হোসেন যদি মন কেঁদে পড়ে থাকে সোনালী অতীতের ফাঁদে , থাক- তবুও বর্ষার প্রলোভনে ফিরে আসার কথা, কেন বলো বার বার। বর্ষা গেলেই তো আবার- ফিরে আসবে সেই চৈত্রের হাহাকার। আবার সেই শূন্যতার ভয়াল আগুনে পুড়বে, চেতনায় প্রবাহিত শান্ত শুভ্র ঊর্মিমালা। তোমার রহস্যময়ী স্বপ্নের বিস্তার ঢেকে যাবে গাঢ় অন্ধকারে। বইবে দীর্ঘশ্বাসের কালো মেঘ। তখন নিয়তির দিকে তাকিয়ে বৈরী নিসর্গ- হাসবে বিদ্রƒপের হাসি। হবো বদ্ধ ঘরে কৃষ্ণ নগরের নিবাসী, বিরহের দ্বীপে এ এক আমৃত্যু নিঃসঙ্গ কারাবাস। তার চেয়ে ভেবে দেখো, যার পথ চেয়ে অপেক্ষমাণ তুমি, তার জন্যে কী তোমার বাগানে এখনও আগের মতোই- না কি তার চেয়েও ঢের বেশি- সোনালী জ্যোৎস্নার ঢেউ আছড়ে পড়ে? এখন তো শুধু তাই জানতে ইচ্ছে করে। বরণ সিনথিয়া শবনম মৌ আজো হেমন্ত আসে যান্ত্রিকতার ফাঁকফোকর দিয়ে চড়চড়ে রোদটার একটু একটু করে মিষ্টি হয়ে আসা সকালের ঘুমচোখে পানির ঝাপ্টায় অপ্রত্যাশিত শীতলতা একটু কেঁপে ওঠা ট্রাফিক সিগন্যালে অনন্ত অপেক্ষার ক্লান্তিতে এক ঝলক শীতল উত্তুরে হাওয়া আজো চমকে দেয় পাথুরে মনকে হেমন্ত ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়। বেগুনীরঙা ভোরে শিশির ভেজা ঘাসে পা রাখি না আজ বহুদিন পড়ন্ত দুপুরে কলমি ফুলে নীল ফড়িঙের লুকোচুরি হয় না আর দেখা এখন বিকেলবাতাস আর ভারী হয় না ধানের গন্ধে তবু হেমন্ত ছুঁয়ে যায় যান্ত্রিকতার ফাঁকফোকর দিয়ে। কখনো কমলারঙের রোদ হয়ে পাশের বাড়ির ছাদে মেলে দেয়া পশমি কাপড় আর রঙিন শালে খেলা করে কখনও অজানা দূরের অচিন কোনো পাখি হয়ে গলাগলি দাঁড়িয়ে থাকা ফ্ল্যাটবাড়ির নকশা করা রেলিঙে এসে বসে কখনও বা ক্লান্ত দুপুরের লোডশেডিংয়ে বিশ্রামরত এসির চোখ এড়িয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে হঠাৎ ঢুকে পড়া এক ঝলক কার্তিকের বাতাস হয়ে টেবিলে রাখা কাগজগুলো এলোমেলো করে দেয় আর মাঝে মাঝে- খুব মাঝে মাঝে খুঁজে না পাওয়া কোনো গানের লাইন হয়ে ভুলে যাওয়া কোনো অলৌকিক স্মৃতি হয়ে চোখের পাতায় থেমে থাকা পানির ফোঁটায় মিশে যায়। হেমন্ত আজো আসে যান্ত্রিকতার ফাঁকফোকর দিয়ে, আজো আসে।
×