ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

রোবটকে কি ভালবাসা যায়

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৩০ অক্টোবর ২০১৫

রোবটকে কি ভালবাসা যায়

রোবট উত্তরোত্তর আমাদের আধুনিক জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে উঠছে। শুধু মানুষই যেসব কাজ করতে পারত তা আজ রোবট করে দিচ্ছে। পাশ্চাত্য সমাজে কিছু কিছু গৃহস্থালির কাজ করছে রোবট। কলকারখানায় রোবটের ব্যবহার বাড়ছে। সুপারমার্কেটে সেলস্্-চেকআউটে রোবট কাজে লাগছে। আবার কোন কোন দেশে যেমন জাপানে বয়স্কদের সেবাযতœ ও পরিচর্যায় রোবটের ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। রোবটকে যদি মানুষের মতো সংবেদনশীল ও যতœবান করে তৈরি করা যায় তাহলে কি হতে পারে? বিজ্ঞানীদের ধারনা, তাহলে আমাদের জীবনে রোবটের প্রবেশ ও সম্পৃক্ততা এত সর্বাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে যে আমরা তাদের প্রেমেও পড়ে যেতে পারি। তাই যদি হয় তাহলে কেমন হবে একবার ভাবুন তো! সেজন্যই রোবটকে নিয়ে খুব বেশি জড়িয়ে পড়ার আগে রোবট আমাদের জন্য কি করতে পারে এবং আমাদের কাছে রোবট কতটুকু কি অর্থ বহন করতে পারে তা নিয়ে গভীরভাবে ভেবে দেখার সময় এসেছে। এমন এক জগতের কথা কল্পনা করা যাক যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধির অধিকারী রোবট মানুষের স্থান দখল করে নেবে। ঠিক সেকাজটাই করার চিন্তা করেছেন কল্পবিজ্ঞানের লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতারা। তারা তাদের গ্রন্থ ও ছায়াছবিতে এমন জগৎকে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন যেখানে ভাল হোক বা খারাপ হোক কৃত্রিম বুদ্ধিসম্পন্ন রোবটের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক গড়ে উঠছে। রোবটের প্রেমে পড়ে যাওয়ার ধারণাটিকে আজ উদ্ভট এমনকি অতিমাত্রায় ভ্রান্ত, অন্যায়, অসমর্থনযোগ্য মনে হতে পারে। তথাপি ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে কোন কাজ নৈতিক দিক দিয়ে গ্রহণযোগ্য এবং কোন কাজ নয় সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা বা মত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিসম্পন্ন কোন রোবটকে ভালবাসা কিংবা তার প্রেমে পড়ে যাওয়ার ব্যাপারেও এর অন্যথা কিছু ঘটবে মনে করার কারণ নেই। কৃত্রিম বুদ্ধিসম্পন্ন রোবটের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বেশ কিছু নতুন সমস্যা নিয়ে আসবে। এর মধ্যে থাকবে জীবনমান হ্রাস এবং মানুষ ও রোবট উভয়কে শোসন করার সম্ভাবনা। এখন থেকে এই সমস্যাগুলো বিবেচনায় নিলে আমরা ভবিষ্যতের হৃদপীড়া থেকে রক্ষা পেতে পারি। নিঃসঙ্গ ব্যক্তিরা কৃত্রিম বুদ্ধিসম্পন্ন রোবটের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে যদি দেখা যায় এই রোবটের মধ্যে করুণা ও মায়া মমতা আছে। এখন নিজেকে ভবিষ্যতের এমন এক পরিবারের সদস্য হিসেবে কল্পনা করুন যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিসম্পন্ন রোবটও রয়েছে। এই রোবট যে পরিবারের সদস্যদের কাজকর্ম করে দিচ্ছে সেটা আর কোন বিমূর্ত ধারণা নয়। এই রোবট খাওয়ার টেবিলে ডিনার পরিবেশন করছে, থালাবাসন ধুচ্ছে, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে সোফাসেট, ফ্লোর, ম্যাট্রেস পরিষ্কার করছে। এই রোবট আপনার জোকস শুনে হাসে। বস্তুতপক্ষে এমন একটা রোবট আপনার জীবনকে উন্নততর, সহজতর, সুখী ও আনন্দময় করে তুলছে। এই রোবট প্রকৃতপক্ষে আপনার যতœ নিচ্ছে, আপনার সেবা-পরিচর্যা করছে। এমন কিছু কাজ করছে যা কিনা অদ্ভুতরূপে আপনার প্রয়োজনের উপযোগী। এই রোবট এমন কিছু কাজ করছে যেগুলো অনেক সময় ভালবাসার সমার্থক হয়ে দাঁড়াতে পারে। দুজন মানব-মানবী যখন প্রেমে পড়ে তখন আমরা এ দুজনের মধ্যেকার সম্পর্ক, যোগাযোগ, একে অপরের চাহিদা ও প্রয়োজন বুঝতে পারা ও তাতে সাড়া দেয়া, পরস্পরের ভুল-ভ্রান্তি, ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে আলোচনা করি। বিনোদন প্রতিষ্ঠান এএমসি ‘হিউম্যানস’ নামে এক নতুন টিভি সিরিজ পরিবেশন করছে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিসম্পন্ন প্রতিটি রোবটকে মানুষের মতোই আলাদা আলাদাভাবে তৈরি করা হয়েছে। মানুষের মতোই এমন প্রতিটি রোবটের নিজস্ব ব্যক্তিত্ব আছে, নিজস্ব ভুলভ্রান্তি, পছন্দ-অপছন্দ ও বাতিক আছে। অর্থাৎ একে ভালবাসতে পারার সকল উপকরণই আছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অনন্যতা। এই রোবটের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান করা যায়। এমন একটি রোবট যা আপনার প্রতিটি প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখে, আপনার জীবনকে উন্নততর করে তোলে। তাঁর প্রতি হৃদয় ও মনের দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কাকে ভালবাসতে না পারার সম্ভাবনা কম- একজন জীবন্ত মানুষকে, যে আপনার কাছে বাস্তবে নেই, নাকি একটা রোবটকে যার অস্তিত্ব বাস্তবে আছে? এএমসি’র ‘হিউম্যানস’ সিরিজের ট্রেলারে গোটা বিষয়টির সারসংকলন করে ছোট একটি প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সেখানে অনিতা নামের কৃত্রিম বুদ্ধিসম্পন্ন রোবট জো হকিন্সের হাতে আলতোভাবে নিজের হাত রাখল। হকিন্স জিজ্ঞেস করল : ‘তাহলে এখন কি হবে?’ এই প্রশ্নটাই আমাদের সময়ের প্রশ্ন। ‘তাহলে এখন কি হবে’ হয়ত প্রশ্ন এটা নয় : ‘রোবট আমাদের কি কি কাজ করে দিতে পারে?’ বরং প্রশ্নটা হলো ‘আমাদের আরও বেশি মানবিক করে তুলতে রোবট কিভাবে সাহায্য করতে পারে?’ এতে কি আমরা সত্যি সত্যি প্রেমে পড়ে যাওয়ার আরও বেশি সুযোগ পাব? কৃত্রিম মানবদের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত হওয়াটা কি আসলে বাস্তব মানবদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হওয়ার পথটিকে প্রসারিত করে তুলবে? আমরা পরিবর্তনকে যত দ্রুত পক্রিয়াজাত করতে পারছি পরিবর্তন তার চেয়েও দ্রুততর গতিতে ঘটে চলেছে। এ অবস্থায় বার বার আমাদের নিজেদের মনে প্রশ্ন আসবে -‘তাহলে এখন কি হবে?’ সূত্র : বিবিসি
×