ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পরীক্ষা শুরু রবিবার

জেএসসি জেডিসিতে এবার অংশ নিচ্ছে সোয়া ২৩ লাখ পরীক্ষার্থী

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৩০ অক্টোবর ২০১৫

জেএসসি জেডিসিতে এবার অংশ নিচ্ছে সোয়া ২৩ লাখ পরীক্ষার্থী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী রবিবার থেকে দেশজুড়ে শুরু হচ্ছে অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী বা জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা। এবার নয়টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এ পরীক্ষায় অংশ নেবে ২৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৩৩ জন পরীক্ষার্থী। ১৮ নবেম্বর পর্যন্ত চলবে এ পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় এবার ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীদের সংখ্যা এক লাখ ৬০ হাজার ৫৯৩ জন বেশি। পরীক্ষায় নির্বাচনী ও সৃজনশীল এ দুটি অংশ মিলে ৩৩ নম্বর পেলেই পাস বলে গণ্য হবে। এসএসসি-এইচএসসির মতো দুটি অংশে আলাদা আলাদা পাসের প্রয়োজন নেই। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পরীক্ষার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ সময় তিনি প্রশ্ন ফাঁস রোধসহ সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণে সরকারের নেয়া উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, এখন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাওয়া খুবই কঠিন হবে। মূল জায়গাগুলো মজবুত করার চেষ্টা করেছি। বিজি প্রেস থেকে কেউ প্রশ্ন নিয়ে আসা তো দূরে থাক, প্রশ্ন মুখস্ত করেও আসতে পারবে না। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবারও বাংলা দ্বিতীয়পত্র, ইংরেজী প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র ছাড়া অন্য বিষয়ের পরীক্ষা সৃজনশীল প্রশ্নে হবে। ২৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৩৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১২ লাখ ৪৩ হাজার ২৬৩ জন ছাত্রী। আর ছাত্র ১০ লাখ ৮২ হাজার ৬৭০ জন। এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে জেএসসি পরীক্ষা দেবে ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৪৪৭ জন। জেডিসিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন লাখ ৫৮ হাজার ৪৮৬ জন। গত বছর এ পরীক্ষায় ২০ লাখ ৯০ হাজার ৬৯২ জন অংশ নিয়েছিল। সে হিসাবে এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে দুই লাখ ৩৫ হাজার ২৪১ জন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এবার দুই হাজার ৬২৭টি কেন্দ্রে ২৮ হাজার ৬৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেবে। বিদেশের আটটি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৮৫ জন। গত বছর এক হাজার ৮০৩টি কেন্দ্রে ১৮ হাজার ৮১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এ পরীক্ষা দিয়েছিল। শিক্ষানীতি অনুসারে প্রথম পর্যায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী চালু করা হয়েছে এমন ৫০০ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবার জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। শ্রবণপ্রতিবন্ধীসহ অন্য প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা এবারও অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাবে। এছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই তারা শ্রুতিলেখক সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে। প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি) পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় বৃদ্ধিসহ শিক্ষক, অভিভাবক বা সাহায্যকারীর বিশেষ সহায়তায় পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে। তিনি বলেন, জেএসসি-জেডিসি পাবলিক পরীক্ষা নয়, জাতীয় লেভেলের পরীক্ষা। এই পরীক্ষার মাধ্যমে পরীক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় আরও উদ্যমী ও আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়ে উঠবে। জাতীয় পর্যায়ের প্রাথমিক সমাপনী ও অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা তুলে দিলে অনেক পরিবারের সন্তানেরই ক্লাসে আসা বন্ধ হয়ে যাবে। তবে এটা স্থায়ী পরীক্ষা নয়, এক সময় হয়ত তুলে দিতে পারি। এখন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাওয়া খুবই কঠিন মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, কোচিং সেন্টারগুলো প্রশ্ন ফাঁস করতে তাকিয়ে থাকে। আরেকটা কাজ তারা করে- তা হলো সাজেশন, এগুলো বেআইনী। প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে যে আইন রয়েছে তার বাস্তব প্রয়োগ কখনও হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, আইনটি আরও কড়াকড়িভাবে প্রয়োগের চেষ্টা করছি। প্রয়োজন হলে প্রশ্ন ফাঁস আইন সংশোধন করে আরও কার্যকর করব। তিনি বলেন, আইন নিয়েও সমস্যা আছে। ১৯৮৪ সালে যে আইন তৈরি করা হয়েছে তা সংশোধন করে সাজা কমানো হয়েছে। আইনটা আরও কড়াকড়িভাবে প্রয়োগের চেষ্টা করব, ভ্রাম্যমাণ আদালতকে ব্যবহার করা যায় কিনা দেখব। ফাঁস হয়েছে বলে প্রচার করলেও সাজা হবে। শিক্ষকরা পরীক্ষার হল থেকে এমসিকিউ প্রশ্ন ফাঁস করেন, এ বিষয়ে উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এটা খুবই অন্যায়। এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করছি। ভিজিলেন্স টিমকে বলে দিয়েছি, এ ধরনের কার্যকলাপে জড়িতদের ধরা হবে। পাবলিক পরীক্ষা পদ্ধতিতে ভবিষতে সংস্কার আনা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। জেএসসি পরীক্ষার সময়সূচি ॥ ১ নবেম্বর বাংলা প্রথমপত্র, ২ নবেম্বর বাংলা দ্বিতীয়পত্র, ৩ নবেম্বর ইংরেজী প্রথমপত্র, ৪ নবেম্বর ইংরেজী দ্বিতীয়পত্র, ৫ নবেম্বর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ৮ নবেম্বর গণিত/সাধারণ গণিত বিষয়ের পরীক্ষা হবে। এছাড়া ৯ নবেম্বর ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা, হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, বৌদ্ধধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, খ্রিস্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা। ১১ নবেম্বর বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ১২ নবেম্বর শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, ১৫ নবেম্বর বিজ্ঞান, ১৬ নবেম্বর কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা, ১৭ নবেম্বর কৃষি শিক্ষা, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, আরবি, সংস্কৃত, পালি এবং ১৮ নবেম্বর চারু ও কারুকলা বিষয়ের পরীক্ষা হবে। জেডিসি পরীক্ষার সময়সূচি ॥ ১ নবেম্বর কুরআন মাজীদ ও তাজবিদ, ২ নবেম্বর আকাইদ ও ফিকহ, ৩ নবেম্বর বাংলা প্রথমপত্র, ৪ নবেম্বর বাংলা দ্বিতীয়পত্র, ৫ নবেম্বর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ৮ নবেম্বর ইংরেজী প্রথমপত্র, ৯ নবেম্বর ইংরেজী দ্বিতীয়পত্র, ১১ নবেম্বর আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা হবে। ১২ নবেম্বর আরবি দ্বিতীয়পত্র, ১৪ নবেম্বর গণিত, ১৫ নবেম্বর কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা, শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, ১৬ নবেম্বর সামাজিক বিজ্ঞান (শুধু অনিয়মিত), বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ১৭ নবেম্বর বিজ্ঞান, বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (শুধু অনিয়মিত), ১৮ নবেম্বর কৃষি শিক্ষা, গার্হস্থ্য অর্থনীতি (শুধু অনিয়মিত) বিষয়ের পরীক্ষা রয়েছে।
×