ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নর্থবেঙ্গল সুগার মিলে আখ মাড়াই শুরু হচ্ছে শুক্রবার থেকে

প্রকাশিত: ০১:৩৫, ২৯ অক্টোবর ২০১৫

নর্থবেঙ্গল সুগার মিলে আখ মাড়াই শুরু  হচ্ছে শুক্রবার থেকে

সংবাদদাতা, নাটোর ॥ জেলার লালপুর উপজেলার নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে ২০১৫-১৬ আখ মাড়াই মৌসুম শুরু হচ্ছে শুক্রবার। এবার ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদিত আখের মধ্যে ১২০ মাড়াই দিবসে প্রায় ২লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই কর ১৯ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ২০১৫-২০১৬ মৌসুমের আখ মাড়াই উদ্বোধন করা হবে। ৩০ অক্টোবর নাটোর সদরের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল মিলের মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। মিল সূত্রে জানা যায়, নাটোর চিনিকল চলতি বছরে ৮০ দিন আখ মাড়াইয়ের দিন ধার্য করে ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৯ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। মিলটিতে গত মৌসুমে উৎপাদিত ছয় হাজার ৯৭১ মেট্রিক টন চিনির মধ্যে এখনো চার হাজার ৯৬৫ মেট্রিক টন চিনি অবিক্রীত রয়েছে। নাটোর চিনিকলের গোডাউনে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় বিগত চার বছরে উৎপাদিত চিনির মধ্যে ১৩ হাজার ৪৩ মেট্রিক টন চিনি পাবনা চিনিকলের গোডাউনে অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে। সব মিলিয়ে মিলটিতে অবিক্রীত চিনির পরিমান প্রায় ছয় হাজার ৩০৫ মেট্রিক টন। অপর দিকে, গত মৌসুমে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে গত কয়েক বছরের উৎপাদিত চিনির মধ্যে এখনো অবিক্রীত রয়েছে ১৬ হাজার ১৬০ মেট্রিক টন। মিলের গোডাউনে জায়গা না হওয়ায় মিলের মহাব্যবস্থাপকের বাসা, আনসার ব্যারাক, ট্রেনিং সেন্টার ও লেডিস ক্লাবসহ প্রায় সব ভবনেই রাখা হয়েছে এসব অবিক্রীত চিনি। দফায় দফায় মূল্য কমানোর পরও গত চার বছরে মিল দুটিতে চিনির মজুদ ২২ হাজার ৪৬৫ মেট্রিক টনে দাড়িয়েছে। বর্তমানে সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী মিল গেটে ৩৭হাজার টাকা টন হিসেবে ধরলে এর মূল দাঁড়ায় ৮১ কোটি ৬৪ লাখ পাঁচ হাজার ১১ টাকা। তবে গত বছর আখ সংকটের কারনে চিনি উৎপাদনে ব্যহৃত হয় মিল দুটিতে। সে দিক থেকে এবার মৌসুম শুরুর প্রথম থেকেই চিনি উৎপাদনে যাচ্ছে মিল দুটি। এদিকে গত রমজান মাসে চিনির মজুদ কমাতে প্যাকেট জাত করে চিনি বিক্রির সিদ্বান্ত নেয় বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনি শিল্প কর্পোরেশন। কিন্তু সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে আমদানীকৃত চিনির কাছে। সূত্রে জানা যায়, নাটোর চিনিকল চলতি বছরে ৮০ দিন আখ মাড়াইয়ের দিন ধার্য করে ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৯ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। গত কয়েক বছরের মতো এবারো মাড়াই শুরু হওয়ার এক মাস আগে থেকেই দু’টি মিল জোন এলাকায় ৫০৮টি অবৈধ পাওয়ার ক্রাশারে প্রায় ১ হাজার মেট্রিক টন করে আখ মাড়াই করে চলেছে। এ ছাড়া পাওয়ার ক্রাশারের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। চাষিরা নগদ টাকা না পাওয়ায় মিলে আখ না দিয়ে এসব পাওয়ার ক্রাশারে কম দামেই আখ বিক্রি করছেন। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারলেও মিল দু’টিকে এবারো কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হতে পারে। অন্য দিকে এবার উৎপাদিত চিনি কোথায় রাখা হবে তা নিয়েও চিন্তিত দু’টি মিল কর্তৃপক্ষ। তবে নাটোর সুগার মিলের জিএম (কৃষি) মো: আখতার হোসেন বলেছেন, তাদের মিলের উৎপাদিত চিনি রাখতে কোনো সমস্যা হবে না। উৎপাদনের পাশাপাশি কিছু চিনি বিক্রিও হচ্ছে। সেহেতু সমস্যা হবে না বলেই ধারণা করছেন তিনি। অপরদিকে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এস এম আব্দুল আজিজ বলেন, আজ শুক্রবার নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ চলতি বছরের আখ মাড়াই মৌসুমের শুভ উদ্বোধন করার পর সবার সহযোগিতা নিয়ে আখ সংকট মোকাবিলায় মিল এলাকার ৩১৭টি অবৈধ পাওয়ার ক্রাশার বন্ধের জন্য অভিযান চালানো হবে। নাটোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আমিনুল হক বলেন, সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া চিনি শিল্প বাংলাদেশে টিকতে পারবে না। দেশে শীতের এই মৌসুমে এক কেজি পুঁইশাকের দাম ৫০ টাকা, অথচ এক কেজি চিনির দাম ৩৭ টাকা। তারপরও চিনি বিক্রি না হওয়ায় মাঝে মাঝেই চিনির দাম কমানো হচ্ছে। চিনির দাম না কমিয়ে সরকার বিদেশ থেকে আমদানি বন্ধ করলেই দেশের বৃহত্তম এই চিনি শিল্প টিকে যেতে পারে। অন্যথায় এই শিল্পের ধ্বংস অনিবার্য।
×