ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দেশের মানুষের খাদ্যশক্তির ৭১ শতাংশ পূরণ করে ভাত

প্রকাশিত: ০০:৫৩, ২৯ অক্টোবর ২০১৫

দেশের মানুষের খাদ্যশক্তির ৭১ শতাংশ পূরণ করে ভাত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিভিন্ন খাতের মধ্যে কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ সবচাইতে কম। গোটা দেশের মধ্যে বরিশাল বিভাগে কৃষিতে নারীর সরাসরি অংশগ্রহণ সবচেয়ে বেশি, তাও মাত্র ৩১ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে, মাত্র ১১ শতাংশ)। আবার পুষ্টির জন্য ১৬ কোটি মানুষ ভাতের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল। দেশের মানুষের খাদ্যশক্তির (ক্যালরী) ৭১ শতাংশ এককভাবে পূরণ করে ভাত। দেহের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন, জিংক ও আয়রনের যথাক্রমে ৫১, ৬২ ও ৪২ শতাংশ পূরণ করা হয় ভাতের মাধ্যমে। আজ বুধবার রাজধানীর শেরো বাংলা নগরের সেচ ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। কৃষিতে নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থান বাড়াতে এবং কৃষিজাত খাদ্যের মাধ্যমে নারী-শিশুর উন্নত পুষ্টি নিশ্চিত করতে একটি নতুন প্রকল্প শুরু করেছে সরকার। ‘এগ্রিকালচার টুওয়ার্ড ইমপ্রোভড নিউট্রিশন অ্যান্ড উইমেন’স এমপাওয়ারমেন্ট’ শীর্ষক এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষিবিষয়ক নীতি সহায়তা ইউনিট (এপিএসইউ)। সহযোগিতা করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। প্রাথমিকভাবে দেশের কৃষি উপযোগী গ্রামীণ ১৬টি উপজেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় এসব উপজেলার কৃষক পরিবারের নারীদের প্রশিক্ষণ, ঋণ ও পুষ্টিবিষয়ক শিক্ষা প্রদান করা হবে। এছাড়া বিতরণ করা হবে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ কৃষিবীজ। সেচ ভবনে পাইলট প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। এসময় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, ইউএসএআইডি-বাংলাদেশ মিশনের পরিচালক জেনিনা জেরুজালস্কি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, এপিএসইউ মহাপরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের পরিচালক মেরেডিথ জ্যাকসন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অর্থায়ন করছে ইউএসএআইডি। প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মতিয়া চৌধুরী বলেন, অভ্যন্তরীণ কৃষি দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের খাদ্যের জোগান দিচ্ছে। তবে কৃষিতে নারীর ক্ষমতায়ন না হওয়ায় দেশে এখনও ব্যাপক মাত্রায় পুষ্টিসমস্যা রয়ে গেছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পর সবার জন্য পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ খাদ্য নিশ্চিত করা এখন সরকারের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ। জমির মালিকানা না থাকায় কৃষিতে নারীর সরাসরি অংশগ্রহণ কম। বর্গা চাষে নারীর অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। আবার অশিক্ষাও পুষ্টির গুরুত্ব বুঝার অন্তরায়। তাই মাধ্যমিক পর্যন্ত নারীদের শিক্ষা অবৈতনিক করেছে ও বিনামূল্যে বই দিচ্ছে। আর কৃষি ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৩৬ শতাংশ অপুষ্টিতে ভুগছে। গর্ভবতী মা ও নবজাতক শিশুদের পুষ্টির ব্যাপারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের সচেতন করতে হবে। তাদের দুরবস্থার জন্য সমাজকে দোষারোপ করে লাভ নেই। পুষ্টি বিষয়ে তাদের সচেতন ও শিক্ষিত করে তোলাই হবে আসল কাজ। এসময় তিনি গবেষণার মাধ্যমে উন্নত পুষ্টিমান সমৃদ্ধ ধানবীজ ও অন্যান্য কৃষিখাদ্য উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। অনুষ্ঠানে অর্থপ্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রাচীনকালে কবির প্রত্যাশা ছিল, ‘আমার সন্তান যেনো থাকে দুধে-ভাতে।’ আমরা আর ভুখা জাতি নই। ভাতের অভাব আমরা দূর করেছি। এবার নজর দিতে হবে পুষ্টিসমৃদ্ধ দুধের দিকে। অনুষ্ঠানের শুরুতে ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইফ্রি) প্রধান কর্মকর্তা আকতার আহমেদ প্রকল্পটির লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও বাস্তবায়নের বিভিন্ন ধাপ তুলে ধরেন। ইফ্রি এই প্রকল্পে কারিগরি সহযোগিতা করবে। আকতার আহমেদ বলেন, প্রকল্পের মাধ্যমে ভাত ছাড়াও কম খরচে পুষ্টিমান সমৃদ্ধ অন্যান্য কৃষিজাত খাবার (তেলবীজ, ডাল, পোল্ট্রি, পশু ইত্যাদি) উৎপাদন ও সেগুলো খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
×