ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঘরোয়ার মালিক পলাতক ॥ কর্মচারীকে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যার অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৮:৪২, ২৯ অক্টোবর ২০১৫

ঘরোয়ার মালিক পলাতক ॥ কর্মচারীকে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কর্মচারীকে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে মতিঝিলের ‘ঘরোয়া’ হোটেলের মালিকের বিরুদ্ধে। হোটেল রিয়াদ (১৭)। এ ঘটনায় হোটেল ম্যানেজার শফিককে আটক করা হলেও মালিক আরিফুল ইসলাম সোহেল পলাতক। এ ব্যাপারে ওয়ারী থানায় মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার মধ্যরাতে ওয়ারীর ৭৩ নম্বর স্বামীবাগে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রিয়াদ ও তাঁর সহকর্মীরা ওখানকার মিতালী স্কুলের একটি নির্মাণাধীন বাসায় এক সঙ্গে থাকতেন। ওখানেই রিয়াদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। রিয়াদের বড় ভাই রিপন জানান, হোটেল থেকে ২০/২২ দিন আগে দেড় হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন চুরি হয়। এ অভিযোগে রিয়াদকে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন চালিয়ে আসছিলেন সোহেল। মঙ্গলবার বিকেলে হোটেলের মধ্যে বেঁধে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। পরে রাত বারোটার দিকে হোটেল মালিক তার গাড়িতে করে রিয়াদকে স্বামীবাগের ওই মেসে নিয়ে যায়। সেখানে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের পর তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওয়ারী থানার এসআই আবদুল খালেক জানান, মেসের স্টাফরা পুলিশকে জানিয়েছেন মোবাইল চুরির অভিযোগে বিয়াদকে পা বেঁধে নির্যাতনের এক পর্যায়ে সোহেল নিজেই তাকে গুলি করে। অথচ মঙ্গলবার রাত দুটোর দিকে রিয়াদকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে পুলিশকে বলা হয়, ছিনতাইকারীর গুলিতে রিয়াদ নিহত হয়েছে। রিয়াদের ভাইয়ের কথা ॥ চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের মফিজুল ইসলামের ছেলে রিয়াদ সাড়ে তিন বছর আগে মতিঝিলের ঘরোয়া রেস্তরাঁয় কাজ নেন। অন্য কর্মীদের সঙ্গে স্বামীবাগে হোটেল মালিক সোহেলের একটি নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলায় রিয়াদ থাকত। রিয়াদের ভাই রিপনও এক সময় ঘরোয়ায় কাজ করতেন। এখন তিনি ফকিরাপুলের ‘ভাই ভাই হালিম সুইটস’ নামে অন্য একটি রেস্তরাঁয় কাজ করেন। মালিকের লোকজন রিয়াদকে মারধর করছে খবর পেয়ে রাত বারোটার দিকে রিপন স্বামীবাগের ওই বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে দোতলায় ভাইয়ের চিৎকারও শুনতে পান। বলেন, অন্য স্টাফরা আমারে বলছে, ‘মালিক তারে মারতেছে। তুই যাইতে পারবি না।’ আমি বার বার ঢুকতে চাইছি। তখন আমারেও ধইরা নিতে চাইছে। একজন বলল- ‘তোরেও মারব, তুই চইলা যা।’ ভয়ে আমি নিচে গিয়া দাঁড়ায়া ছিলাম।’ রিপন বলছেন, কিছুক্ষণ পর ঘরোয়ার কয়েক কর্মীকে রক্তাক্ত অবস্থায় রিয়াদকে বের করে নিয়ে যেতে দেখি। তারা একটি গাড়িতে করে চলে যায়। অন্যরা আমারে বলল, ‘মালিক তোর ভাইরে মুখের কাছে গুলি করছে, তাই হাসপাতালে নিয়া গেছে’। এরপর রিপন নিজেও ঢাকা মেডিক্যালে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, ঘরোয়ার কর্মচারী জসিম, রাজু ও মালিক সোহেল হাসপাতালে এসে ছিনতাইকারীর গুলিতে রিয়াদের মৃত্যুর কথা বলে কেটে পড়েছে। মতিঝিলের ‘ঘরোয়া হোটেল এ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’ বুধবার সারাদিন বন্ধ দেখা যায়। ‘ছিনতাইয়ের গল্প’ ॥ ঢামেক হাসপাতাল ফাঁড়ি পুলিশের পরিদর্শক মোজাম্মেল হক ভোররাতে সাংবাদিকদের জানান, হোটেলের দুই লাখ বিশ হাজার টাকা নিয়ে গভীর রাতে মতিঝিল থেকে অটোরিক্সায় করে শান্তিনগরে মালিকের বাসায় যাওয়ার পথে ছিনতাইকারীরা গুলি করলে তা রিয়াদের মুখে লাগে বলে সহকর্মীরা তাদের জানিয়েছেন। কিন্তু তারা যে ‘মিথ্যা’ বলেছে, পুলিশের কাছে তা পরে স্পষ্ট হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ ভোররাতে স্বামীবাগের ওই বাড়িতে যায় এবং সেখানে বসানো সিসিটিভির ছবি সংগ্রহ করে। সেখান থেকে রক্তমাখা একটি কম্বল ও একটি কালো টি শার্টসহ কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে বলে পুলিশের ওয়ারী জোনের সহকারী কমিশনার নুরুল আমীন জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা ফুটেজ দেখে অপরাধীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। শান্তিনগরে ঘরোয়া হোটেল মালিক সোহেলের বাসাতেও খোঁজ নেয়া হয়েছে। তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।’
×