ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মশালায় জানালেন ও. কাদের

ঢাকা ঘিরে তিন রিং রোড ও ৬ এক্সপ্রেসওয়ে হবে

প্রকাশিত: ০৭:৩৭, ২৯ অক্টোবর ২০১৫

ঢাকা ঘিরে তিন রিং রোড ও ৬ এক্সপ্রেসওয়ে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর যানজট নিরসন ও উন্নত যোগাযোগ স্থাপনে মেট্রোরেলের জন্য পাঁচটি রুট, দুটি বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটসহ (বিআরটি) ঢাকা মহানগরীকে ঘিরে তিনটি রিং রোড ও ছয়টি এক্সপ্রেস ওয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। বুধবার নগরীর সিরডাপ মিলনায়তনে এসটিপি’র সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একথা জানান। আরএসটিপি’র প্রকল্পসমূহ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, স্বল্পমেয়াদে মেগা প্রকল্পসমূহ ২০২০ সালের মধ্যে, মধ্যমেয়াদে ২০২৫ সালের মধ্যে এবং দীর্ঘমেয়াদে ২০৩৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হলে রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলোতে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। কমবে যানজট ও ভোগান্তি। মন্ত্রী বলেন, জাইকার সহায়তায় আরএসটিপি সংশোধনের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। মন্ত্রী জানান, মেট্রোরেল প্রকল্পের উত্তরা থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত আটটি প্যাকেজের মধ্যে ছয়টির দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে মেট্রোরেলের দৃশ্যমান কাজ শুরু হবে। ঢাকা মহানগরীর সকল সড়ক উত্তর ও দক্ষিণে হলেও পূর্ব-পশ্চিমের যোগোযোগ বাড়াতে মেট্রোরেল রুট-৫ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ রুট গাবতলী থেকে শুরু হয়ে মিরপুর-১, মিরপুর-১৪ থেকে কামাল আতাতুর্ক এ্যাভিনিউ, মাদানী এ্যাভিনিউ, নতুন বাজার হয়ে ভাটারায় গিয়ে শেষ হবে। এ রুটের কামাল আতাতুর্ক এ্যাভিনিউ থেকে ভাটারা পর্যন্ত রুটটি হবে আন্ডারগ্রাউন্ড। রাজধানীর যানজট নিরসনে সরকার অগ্রাধিকারভিত্তিক বেশকিছু প্রকল্প গ্রহণ করে। ইতোমধ্যে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, কুড়িল ফ্লাইওভার, বিজয়স্বরণী ওভারপাস, খিলগাঁও ও মহাখালী ফ্লাইওভার, বনানী ওভারপাসসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভারের কাজ চলমান। এ প্রকল্পের ৬০ ভাগের বেশি কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এতে সুফলও মিলেছে যথেষ্ট। এর বাইরেও অগ্রাধিকারভিত্তিক বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। মন্ত্রী আরও জানান, মেট্রোরেল রুট-১ হবে শাহজালাল (রহ) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে কুড়িল, প্রগতি সরণি ও রামপুরা হয়ে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে শেষ হবে। মন্ত্রী বলেন, ঢাকা মহানগরী ও পার্শ¦বর্তী জেলাসমূহের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং উন্নয়ন বান্ধব, আধুনিক ও সাশ্রয়ী পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ২০০৫ সালে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় প্রণয়ন করা হয় দীর্ঘমেয়াদী স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান বা এসটিপি। ইতোমধ্যে প্রায় ১০ বছর পেরিয়েছে। বেড়েছে যানবাহন। বেড়েছে জনসংখ্যা। পাশাপাশি উন্নয়ন কর্মকা- বৃদ্ধি পাওয়ায় জনগণের চলাচলও বেড়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ঢাকার সঙ্গে ডিটিসিএ’র আওতাধীন পার্শ্ববর্তী গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলাসমূহের জনগণকে উন্নয়নযাত্রায় সঙ্গী করতে প্রয়োজন আরও নিবিড় ও সমন্বিত পরিবহন পরিকল্পনা। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে একটি উন্নত দেশের স্বপ্ন নিয়ে এসটিপি সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার। জাইকা’র সহায়তায় এসটিপি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। দেশ-বিদেশের পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা এবং বিদ্যমান আইনী কাঠামো পর্যালোচনার মধ্যদিয়ে এসটিপি সংশোধনের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে জাপানের সহায়তায় মেট্রোরেল-৬ বাস্তবায়নের কাজ আমরা এগিয়ে নিচ্ছি। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য প্রফেসর জামিলুর রেজা চৌধুরী। কর্মশালাটি যৌথভাবে আয়োজন করে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। কর্মশালায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক, বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম, বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান, ডিটিসিএ’র নির্বাহী পরিচালক মোঃ কায়কোবাদ হোসেন, জাইকার বাংলাদেশের প্রধান তাকাও টোডা, বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মাজহারুল হকসহ জাপানের কনস্যুলার উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বিদেশী কূটনীতিকদের নিরাপত্তায় সরকার এবং দায়িত্বশীল সকল প্রতিষ্ঠান সদা তৎপর ও আন্তরিক। তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত জাপান কনস্যুলার এবং জাইকার প্রতিনিধিদের আশ্বস্ত করে বলেন, কিছু ঘটনা ঘটেছে, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এ ছাড়া দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব স্বাভাবিক। আপনারা সম্পূর্ণ নিরাপত্তার মধ্যে আছেন। তিনি বলেন, সামাজিক সূচক, অর্থনৈতিক সূচকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকেও উন্নত। কিন্তু আমাদের রাজধানী হিসেবে ঢাকা এখনও পরিকল্পিত নগরী হতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, জনজট, জলজট ও যানজট- এই তিন সমস্যায় ঢাকা আক্রান্ত এবং জর্জরিত। এই অবস্থান অবসান করতেই এসটিপি গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে ফার্মগেট অংশের কাজ আগামী ২০১৯ সাল এবং ফার্মগেট থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের কাজ ২০২০ সালের মধ্যে শেষ হবে। তিনি বলেন, শুধু এ কয়টা (মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে) করেই যানজটের সমাধান পাওয়া যাবে না। আমি জাপানে আরও দুটি এমআরটি লাইনের প্রস্তাব নিয়ে গেছি। একটি এমআরটি লাইন-১, আরেকটি এমআরটি লাইন-৫। তারা (জাইকা) পজিটিভলি রেসপন্স করেছে। তারা বলেছে, ফিজিবিলিটি স্টাডির (সম্ভাব্যতা যাচাই) কাজ প্রক্রিয়াধীন। যত শীঘ্রই সম্ভব তারা কাজ শুরু করবে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি)-১ এর দৈর্ঘ্য হবে ২৮ কিলোমিটার। পূর্বাচলও এর সঙ্গে যুক্ত হবে। অপরদিকে এমআরটি-৫-এর দৈর্ঘ্য হবে ১৩ কিলোমিটার। ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ কতটুকু, আমাদের টেন্ডার প্রক্রিয়া কতটা স্বচ্ছ, এগুলো নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে। আরেকটি বিশেষ প্রস্তাব নিয়ে গেছিÑ যমুনা নদীর নিচ দিয়ে ১৩ কিলোমিটারের মতো একটি টানেল নির্মাণ করা। যেটা এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে কানেকটিভিটিতে ভূমিকা রাখবে। আমাদের বিবিআইএন প্রজেক্টও (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল সড়ক যোগাযোগ চুক্তি) সম্প্রসারণে সুবিধা হবে। তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে আমাদের উত্তর জনপদের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার কানেকটিভিটি আরও সুদৃঢ় করতে পারব। সেজন্য এ টানেলটির প্রস্তাব আমরা তাদের দিয়েছি। তারা বলেছে, এটার একটা স্টাডি প্রয়োজন, কারণ এটা অনেক দীর্ঘ টানেল।
×