ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জায়েদ জুলহাস

নীলার পথচলা

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৯ অক্টোবর ২০১৫

নীলার পথচলা

ছোটবেলা থেকেই পারিবারিক আবহটাই ছিল অন্য রকমের নীলার জন্য। বাবা মারফতী গানের বিশাল ভক্ত। নিজে গান করেন। বাড়িতে প্রায়ই গানের আসর বসত। সেখানে গান গাইতেন নীলা। একবার বাড়িতেই আয়োজন করা হয় মঞ্চ নাটকের। সেখানে অভিনয় করে নিজের দ্যুতি ছড়ায় নীলা। মামার অনুরোধে শুরু করেন মঞ্চ নাটকে অভিনয়। তখন সবে ক্লাস এইটের ছাত্রী। এরপর অনেক মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন। পথনাটকে অভিনয় করেছেন। টেলিভিশনে প্রথম অভিনয় ২০০৯ সালে। কাওনাইন সৌরভের পরিচালনায় প্রথম ছোট পর্দায় নাম লেখান নীলা। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক ‘দুধখালীর টাইগার’ নাটকে অভিনয় করেন। সেখানে আহমেদ রুবেলের মতো গুণী অভিনেতার সাথে অভিনয় তাঁর ক্যারিয়ারে সূচনাটাকে একবারে খারাপ করেনি। এরপর গত পাঁচ বছরে বিশটির অধিক নাটকে অভিনয় নীলার আত্মবিশ্বাসে বাড়তি মাত্রা যুক্ত করেছে। পরিচালক আবু সুফিয়ানের সাথে দুটি ধারাবাহিকে কাজ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ‘টমেটো ক্যাচাপ’ এবং ‘আজব শহরে’। রুলিন রহমানের ধারাবাহিক ‘ছায়া নারী এবং কায়া নারী’ এবং ‘বিশাখা’-এ। পরিচালক জুয়েল মাহমুদের পরিচালনায় ধারাবাহিক নাটক ‘কুয়াশার ফুল’ এবং টেলিফিল্ম ‘হয়তো’ । এই দুটো কাজই প্রচারিত হয় চ্যানেল আইয়ে। গুণী পরিচালক আবুল হায়াতের সঙ্গে ক্যামেরার পেছনে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন এবং একই সাথে অভিনয় করেছেন ‘পরীর কথা’, ‘জানালায়’। সামনে প্রচারিত হবে ধারাবাহিক নাটক ‘আকাশের উপরে আকাশ’। তৌকির আহমেদের পরিচালনায় এবং বিপাশা হায়াতের রচনায় অভিনয় করেছেন এক ঘণ্টার খ- নাটক ‘তাহাদের একদিন’। সর্বশেষ চিত্র পরিচালক এস এ হক অলিকের ‘এক পৃথিবী প্রেম’ সিনেমায় একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শুধু অভিনয়ই নয়, বরং পাশাপাশি বেশ কয়েকজন গুণী পরিচালকের সাথে সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন নীলা। ক্যামেরার পেছনে কাজ করাটাকে ভীষণ চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন তিনি। এ ব্যাপারে নীলার অভিমত, ‘আসলে ক্যামেরার সামনে অথবা পেছনে বলে কোন কথা নেই। যে কোন ক্রিয়েটিভ কাজই অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং এবং আমি এই চ্যালেঞ্জটা নিতে পছন্দ করি।’ একই সাথে মঞ্চে সমান তালে অভিনয় করছেন নীলা। বেশ কয়েকটি নাটকের দলে কাজ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে নাট্যশৈলী, তারেক মাসুদ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি গ্রুপে। এছাড়াও শিল্পকলার আয়োজনে নানা সময়ে নাটক এবং অভিনয়ের উপরে নানা কর্মাশালায় অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। নীলা অভিনীত নাটকের সংখ্যা একবারে কম নয়। এর মধ্যে রয়েছে নাট্যকার সেলিম আল দ্বীনের ‘বাসন’, হুমায়ূন আহমেদের ‘হিমু রিমান্ড ডে’ অবলম্বনে নাটক ‘আয়না মজিদ’ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক ‘মুক্তধারা’সহ কিছু উল্লেখযোগ্য নাটক। পথনাটক করেছেন এস এম সোলায়মানের ‘ক্ষ্যাপা পাগলার প্যাচাল’, ‘ট্রাংক রহস্য’, ‘বোবা মিনার’সহ কিছু নাটকে। লিটু করিমের পরিচালনায় কিছুদিন আগে প্রচারিত হয়েছে খ- নাটক ‘এসএমএস মিসটেক’-এ। অভিনয়ের সাথে সাথে পড়াশোনাটা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে মিডিয়া নাটকে অভিনয় করলেও ভুলে যাননি নিজের রুট মঞ্চকে। শিল্পকলার রেপার্টরীতে কয়েক উদ্যমী তরুণ-তরুণীর সাথে তিনিও কাজ করছেন তাদের নতুন নাটক ‘নননপুরের মেলায় কমলা সুন্দরী ও একটি বাঘ আসে’। রিহার্সেল চলছে। রিহার্সেল থাকলে সেখানে সবার প্রথমে যাওয়া চাই নীলার। আগামী বছরের শুরুতে মঞ্চে আসছে প্রযোজনাটি। নাটকটির দুটি চরিত্রে অভিনয় করছেন নীলা। ভবিষ্যতে পরিচালনার স্বপ্ন আছে এই অভিনেত্রীর। ও হ্যাঁ, নিজেকে অভিনেত্রী পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তিনি। তবে প্রথমে নাটক নির্মাণ করতে চান এরপর বড় পর্দা। তবে সব কিছু শিখে এরপর কাজে নামতে চান তিনি। তবে সব কিছুর উপরে স্থান দিতে চান অভিনয়কে। অবসর সময়ে লালনের গান করেন। সাঁইজীর একজন একনিষ্ঠ ভক্ত নীলা। লালনের গানের আধ্যাত্মিকতাবাদ তার প্রিয় বিষয়। ঘুরে বেড়াতে ভালবাসেন। সময় সুযোগ পেলেই বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে উঠতে ভালবাসেন। সারা জীবন নাটকের মানুষ হয়ে, দর্শকের ভালবাসা নিয়ে বাঁচতে চান এটাই তার প্রত্যাশা।
×