ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন বোতলে পুরনো মদ আশিকী

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৯ অক্টোবর ২০১৫

নতুন বোতলে পুরনো মদ আশিকী

গত ঈদ-উল-আযহায় বাংলাদেশের ৯৪টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনা ও যৌথ নির্মাণের চলচ্চিত্র ‘আশিকী’। তেলেগু সিনেমা ‘ইশক’ এর আদলে নির্মিত চলচ্চিত্র। যদিও এর আগে এদেশে এই সিনেমার আদলে ২০১৪ সালে ‘লাভ স্টেশন’ নামে একটি সিনেমা নির্মাণ করা হয়। তাই এটি খুব স্পষ্ট করে বলা যায় এদেশের দর্শকদের কাছে এটা নতুন কোন গল্প নয়- ‘শুধু নতুন বোতলে পুরনো মদ’। তবে ‘ইশক’ এর আদলে নির্মিত হলেও এই সিনেমায় অন্য অনেক হিন্দি সিনেমার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’ এর ট্রেনের কাহিনীর সঙ্গে মিল রেখে গল্প বলা। অনেক ক্ষেত্রে আবহ সঙ্গীত হিসেবে এই সিনেমার বাজনা ব্যবহার। এছাড়া গানের ক্ষেত্রে, করিওগ্রাফির ক্ষেত্রে অন্যান্য হিন্দী সিনেমার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। সুতরাং মৌলিকত্বের দিক দিয়ে সিনেমাটি নতুন কিছু দিতে পেরেছি বলে মনে হয় নাই। সিনেমাটির গল্পের এই দুর্বলতা সিনেমাটার মেকিং নিয়ে আশাবাদিতার কারণ ছিল না বরং মেকিং দুর্বলতাও লক্ষণীয়। শ্রুতির ভাই যখন মায়ের সঙ্গে গাড়িতে বসে কথা বলে তখন গতিহীন ক্যামেরায় এক ফ্রেমে দৃশ্যটা শেষ করা আমার কাছে দুর্বলতা বলে মনে হয়েছে। কিছু শটে দেখা গেছে ফ্রেমে জ্বলে গেছে, কালার গ্রেডের কাজও খুব বেশি ভাল হয়নি, গ্রাফিক্সের কিছু কাজ দেখান হয়েছে সেক্ষেত্রেও সুনিপুণতা লক্ষণীয় ছিল না। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সিনেমা মেকিংয়ের প্রযুক্তিগত দিকগুলো সহজ হয়ে যাওয়ায় ফ্রেমের চাকচিক্যতাই সিনেমার মূল বিষয় না। চলচ্চিত্রবোদ্ধারা বারংবার বলছেন সিনেমার ক্ষেত্রে এখন গল্পের পিছনে সময় ব্যবহারের সময় এসেছে। গল্পের মৌলিকত্বই সিনেমার প্রধান আবেদন। এবার আশা যাক যৌথ প্রযোজনা ও নির্মাণের বিষয়ে। সিনেমায় যৌথ প্রযোজনা বা নির্মাণ কেন? বিশেষ করে যে দুটো দেশ যৌথ প্রযোজনা বা নির্মাণ করেন তাদের মধ্যে চলচ্চিত্র বিষয়ক সবকিছু ভাগাভাগি করে নেওয়া, সেটা প্রযুক্তিগত ও অপ্রযুক্তিগত দুই-ই। যা দুই দেশের চলচ্চিত্রের উৎকর্ষতা সাধন করবে। অথচ এই যৌথ প্রযোজনা বা নির্মাণের ক্ষেত্রে দেখা যায় গল্প বলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছুতে পশ্চিমবঙ্গের একচ্ছত্র আধিপত্য। তাহলে আর যৌথ প্রযোজনা কেন? আমাদের যারা যৌথ প্রযোজনা বা নির্মাণ করতে চায় তারা সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের সিনেমাতে বিনিয়োগ করতে পারে বা আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প ধ্বংস করে দিয়ে ভারতীয় বাংলা সিনেমা নির্মাণ করলেই হয়। ‘আশিকী’ নিয়ে কথা বলতে গেলে এই কথা এড়িয়ে যাওয়া এক ধরনের পাপ। ‘আশিকী’ সিনেমাটিতে ভাষার ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভারতীয় বাংলা, হিন্দী ও ইংরেজীর মিশেলে ছিল জগাখিচুড়ি। এপার বাংলা এড়িয়ে ওপার বাংলাটাকে না হয় মেনে নিলাম, লোকেশনের কারণে ইংরেজীটাকে ও পাশ কিন্তু হিন্দী কেন? ‘প্রেমী ও প্রেমী’ নামটা বাদ দিয়ে ‘আশিকী’ রাখা কেন? যদি বলেন, ব্যবসার জন্য তাহলে বলা যায় যে এটা ভুল ধারণা। কারণ এর মধ্য দিয়ে হিন্দীর মার্কেট তৈরি হচ্ছে। আর অন্যের জন্য মার্কেট তৈরি করে সে মার্কেটে নিজে ব্যবসা করা যায় না। সর্বোপরি ‘আশিকী’ একটি যৌথ প্রযোজনার মোড়কে ভারতীয় পণ্য। তাই এই সিনেমা নিয়ে আশাবাদিতার কারণ নেই। নিজেকে বা নিজের দেশকে ছোট করে যৌথ প্রযোজনা না স্বতন্ত্র প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করলেও সেই মার্কেটে অন্য কেউ ব্যবসা করবে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সাধারন মানুষের দাবী তারা যেন নিজস্ব সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক হয়ে সিনেমা নির্মান করেন। তাতে তারাই উপকৃত হবেন সবচেয়ে বেশি। সায়েম খান
×