ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জলাভূমি রক্ষায়

প্রকাশিত: ০৪:১২, ২৯ অক্টোবর ২০১৫

জলাভূমি রক্ষায়

কামরুল হাসান আদিম সমাজে দলবদ্ধভাবে বসবাস করত মানুষ। খাদ্য সঙ্কট দেখা দিলে স্থান পরিবর্তন করতে হতো। তখন থেকেই বিদ্যমান ছিল দলগত দখল প্রক্রিয়া। দিনবদলের পথ পরিক্রমায় পিতৃতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছিল নারী দখল। পরবর্তীকালে রাজ্য দখল, দেশ দখল, রাজপথ দখল, ভূমি দখল কত কিনা আমরা দেখেছি। নির্বাচন এলে ভোটকেন্দ্র দখল, টেন্ডার দখল, ফুটপাথ দখল, খাল-বিল, নদী-নালা দখল, বন-জঙ্গল দখল। পাহাড়ও রেহাই পাচ্ছে না দখলকারীদের হাত থেকে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ১৯৮৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী এদেশে জলাভূমির পরিমাণ ছিল ২১ লাখ ৫০ হাজার একর। অন্যদিকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশে জলাভূমির পরিমাণ ৫ লাখ ৭৪ হাজার ৩৫৩ একর। এ থেকে বোঝা যায় ব্যাপক জলাভূমি ভূমিদস্যুরা দখল করে নিয়েছে। আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য ক্ষুধার্ত, লিঙ্গবৈষম্য জলবায়ু রক্ষাসহ ১৭টি বিষয়ে এসডিজি গৃহীত হয়েছে। এসডিজির বাস্তবায়ন ঘটাতে গেলে জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রাকৃতিক জলাভূমি রক্ষার কোন বিকল্প নেই। অথচ দখল হচ্ছে জলাভূমি। সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া ইউনিয়নের নলছিয়া মৌজার অন্তর্গত সোনাইডাঙ্গা বিল। যার পরিমাণ ২৮.৩৪ একর। যা জনৈক জোতদার দুর্নীতির মাধ্যমে দখল করে নেয়। ১৯৮৪ সালের পরবর্তী সময় থেকে স্থানীয় জেলে সম্প্রদায়সহ পার্শ্ববর্তী লোকজনের বিলে উম্মুক্ত মাছধরা তারা বন্ধ করে দেয়। ফলে জেলে সম্প্রদায় মানবেতর জীবনযাপন করে। ২০০৮ সালে রায়গঞ্জ উপজেলা ভূমিহীন সমিতি রেকর্ড বইয়ের পাতা টেম্পারিংয়ের বিষয় অবগত হওয়ার পর পুনরায় সম্মিলিতভাবে বিল উম্মুক্ত ঘোষণা করে। ফলে স্থানীয় ৩০০ জেলে পরিবারের জীবিকার পথ তৈরি হয়। এ নিয়ে জোতদারদের সঙ্গে ভূমিহীন সমিতির প্রতিনিয়ত সংঘাত লেগেই রয়েছে। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভূমি রক্ষায় চোখে পড়ার মতো কোন পদক্ষেপ নেই। প্রকৃত অর্থে সারা বাংলাদেশের ভূমি দখলের চিত্র একই। বাংলাদেশের প্রায় ৩০ লক্ষাধিক মামলা চলমান। এর ৯০ ভাগই ভূমি সংক্রান্ত। জবরদখলকারীরা ক্ষমতা ও অর্থের জোরে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। কাক্সিক্ষত দারিদ্র্যবিমোচন হচ্ছে না। ফলে এমডিজি বাস্তবায়নে ঘাটতি থেকেছে। এমন অবস্থায় আমাদের দেশে জলাভূমি রক্ষায় সরকারের পদক্ষেপ জরুরী। মালয়েশিয়ার মতো ভূমি মালিকানার ধরনও পরিবর্তন করা প্রয়োজন বলে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। নইলে কৃষিজমি শূন্যের কোঠায় নেমে আসতে পারে। ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যেমন অর্জন হবে, তেমনি দারিদ্র্যও দূর করা সম্ভব। কালিহাতী, টাঙ্গাইল থেকে
×