ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এবারের বিষয় ॥ দখল;###;দখল রোধে ভূমি কার্ড

সমাজ ভাবনা

প্রকাশিত: ০৪:১১, ২৯ অক্টোবর ২০১৫

সমাজ ভাবনা

মোঃ সেলিম মিয়া আমাদের দেশে বিভিন্ন পর্যায়ের জমি বিচিত্র উপায়ে আশঙ্কাজনক হারে বেদখল হচ্ছে নির্বিঘেœ। সরকার হারাচ্ছে বিপুল অংকের রাজস্ব। সৃষ্টি হচ্ছে জনদুর্ভোগ। এ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। প্রতিরোধে ভূমি কার্ড আবশ্যক। বাংলাদেশে প্রথম ভূমি জরিপ শুরু“হয় কক্সবাজারের রামু থানায়, ১৮৯০ সালে। ৫০ বছরে শেষ হয় দিনাজপুর জেলায় ১৯৪০ সালে। এটা সিএস/৪০ সালের রেকর্ড বলে পরিচিত। ওই জরিপই সঠিক। জনসংখ্যাও ছিল স্বল্প। জমির প্রতি ছিল না তেমন আগ্রহ। পরবর্তী রেকর্ডগুলো ক্রটিযুক্ত হওয়ায় এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে জমি হয়ে ওঠে লোভনীয়। আবির্ভাব হতে থাকে দখলবাজ, ভূমিদস্যু, বন-পাহাড়খেকোর। শুরু হয় জবরদখল। যা ভয়াবহভাবে বহমান। আমাদের দেশে বন-পাহাড়, খনি-সৈকত ভূমি, কৃষি-অকৃষি খাসজমি ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জমিসহ, ভিন্ন শ্রেণীর জমি কোথায় কি অবস্থায় আছে তার সঠিক তথ্য ও জাবাবদিহির অভাব। ফলে দখলবাজ, ভূমিদস্যু, ভূমিখেকো ও প্রভাবশালীরা ক্ষেত্র বিশেষে নিষেধাজ্ঞা ও দায়িত্বশীলদের তোয়াক্কা না করে পাহাড়-বন কেটে এবং পুড়িয়ে, নদ-নদীর অববাহিকা, খাল-বিল, জলাশয়, খনি ও সৈকত এলাকা অবৈধ দখলে নিচ্ছে। ভূমিদস্যু ও দখলবাজরা শহরভিত্তিক খাল-বিল, নদী-নালা, দীঘি-পুকুর ও জলাশয় ভরাট করে, মার্কেট, ফুটপাথ, পার্ক আওতায় নিয়ে সৃষ্টি করছে জনদুর্ভোগ। সওজ, ওয়াক্ফ, বাউবো, অর্পিত, রেলওয়ে, চিড়িয়াখানা, ডাকবাংলা সার্কিট হাউস, খাসজমি, সরকারী-বেসরকারী জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জমিতে প্লট, বস্তি, দোকান, গুদাম, সমিতি ও রাজনৈতিক অফিস, ঘর-বাড়ি ও বহুতল ভবন বানিয়ে করছে বিরামহীন দখলবাণিজ্য। এদেশে অঞ্চলভিত্তিক খাসিয়া, গারো, হাজং, সাঁওতাল, ওরাং, কুর্মি, মু-া, পা-ে, পাসি, কুড়িয়া, রবিদাস, রাখাইনসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অশিক্ষা-অদক্ষতার সুযোগে ভূমিদস্যু, টাউট ও জালিয়াতি চক্র ভুয়া দলিল, রেকর্ড, বন্দোবস্ত দেখিয়ে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে, পেশিশক্তি খাটিয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে নৃ-গোষ্ঠীদের জোতজমি এবং কোথাও হিন্দু পরিবারকে উচ্ছেদ করে বসতভিটা-জায়গাজমি সর্বস্বই হাতিয়ে নিচ্ছে। ভূমিদস্যু-দখলবাহিনী আমাদের কৃষি ও গ্রামভিত্তিক দেশে গ্রামাঞ্চলের কৃষি-অকৃষি খাসজমি, খাল-বিল, জলাশয়, রেলওয়ে, মহাসড়ক, সওজ, বাউবো, অর্পিত, ওয়াক্ফ, হাট-বাজার ও মাঠ-ঘাট সংশ্লিষ্ট অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মচারী-কর্মকর্তার সহযোগিতায় অবৈধ লিজ নিয়ে চালাচ্ছে রমরমা দখলবাণিজ্য। সৃষ্টি হচ্ছে মামলা জট। কুপ্রভাব পড়ছে বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে ও ডিজিটাল উন্নয়ন পথে। সরকারী মামলায় ও উচ্ছেদ অভিযানে ফল হচ্ছে না। ন্যায়নীতি ও আইন যেন অসহায়। এমনটা চলতে দেয়া যায় না। এদের থামাতে হবে। দখলবাজি ও জাল-জালিয়াতি রোধে টেকসই ব্যবস্থা হিসাবে খাসজমি ভূমিহীনদের সুষ্ঠু বণ্টন করা এবং ভূমি কার্ড প্রবর্তন আবশ্যক বলে মনে করি। ভূমি কার্ড থাকলে থাকবে না জোর যার মুল্লুক তার, লাঠি যার মাটি তার ও ভূমিদস্যুতা। কেউ নিজের কার্ড বহির্ভূত জমিতে যাওয়ার সুযোগ পাবে না। তাই ভূমি কার্ড এখন সময়ের দাবি। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কার্যকর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা থেকে
×