ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

দুই কোটি টাকা হাতিয়ে উধাও কোম্পানি

প্রকাশিত: ০৪:০২, ২৮ অক্টোবর ২০১৫

দুই কোটি টাকা হাতিয়ে উধাও কোম্পানি

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ কথিত হস্তশিল্প প্রাইভেট লিমিটেড নামের এক হায় হায় কোম্পানির খপ্পরে পড়ে প্রায় দুই কোটি টাকার আমানত খুইয়েছে নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলার প্রায় দুই হাজার নিরীহ নারী। রাতের আঁধারে ওই কোম্পানির লোকজন সাইডবোর্ড সরিয়ে পালিয়ে গেছে। অভিযোগ উঠেছে এ ঘটনার সঙ্গে এক গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে। মঙ্গলবার এ বিষয়ে সরেজমিনে গেলে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার বনানী হাউজ নম্বর ৩/৫ রোড নম্বর ০২ ব্লক-ই প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা দিয়ে হস্তশিল্প প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি এনজিও গত এক বছর ধরে কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় কার্যক্রম শুরু করে। এ জন্য তারা উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের জুম্মাপাড়া গ্রামের মৃত কাবিল উদ্দিনের ছেলে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন তার নিজস্ব ভবনে অফিস স্থাপন করে। ওই কর্মকর্তা দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলার আলোকঝাড়ি গ্রামীণ ব্যাংক শাখার সেকেন্ড অফিসারের চাকরিরত থাকলেও তিনি হস্তশিল্প প্রাইভেট লিমিটেডের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করতেন বলে অভিযোগ করা হয়। এ জন্য তিনি ১০ জন সুপারভাইজার ও মাঠকর্মী নিয়োগ করে। এলাকার ছেলে হিসাবে বিশ্বাস করে এই হস্তশিল্প প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেডের সদস্য হতে থাকে বিভিন্ন ইউনিয়নের নারীরা। এক বছরের মধ্যে এই কোম্পানি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেলাই মেশিন প্রদানে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ৩০ জন করে মোট ১৩০টি সমিতি গঠন করে। এতে এক হাজার ৯শ’ নারী সদস্য হয়। এর জন্য প্রতি সদস্য ৯ হাজার ৬৩০ টাকা করে জমা করে। এর মধ্যে সদস্য ফি ৩০ টাকা ও সেলাই প্রশিক্ষণের জন্য ৬শ’ টাকা এবং প্রতিজনকে একটি করে সিঙ্গার কোম্পানির সেলাই মেশিন প্রদানের জামানত বাবদ ৯ হাজার টাকা। এতে মোট টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় এক কোটি ৮২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। কিন্তু টাকা নেয়ার ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও কাউকে প্রশিক্ষণ বা সেলাই মেশিন প্রদান করা হয়নি বলে অভিযোগে বলা হয়। এদিকে জুম্মাপাড়া গ্রামের অধিবাসী ইছাহাক আলীর পুত্র আজহারুল ইসলাম (৫০) জানান, তার এই কার্যক্রমে সুবিধা পেতে জুম্মাপাড়ার নারীরা গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা গ্রামের ছেলে জয়নাল আবেদীনের কাছে ধরনা দিলেও তিনি গ্রামের কোন নারীকে সদস্য করেননি। তিনি মন্তব্য করে বলেন, জয়নাল অনেক চালাক। সে নিজের গ্রামকে ঠিক রেখে অন্য এলাকার মানুষজনের সঙ্গে প্রতারণা করল। এর বিচার হওয়া প্রয়োজন। তিনি আরও জানান, জয়নাল গত বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) গ্রামে আসলে বিভিন্ন এলাকার শতশত নারী তাকে ঘেরাও করে সেলাই প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন নতুবা তাদের টাকা ফেরত দাবি করে। তিনি আগামী এক সপ্তাহ সময় চেয়ে ওই সব বিক্ষুব্ধ নারীদের বাড়ি পাঠিয়ে দেন। কিন্তু পরের দিন শুক্রবার সকালে গ্রামের মানুষজন জয়নালের বাড়িতে তালা ঝুলতে দেখে। পাশাপাশি হস্ত শিল্প প্রাইভেট লিমিটেডের সাইনবোড আর দেখতে পায়নি। সেই সঙ্গে জয়নালসহ ওই অফিসে চাকরিরত কো¤পানির টিম লিডার মেজবাউল হকসহ ১০ জন রাতারাতি এলাকা ছেড়ে চলে যায়। এখন তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এ ব্যাপারে পুটিমারী ইউপির বক্সিপাড়া সমিতির সভানেত্রী গীতা রানী ও দক্ষিণ কালিকাপুর দোলাপাড়ার সভানেত্রী রোকসানা বেগম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলে এতোগুলো পরিবার কে জয়নাল আবেদীন প্রতারণা করল। আমরা এর বিচার চাই। এদিকে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীনের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে জয়নাল আবেদীনের বড় ভাই বুড়িরহাট দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, হস্তশিল্প প্রাইভেট লিমিটেডে ওই কোম্পানির সঙ্গে তাদের কোন স¤পর্ক নেই। তারা তার ছোট ভাই জয়নাল আবেদীনের বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল মাত্র। কিন্তু বাসা ভাড়া বাকি রেখে রাতের আঁধারে তারা পালিয়েছে।
×