ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

‘বলেশ্বর মোগো বাড়ি ঘর গিইল্লা খাইছে’

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৮ অক্টোবর ২০১৫

‘বলেশ্বর মোগো বাড়ি ঘর গিইল্লা খাইছে’

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ বলেশ্বর নদীর তীব্র ভাঙ্গনে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন বগী, তেরাবেকা, শরণখোলা, সোনাতলা, পানিরঘাট ও ডালিরঘোপ গ্রামসহ সুন্দবনের একাধিক ফাঁড়ি-স্টেশন বিলীন হতে চলেছে। ভাঙ্গনের তীব্রতায় এসব এলাকায় আতঙ্ক বাড়ছে। কয়েক বছর ধরে ভাঙ্গনের ফলে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন এখানকার পাঁচ শতাধিক মানুষ। ইতোমধ্যে এলাকার অনেকাংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখনও বিরামহীনভাবে ভাঙছে। মানুষ জমি ও বাড়িঘর হারাচ্ছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে অনেকেই অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। সরেজমিন দেখা গেছে, ভাঙ্গন আতঙ্কে স্থানীয়রা তাদের বসতবাড়ির ঘরসহ জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত পাঁচবার বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে বহু বাড়িঘর, মসজিদ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সহস্রাধিক বিঘা ফসলি জমি বলেশ্বরে হারিয়ে গেছে। নিঃস্ব হয়ে শত শত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে ৩৫/১ পোল্ডারের বেড়িবাঁধের উভয় পার্শ্বে। এছাড়া সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের বগী স্টেশন ভাঙ্গনের তীব্রতায় ৪-৫ বার স্থানান্তর করতে হয়েছে। বনসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা শেখ মোহম্মদ গাউস ফারুকী, রুস্তুম হাওলাদার, মোজাম্মেল হোসেন, আলো মুন্সী, বারেক পঞ্চায়েত, হেমায়েত পঞ্চায়েত ও কামাল পঞ্চায়েতসহ বগী এলাকার একাধিক বাসিন্দা বলেন, বগী এলাকার এক সময়কার ছোট খালটি এখন নদীতে পরিণত হয়েছে। বেড়িবাঁধে গত ৩০-৩৫ বছরে ৪-৫ দফা ভাঙ্গনের ফলে ওই এলাকার অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধাসহ বহু পরিবার তাদের সহায়সম্বল হারিয়ে পথে বসেছে। নিঃস্ব হয়ে যারা নদীপাড়ের পরিত্যক্ত বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছিল সে বাঁধও এখন বিলীনের পথে। বগী গ্রামে গিয়ে কথা হয় মুক্তিযোদ্ধা আঃ আজিজের বিধাব স্ত্রী আমিরোননেছার (৭৭) সঙ্গে। তাঁর ভাষায়, “এই বলেশ্বর নদী মোগো বাড়িঘর সব গিইল্লা গিইল্লা খাইছে। সাত-আষ্টোবার মোরা ঘরবাড়ি পাল্ডাইছি। এহন খয়রাতি। বেড়িবান্দের পাড়ে ঘর বানাইছিলাম, তাও এহন ভাইঙ্গা যাইতেছে, কোতায় যামু তা জানি না।” মধুমতির ভাঙ্গনে বিলীন ঘাঁঘা গ্রাম নিজস্ব সংবাদদাতা, নড়াইল, ২৭ অক্টোবর ॥ থেকে জানান, প্রমত্তা মধুমতি নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ঘাঁঘা গ্রাম ও বাজারসহ কয়েকটি গ্রাম বিলীন হতে চলেছে। গত কয়েক দিনে মধুমতির ভাঙ্গনে শতাধিক দোকানপাট, ৩টি রাইস মিল, স’মিল, হাটের চান্দিনাসহ ১৫টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। নদী ভাঙ্গনের হুমকির মুখে রয়েছে ঘাঁঘা গ্রামের ঘাঁঘা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোটাকোল ইউনিয়ন পরিষদ, ঘাঁঘা স্লুইস গেট, শতাধিক বসতবাড়ি, খেলার মাঠ, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ কয়েক হাজার একর ফসলী জমি। সরেজমিনে দেখা গেছে, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কোটাকোল ইউনিয়নের ঘাঁঘা গ্রামে মধুমতি নদীর তীরে অর্ধশতাধিক বছর পূর্বে গড়ে উঠেছিল ঘাঁঘা বাজার। মধুমতি নদীর তীরে গড়ে ওঠা এ বাজারটি সেই সময় থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক প্রসার লাভ করে। কিন্তু প্রমত্তা মধুমতি নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনের শিকার হয়ে দীর্ঘদিনের পুরনো এ বাজারটি এখন তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে।
×