ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা

সিআরবিতে আধিপত্য নিয়ে ছাত্রলীগের বাবর-লিমন গ্রুপ বেপরোয়া

প্রকাশিত: ০৫:০২, ২৭ অক্টোবর ২০১৫

সিআরবিতে আধিপত্য নিয়ে ছাত্রলীগের বাবর-লিমন গ্রুপ বেপরোয়া

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম সিআরবিতে (সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং) আধিপত্য ও রেলওয়ে টেন্ডার নিয়ে যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর বাবর ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল আলম লিমনের দ্বন্দ্ব অনেক আগের। সম্প্রতি এটি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত পনের দিনে আধিপত্য নিয়ে সিআরবি এলাকায় এ দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে কয়েকবার ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সাবেক এ দুই নেতার দ্বন্দ্ব এখন ছড়িয়ে পড়েছে মহানগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগেও। দুই নেতাকে ঘিরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দুই মেরুতে অবস্থান নিয়েছেন। লিমনকে ঘিরে মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এক মেরুতে অবস্থান করছেন। অপর মেরুতে রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। দ্বিধাবিভক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা লিমন-বাবরকে ঘিরে নগরীতে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল করেছে। একপক্ষ লিমনকে ত্যাগী নেতা দাবি করে বাবরের সন্ত্রাসী কর্মকা-কে রুখে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। অপরদিকে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বাধীন অংশটি লিমনকে টেন্ডারবাজ, খুনী, সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে তার নামের সামনে ছাত্রলীগ নেতা না লিখতে মিডিয়ায় প্রেসরিলিজ পাঠিয়েছেন। লিমন-বাবর অনুসারীদের মুখোমুখি অবস্থানে উদ্বিগ্ন নগর পুলিশ। যে কোন সময় স্বার্থ নিয়ে এ দু’গ্রুপের মধ্যে আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা। নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘সিআরবিতে উভয় গ্রুপের উত্তেজনা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এরপরও যেভাবে হোক সন্ত্রাস নির্মূল করতে হবে। এভাবে চলতে দেয়া যাবে না।’ সিএমপি কমিশনারও এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান তিনি। জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সিআরবিতে রেলের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে নেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্য হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর। ২০১৩ সালে সিআরবি খুনের ঘটনার পর পদটি থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি। পরে দলটির সিসি কোটায় (কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মৌখিকভাবে পদ দেয়া) উপ অর্থ সম্পাদকের পদ দেয়া হয় তাকে। রেলওয়েতে বিভিন্ন সময় আহ্বান করা দরপত্রগুলোতে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতেন এ নেতার অনুসারী লোকজনরা। বিনিময়ে প্রাপ্ত ঠিকাদারি কাজ থেকে একটা অংশ নিতেন বাবর। এদিকে যুবলীগ নেতা দিদারুল আলম দিদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলে পরিচিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসম্পাদক সাইফুল আলম লিমন হঠাৎ আবির্ভূত হন রেলওয়ের দরপত্রের কাজ নিয়ে। ২০১৩ সালে সিআরবির খুনের ঘটনার পর বহিষ্কৃত হন তিনি। ছাত্রলীগের উঠতি এ নেতা তখন দরপত্রের কাজ পাওয়া নিয়ে বিভিন্ন সময় বাবরের লোকজনের স্বার্থে আঘাত দেন। এতে বিভিন্ন সময় দু’গ্রুপের মধ্যে বাক-বিত-ার এবং পরে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। ২০১৩ সালের ২৪ জুন এমনই এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয় যুবলীগ নেতা বাবর ও লিমনের অনুসারীরা। এ সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শিশুসহ দু’জন মারা যায়। এ সময় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের এ দুই নেতা জেলেও যান। পরে জামিনে বের হন উভয়েই। পরবর্তীতে সংঘর্ষ এড়াতে যুবলীগ নেতা বাবর ও ছাত্রলীগ নেতা লিমনের মাঝে সমঝোতা হয় রেলের দরপত্রের কাজে একটা ভাগ লিমনকে দেয়া হবে এই কথা বলে। সব ঠিকঠাকও চলে এতদিন। তবে সম্প্রতি দরপত্রের বেশ কয়েকটি কাজের ভাগ থেকে বঞ্চিত হয় লিমন। এতে দুই বছর পর পুনরায় তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। চলতি মাসের ৭ অক্টোবর দ্বন্দ্ব পুনরায় প্রকাশ্যে রূপ নেয়। ওইদিন নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে আয়োজিত মেলাকে কেন্দ্র করে ওয়ালিউল্ল্যাহ ইনস্টিটিউটের সামনে ফুটপাথে দোকান বসানো নিয়ে উভয় নেতার অনুসারীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এর দুইদিন পর ১২ অক্টোবর আধিপত্য নিয়ে পুনরায় এ দুই নেতার অনুসারীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ওই সময় উভয় নেতার অনুসারীদের মধ্যে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলিবিনিময় হয়ে বলে জানা গেছে। তবে সংঘর্ষের সময় দুই জনের কেউ ঘটনাস্থলে ছিলেন না। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৭ অক্টোবর (শনিবার) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপুর নেতৃত্বে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা চট্টগ্রাম ছাত্রসমাজের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এর তিন দিন পর ২০ অক্টোবর (মঙ্গলবার) মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে আরেকটি বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। ওই মিছিলে আ জ ম নাছিরের অনুসারী কেউ ছিলেন না। এ সম্পর্কে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু জানান, ‘লিমন ভাইকে নিয়ে মহানগর ছাত্রলীগে বিভক্তি সৃষ্টির কোন সুযোগ নেই। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করার পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতা হয়েছেন। তাকে নিয়ে মহানগর ছাত্রলীগের মন্তব্য করার কোন এখতিয়ার নেই। কোন কিছু মন্তব্য করলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগই করবেন। কারণ তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন।’ টিপু আরও বলেন, ‘১৭ অক্টোবর আমরা কোন নেতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করিনি। নগর থেকে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি রুখে দিতে আমরা ছাত্রসমাজের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলটি করি।’ এ সম্পর্কে জানতে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি জানান, বিভক্তি যেটা হয়েছে সেটা লিমনের নামের আগে ছাত্রলীগ পরিচিতি লেখা নিয়ে। একজন বহিষ্কৃত সাবেক ছাত্রলীগ নেতার দায়ভার ছাত্রলীগ নেবে না। এ কারণে আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমরা যা করেছি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশে করেছি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ লিমন আজীবন বহিষ্কৃত বলে চিঠিও দিয়েছেন। তাই এ নিয়ে আর দ্বিধাবিভক্তি নেই।
×