ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিনারে ও. কাদের ॥ সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে বিআরটিএ আইন পাস

আইন তৈরি হয়- আবার আইন মানেন না অনেক আইন প্রণেতা

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৬ অক্টোবর ২০১৫

আইন তৈরি হয়- আবার আইন মানেন না অনেক আইন প্রণেতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) আইন সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে পাস করা হবে জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তার আগে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সংশ্লিষ্টদের সুপারিশ এতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এছাড়া বাস মালিকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বলেও অভিযোগ করেন মন্ত্রী। রবিবার রাজধানীর মহাখালী ব্র্যাক-ইন সেন্টারে ‘সড়ক নিরাপত্তায় আইন প্রণয়ন’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনার আয়োজন করে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক। সেমিনারে ওবায়দুল কাদের বলেন, মন্ত্রিসভায় বিআরটিএ আইন অনুমোদিত হলেও এখনও সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। তবে তা দ্রুত দিতে হবে। শীতকালীন অধিবেশনের আগে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ পরামর্শগুলো যোগ করা হবে বলেও আশ্বস্ত করেন মন্ত্রী। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাওয়ার এ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) চেয়ারপার্সন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি সেতুমন্ত্রীকে বিআরটিএ আইনটিতে সংশ্লিষ্ট সব শ্রেণী-পেশার মানুষের সুপারিশমালা যোগ করার আহ্বান জানান। ড. হোসেন জিল্লুর রহমান জানান, বিআরটিএ আইনের সুপারিশমালা আগামী ৭ নবেম্বরের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে দেয়া হবে। সেমিনারে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশে আইন তৈরি হয়, কিন্তু প্রয়োগ হয় না। আবার অনেক আইন প্রণেতারা আইন মানেনও না। এটা কখনও কখনও ঘটছে তা নয়, বরং প্রতিনিয়ত ঘটে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি রাস্তায় রং সাইডে চলেন অভিযোগ তুলে মন্ত্রী বলেন, অসহায় দৃষ্টিতে আমি তখন তাকিয়ে থাকি। জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসে, আগে রাইট সাইডে যাবার ব্যবস্থা করে দেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা কি ধরনের উত্তর? এটা তো কোন সমাধান নয়। যানজট আছে আর আপনি সেটা আরও কঠিন করছেন। মন্ত্রী বলেন, আমাকেও প্রচ- ট্রাফিক জ্যাম অতিক্রম করে অফিস করতে হয়। আমি তো কখনও রং সাইডে যাই না। গত ঈদের একটি অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যান্য যাত্রীর সঙ্গে যানজট দুর্ভোগ শেয়ার করে বাইপাইল থেকে চন্দ্রায় পৌনে চার ঘণ্টায় গিয়েছি। অথচ পুলিশ আমাকে বলেছিল, রং সাইড দিয়ে গেলে মাত্র পনেরো মিনিটে যেতে পারবেন। কিন্তু আমি তাতে রাজি হইনি। মন্ত্রী বলেন, চার ঘণ্টা রাস্তায় যানজট সহ্য করে যাওয়া কোন লোক দেখানো নয়। তিনি বলেন, কিভাবে আপনি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করবেন? যেখানে যানজট, জলজট, জনজট সব মিলেমিশে একাকার। নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক চারলেন করলাম। কিন্তু সেই চার লেনের অর্ধেকও এখন নেই। দখলমুক্ত করি, আবার দখলে চলে যায়। অনেক সময় ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো রাস্তা অচল করে দেয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দেখা যায়, কোন কোন গাড়ির চালক গাড়ি থামিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। আবার তাকেও খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না- এটা কি করে থামাবেন? জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনে দশলেন রাস্তা আছে। কিন্তু মাত্র চারলেন ব্যবহার করা হয়। যে যার মতো ফ্রিস্টাইলে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। তিনি বলেন, বাস মালিকদের সঙ্গে কথা বলে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু তারা তা মানছেন না। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। মন্ত্রী জানান, আরিচা সড়কে ২৫ কোটি টাকা খরচ করে রাস্তা ঠিক করা হয়েছে। এ কারণে সেখানে ৯৮ শতাংশ দুর্ঘটনা কমে এসেছে। মন্ত্রী আরও জানান, দুর্ঘটনাপ্রবণ ১৪৪টি বাঁক সংশোধনের কাজ অর্ধেক শেষ হয়েছে। ১৬০ কোটি টাকার প্রকল্পের এ কাজের বাকি অর্ধেক শেষ হবে আগামী ডিসেম্বরে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রাস্তার প্রসঙ্গ তুলে মন্ত্রী বলেন, ১৫০ কিলোমিটার সড়কটির আজিজনগর থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত অত্যন্ত চমৎকার সড়ক। আর আজিজনগর থেকে পুঠিয়া পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার সড়কের ২৪টি পয়েন্ট খুব খারাপ। বর্ষায় এগুলো পুরোপুরি পানির নিচে চলে যাওয়ায় এ বেহাল অবস্থা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে মৃত্যু হারের তথ্যটি মনগড়া, আজগুবি ও কল্পনাপ্রসূত মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, প্রতিদিন ১০ জন মারা গেলেও তিন হাজার ৫শ’ হয়। কিন্তু দুর্ঘটনায় এতো মৃত্যু ঘটছে না। কিভাবে স্বাস্থ্য সংস্থা বলে, দেশে বছরে ২১ হাজারের বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়? মন্ত্রী জানান, দিনে বড়জোর ১০ জন মারা যায় বা ধরুন বছরে ৪ হাজার। হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের অংশের খারাপ অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি সেখানে হাঁটু পানি পর্যন্ত দাঁড়িয়েছিলাম। সিটি মেয়রকে বললাম। তিনি বললেন, ফান্ড নেই। অর্থমন্ত্রীকে বিষয়টি জানালে প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে বলেন। কিন্তু পরিকল্পনা আর ব্যয়ের হিসেব করতে করতে সব সময় চলে যায় বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী। ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা সিটির রাস্তা চলাচলের যোগ্য করে গড়ে তুলতে মাত্র তিন মাস সময় লাগবে। সংস্কার মেরামতে এতো টাকা খরচ হয় না বলেও জানান মন্ত্রী। দেশের সড়কগুলোতে বিলবোর্ডের ছড়াছড়ি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ঢাকা উত্তরের মেয়র অন্তত এটুকু করেছেন যে তার ছবি সম্বলিত বিলবোর্ড নামিয়ে নিয়েছেন। চট্টগ্রামের মেয়র নাসিরও নামিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু অন্যান্য সড়কে বিলবোর্ডের ছবি দেখলে জাতি হিসেবে কোথায় আছি এটা নিয়ে প্রশ্ন জাগে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, একটা বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবির নিচে ৩৭ জনের পর্যন্ত ছবি দেখেছি। ওবায়দুল কাদের বলেন, কবে ঈদ চলে গেছে। অথচ ঈদ-উল ফিতরের শুভেচ্ছা এখনও ঝুলছে। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে কতো নেতা, পাতি নেতা, সিকি নেতা, আধুলি নেতার বিলবোর্ড দেখা যায়। মনে হয়, দেশ যেন নেতা উৎপাদনের বড় কারখানা। তিনি অভিযোগ করেন, বিলবোর্ডের এসব বড় ছবি দেখিয়ে বড় অংকের চাঁদাবাজি করেন কিছু নেতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে সব বিলবোর্ড সরিয়ে নিয়েছেন। একইভাবে রাজশাহী সিটিতেও কোন রাজনৈতিক বিলবোর্ড নেই। এসব বিলবোর্ডের দিকে তাকাতে গিয়ে গাড়ির চালক বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। মুন্সীগঞ্জ, সাভার, মানিকগঞ্জ এবং গাজীপুরের রাস্তাগুলো বিলবোর্ডে ভরা বলেও অভিযোগ করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, বিলবোর্ডের ব্যাপারে আর আপোস নেই। চলতি মাস শেষ হলেই বিলবোর্ড সরানো শুরু করবে মন্ত্রণালয়। সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, বাসগুলো যত্রতত্র পার্কিং করে টার্মিনাল বসিয়ে রাখে। এটার জন্য ট্রাফিক পুলিশকে দায়ী করে তিনি বলেন, তাদের ঠিকমতো ট্রাফিক সিস্টেম সম্পর্কে জ্ঞান না দিলে কোন কিছু আশা করে লাভ নেই। তারা শুধু ঘুষ খেয়েই যাবেন।
×