ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সরকারী চাকুরেদের জন্য ঢাকায় ৭২০ ফ্ল্যাট হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৬ অক্টোবর ২০১৫

সরকারী চাকুরেদের জন্য ঢাকায় ৭২০ ফ্ল্যাট হচ্ছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ সরকারী কর্মচারীদের আবাসন সঙ্কট কাটাতে মিরপুরের পাইকপাড়ায় ৬০৮ ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে সরকার। এগুলো তৈরিতে ব্যয় হবে ৪৫৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এর মধ্য দিয়ে অব্যবহৃত, পরিত্যক্ত ও অল্প জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের মাধ্যমে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক সমস্যা লাঘবে সরকারের যে পরিকল্পনা রয়েছে তার বাস্তবায়ন ঘটবে। অন্যদিকে আগারগাঁওয়ের তালতলায় পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে ১১২ ফ্ল্যাট। এগুলো নির্মাণে ব্যয় হবে ১০৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে এ সংক্রান্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সরকারী কর্মচারীদের একটি নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশসম্মত আবাসনের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা পরোক্ষভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে। এর মাধ্যমে ৬০৮ পরিবারকে আবাসিক সুবিধা প্রদান করা হবে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, মিরপুরের পাইকপাড়া সরকারী কলোনির মধ্যে চার একর খালি জমি রয়েছে। যেখানে অধিকসংখ্যক আবাসিক ভবন নির্মাণের মাধ্যমে সরকারী কর্মচারী-কর্মকর্তাদের আবাসিক সমস্যা হ্রাস করা সম্ভব হবে। এছাড়া পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২০তলা ভিত্তির ওপর দুটি ১৫তলা ভবনে প্রতিটি ৮০০ বর্গফুটের ১১২ ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। তাই প্রকল্প দুটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, এ সংক্রান্ত প্রস্তাবিত প্রকল্প দুটির প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। অনুমোদন পেলে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতায় গণপূর্ত অধিদফতর ও স্থাপত্য অধিদফতর। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারী চাকরিজীবীদের ঢাকা শহরে আবাসন সমস্যা একটি প্রকট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। আবাসন পরিদফতর চাহিদা অনুযায়ী আবাসন সমস্যা সমাধান দিতে পারছে না। সরকারী আবাসন পরিদফতরের প্রতিবেদন (সিএন্ডএজি অফিস হতে প্রাপ্ত) অনুযায়ী ঢাকা শহরে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীর সংখ্যা ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯১৫। কিন্তু বাসা, ফ্ল্যাট বা বাড়ির সংখ্যা ১৩ হাজার ৫২, যা চাহিদার মাত্র ৮ শতাংশ। ফলে বাধ্য হয়ে সরকারী কর্মচারীদের অধিকাংশকেই তাদের ক্ষমতার বাইরে অধিক মূল্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন নিম্নমানের বাড়িভাড়া নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে। এতে তাদের অর্থনৈতিক ও বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ফলে তাদের কর্ম দক্ষতা হ্রাস পাচ্ছে। সরকারী আবাসন পরিদফতরের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা শহরে আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য স্বল্প মেয়াদে চলতি বছরের মধ্যে ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৬ হাজার ৩২০ ফ্ল্যাট, মধ্য মেয়াদে ২০১৭ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ, অর্থাৎ ১৬ হাজার ৯৬৮ ফ্ল্যাট এবং দীর্ঘ মেয়াদে ২০১৯ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ, অর্থাৎ ১৮ হাজার ২৭৬ ফ্ল্যাট নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাইকপাড়া সরকারী কলোনির মধ্যে চার একর খালি জায়গা রয়েছে, যেখানে অধিকসংখ্যক আবাসিক ভবন নির্মাণের মাধ্যমে আবাসিক সমস্যার কিছুটা সমাধান করা সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যে মিরপুর পাইকপাড়ায় সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৬০৮ আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, পাঁচটি ২০তলা ভবনে এক হাজার বর্গফুটের ৩৮০ ফ্ল্যাট নির্মাণ, তিনটি ২০তলা ভবনে প্রতিটি এক হাজার ২৫০ বর্গফুটের ২২৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ, তিন হাজার ৩৫১ বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ, ১৬ লিফট ক্রয়, ৮ হাজার ৩৩৫ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, কমিউনিটি স্পেস, কম্পাউন্ড ড্রেন নির্মাণ, স্কুল ভবন নির্মাণ, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যাট (এসটিপি) স্থাপন, পানি সরবরাহ ও বিদ্যুতায়ন ইত্যাদি কার্যক্রম করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, সদ্য সমাপ্ত ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ যেমন আবাসিক সঙ্কট নিরসন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং কর্মস্থান সৃষ্টির সঙ্গে এ প্রকল্পটি সঙ্গতিপূর্ণ। সূত্র জানায়, সম্প্রতি সরকারী কর্মকর্তাদের আবাসন সঙ্কটও দূর করার এজন্য একটি প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৬৪ ফ্ল্যাট নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মিরপুরের ছয় নম্বর সেকশনে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮৫২ কোটি টাকা। সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য নির্মিতব্য ফ্ল্যাটের আকার হবে সাড়ে বারো’শ থেকে দেড় হাজার বর্গফুট। ১৫ বহুতল ভবনে এসব আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে, এগুলোর কোন কোনটির উচ্চতা ২০তলা পর্যন্ত। এ ফ্ল্যাটগুলো নির্মাণ হলে আরও প্রায় এক হাজার ৬০০ জনের আবাসনের ব্যবস্থা হবে।
×