ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চলে গেলেন অভিনেতা পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২৬ অক্টোবর ২০১৫

চলে গেলেন অভিনেতা পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে জন্ম নেয়া পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রের অভিনেতা পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়। শনিবার রাত ৩টার দিকে তিনি কলকাতার একটি বেসরকারী নার্সিংহোমে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৫০ বছর। অভিনেতা পীযূষ ও স্ত্রী পামেলা গঙ্গোপাধ্যায়ের এক ছেলে রয়েছে। রবিবার সকালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ময়নাতদন্ত শেষে প্রয়াত পীযুষ গঙ্গোপাধ্যায়ের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর বাড়িতে। দুপুরে সেখান থেকে নেয়া হয় টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে। সেখান থেকে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে পশ্চিমবঙ্গের গুণী এই অভিনেতার মৃত্যুতে টালিগঞ্জের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমেছে। অভিনেতা পীযূষের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন এবং প্রয়াত অভিনেতার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন সাংস্কৃতিক কর্মীরা। জনপ্রিয় এই অভিনেতার মৃত্যুতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, পীযূষ গুণী অভিনেতা ছিলেন, আত্মার শান্তি কামনা করি। ওর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। অভিনেতা ও উপস্থাপক দেবশঙ্কর হালদার বলেন, পারিবারিকভাবে পীযূষকে অনেক দিন ধরে চিনি। ওর মধ্যে ছেলেমানুষী ছিল। অভিনয়ের মধ্যে একটা খেলোয়াড়োচিত মনোভাব ছিল ওর। অভিনেতা ও নির্দেশক দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সুন্দর মানুষ ছিল পীযূষ। স্ত্রী ও ছেলের প্রতি সমবেদনা জানাই। ওর এ্যাকসিডেন্টের পর থেকে পুজোটাও আমাদের এলোমেলো কেটেছিল। নাট্যকার মনোজ মিত্র বলেন, একটা বিরাট মাপের অভিনেতা। অসাধারণ প্রতিভাবান এবং নিষ্ঠাবান ছিলেন। মানুষ হিসেবেও ছিল অসাধারণ। পীযূষকে আমরা থিয়েটার, চলচ্চিত্রে দেখেছি। কেথাও তার নিষ্ঠার হেরফের ঘটেনি। প্রবীণ অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় বলেন, কোন সন্তানের মৃত্যুতে মা কিছু বলতে পারে! এর কোন ভাষা নেই। এ রকম একজন অভিনেতাকে মানুষ হারাল। শুধু তাই নয়, কী ভাল গান গাইত, কী সুন্দর কথা বলত। অভিনেত্রী চৈতি ঘোষাল বলেন, জনপ্রিয় ও ট্যালেন্টেড অভিনেতা ছিল। সবচেয়ে বড়, থিয়েটারের খুব বড় ক্ষতি হয়ে গেল। গার্গী রায় চৌধুরী বলেন, কাজ অন্তপ্রাণ ছিল পীযূষের। জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত বলেন, ব্যক্তিজীবনেও ভাল মানুষ ছিলেন। শ্রীলেখা মিত্র বলেন, ভাল শিল্পী, মানুষ ছিলেন। একটা ছেলেমানুষী ছিল। ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়। পরে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন কলকাতায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে যোগ দেন ব্যাংকে। তবে অভিনয়কে ভালবেসে ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দেন। বিভাস চক্রবর্তী থেকে ব্রাত্য বসুসহ বিভিন্ন সময়ে নাট্য পরিচালকদের সহায়ক হয়েছে তাঁর কুশলী অভিনয় প্রতিভা। ‘মাধব মালঞ্চ কইন্যা’, ‘জোছনা কুমারী’, ‘আকরিক’, ‘জ্যেষ্ঠ পুত্র’ থেকে ‘ব্রেন’, ‘সিনেমার মতো’সহ বাংলা নাট্যদুনিয়ার সেরা নাটকগুলোতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। ‘গ্যালিলিও গ্যালিলি’ নাটকে গ্যালিলিওকে নতুন করে রূপও দিয়েছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের দুনিয়াতেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয় মুখ। ‘জন্মভূমি’, ‘সোনার হরিণ’র মতো সিরিয়াল থেকে ফিলহাল ‘জল নুপূর’ বা ‘চোখের তারা তুই’ সিরিয়ালেও কাজ করেছেন তিনি। পাশাপাশি কাজ করে গিয়েছেন বাংলা চলচ্চিত্রেও। চিদানন্দ দাশগুপ্তর ‘আমোদীনি’ থেকে অপর্ণা সেনের ‘গয়নার বাক্স’, অঞ্জন দত্তর ‘ম্যাডলি বাঙালি’ থেকে সৃজিৎ মুখোপাধ্যায়ের ‘অটোগ্রাফ’ স্ক্রিনে পীযূষ গঙ্গোপাধ্যয় আসা মানেই কী অনায়াসে এক একটি চরিত্র হয়ে ওঠা। আরও কাজ করেছেন ‘বাবা কেন চাকর’, ‘ইতি শ্রীকান্ত’, ‘ব্যোমকেশ বক্সি’, ‘আবার ব্যোমকেশ’, ‘আবর্ত’ চলচ্চিত্রে। ২০০৫ সালে ‘মহুলবনীর সেরেঙ’ চলচ্চিত্রে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান পীযূষ। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাওড়া সেতুতে একটি লরির সঙ্গে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হোন পীযূষ। চিকিৎসকদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে অবশেষে পঞ্চাশ বছরে থেমে গেল এ গুণী অভিনেতার জীবন।
×