ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লাফা বেগুনের ভাজা নাই ॥ বিয়ের আসরে বরও নাই

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৪ অক্টোবর ২০১৫

লাফা বেগুনের ভাজা নাই ॥ বিয়ের আসরে বরও নাই

গফরগাঁও রেলস্টেশনে হকার ডাক ছেড়ে বলছে লাগবনি ভাই লাগবনি গোল বাইগুন লাগবনি। অ ভাই আইলে নারে/দেখলে নারে/খাইলে নারে গফরগাঁওয়ের গোল বেগুন। এমন গানের সুর শোনা গেছে ব্রহ্মপুত্র নদের পালতোলা নৌকার মাঝিমাল্লার, মাঠেঘাটে কৃষক শ্রমিকের মুখে মুখে। এ বেগুন নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা গান, কবিতা। এখনও এসব গান কবিতা মানুষের মুখে মুখে। ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের লাফা বেগুনের স্বাদ-গন্ধ অতুলনীয়। বেগুনের আকৃতি গোল হলেও দেহ মসৃণ নয়। ঢেউ খেলানো খাঁজ কাটা। দেশের ঐতিহ্যবাহী এ বেগুনের নাম ‘লাফা বেগুন’। অনেকে একে গোল বেগুন বলেও ডাকে। বড়া ও ভাজির জন্য প্রসিদ্ধ ও সুস্বাদু লাফা বেগুন। কথিত আছে, আগে কোন বিয়ের উৎসবে লাফা বেগুন খাবারের তালিকায় না থাকলে অনুষ্ঠান পূর্ণতা পায়নি। এমন ঘটনাও ঘটেছে, বরকে খাবার দেয়া হলে সেই থালায় বেগুনের ভাজা না থাকলে বর বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। অতীতে এক হালি (প্রায় ১০ কেজি) বেগুন নিয়ে বড় কোন কর্মকর্তার দরজায় হাজির হলে মিলে গেছে সরকারি চাকরি। এখন নানা সমস্যার কারণে বিলুপ্ত প্রায় লাফা বেগুন। আজ সেই স্থান দখল করেছে ইসলামপুরী ও বারী বেগুন। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় লাফা বেগুনের চাষ হয়েছে। একটি বেগুনের ওজন ছিল ২/৩ কেজি পর্যন্ত। কোন সার প্রয়োগ ছাড়াই এ বেগুন উৎপাদন হয়েছে। তবে প্রাকৃতিক জৈব সার কিছু নিয়মকানুন পাক পবিত্র হয়ে এ বেগুনের চাষ করা হয়েছে বলে জানায় কৃষকরা। অপবিত্র শরীর নিয়ে লাফা বেগুন ক্ষেতে গেলে কয়েকদিন পরেই বেগুনের গাছ মরে গেছে। গত কয়েক বছর যাবত ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে লাফা বেগুন চাষাবাদের জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। লাফা বেগুনের উন্নত বীজ কোথাও না পেয়ে কৃষকরা নিরুপায় হয়ে অন্যান্য জাতের বেগুন চাষ করছে। এর মধ্যে ভোলানাথ, সিংনাথ, ইসলামপুরী, বারী বেগুন, খটখটিয়া, তারা ও ঝুড়ি অন্যতম। চরআলগী ইউনিয়নের ভোলানাথ বেগুন চাষী আবু সাঈদ, জীবন মিয়া, কামাল উদ্দিন বলেন, লাফা বেগুনের বীজ না থাকায় এর বিকল্প হিসেবে আমরা ভোলানাথ ও ইসলামপুরী বেগুনের চাষ করছি। ইসলামপুরী ও ভোলানাথ বেগুন দেখতে অনেকটা লাফা বেগুনের মতো, দামও ভাল। তবে স্বাদ কম। -শেখ আব্দুল আওয়াল, গফরগাঁও থেকে
×