ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজার সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন, লাখো মানুষের মিলনমেলা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৪ অক্টোবর ২০১৫

কক্সবাজার সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন, লাখো মানুষের মিলনমেলা

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ কক্সবাজারে বাঁধভাঙ্গা আনন্দ আর ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব মহানবমী ও বিজয়া দশমী পালনের পর প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে শুক্রবার। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বিদায় জানানো হয়েছে দেবী দুর্গাকে। প্রতিমা বির্সজন উপলক্ষে শুক্রবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে বসে লাখো মানুষের মিলনমেলা। ওই মিলনমেলায় সামিল হন দেশী-বিদেশী পর্যটকরাও। পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এ আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। সম্প্রতির সেতুবন্ধন তৈরিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি এ অনুষ্ঠানে সামিল হন অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও। অশ্রুসজল চোখে আরও একটি বছরের জন্য দেবীকে বিদায় জানানো হয়। আগামী বছর দেবীর পুনরাগমনের আশায় বুক বাঁধবেন সকলে। দশমীই মূলত দুর্গাপূজার প্রধান অনুষঙ্গ। তবে দেবী দুর্গার বিদায় অর্থাৎ স্বামীগৃহে গমনের পাঁচ দিন পরেই লক্ষ্মীপূজার মধ্য দিয়ে আবার পিতৃগৃহে ফিরে আসবেন তিনি। প্রতিমা বির্সজন উপলক্ষে সমুদ্র সৈকতে নেয়া হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি নিরাপত্তার কাজে মাঠে সদা তৎপর ছিল র‌্যাব ও বিজিবি। এছাড়াও আনসার, ভিডিপি ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা প্রতিনিয়ত নিরাপত্তার জন্য কাজ করে। এ মিলনোৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। শুক্রবার বিকেলে দেখতে দেখতে সকল আনন্দ ছাপিয়ে বেজে উঠল বিষাদের সানাই। মহালয়ার মধ্য দিয়ে যে দুর্গতিনাশিনীর মর্তে আগমন, দশমীবিহিত পূজা শেষে কৈলাস যাত্রা তার। শুক্রবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় পূজার সকল আনুষ্ঠানিকতা। এর আগে সকাল থেকেই একে একে নিরঞ্জনের উদ্দেশ্যে ট্রাকে তোলা হয় প্রতিমাগুলো। এ সময় শহরের প্রতিটি পূজা ম-পে বেজে উঠে বিদায়ের সুর। এরপর ঢাক-ঢোল বাজিয়ে সঙ্গীতের মূর্ছনায় নেচে-গেয়ে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শোভাযাত্রা নিয়ে সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশে ছুটে চলে প্রতিমাবাহী ট্রাকগুলো। পথে পথে বাড়তে থাকে শোভাযাত্রার কলেবর। শোভাযাত্রা শেষে সৈকতে একে একে সাজিয়ে রাখা হয় প্রতিমাগুলো। মাইকে ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গেই বেজে উঠে শংখ, উলুধ্বনি, বাদ্যের ঘণ্টা। কণ্ঠে ‘জয় দুর্গা মায়ের জয়’ আর চোখে জল নিয়ে একের পর এক সাগরে উত্তাল টেউয়ে ভাসানো হয় প্রতিমা। সৈকতের বালিয়াড়িতে সরেজমিন দেখা যায়, ভক্ত, পূজার্থী, দর্শনার্থী ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিপুলসংখ্যক পর্যটক ও সকল ধর্মের মানুষ বিজয়া দশমীর প্রতিমা বিসর্জনে শামিল হয়েছেন। সৈকতের ডায়াবেটিক হাসপাতাল ও দক্ষিণে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত সৈকতের তিন কিলোমিটার বেলাভূমিজুড়ে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছিল। এ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির এক দৃষ্টান্ত। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এ উৎসব নির্বিঘœ করতে আগে থেকেই বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয় পুরো কক্সবাজার জেলায়। তাছাড়া যে কোন প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে ভক্তদের ভোগান্তি ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ পুরো এলাকায় জোরদার রয়েছিল প্রশাসনের নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রতিবারের মতো কক্সবাজার জেলা পূজা উদ্্যাপন পরিষদের উদ্যোগে ও কক্সবাজার পৌরসভার সহযোগিতায় এবারও সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের উন্মুক্ত মঞ্চে জেলা পূজা উদ্্যাপন কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট রণজিৎ দাশের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মার সঞ্চালনায় সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সৈকতের মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত বিসর্জনোত্তর সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পড়ন্ত বেলায় ভক্ত, পূজার্থী, দর্শনার্থী, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রশাসনের সকল সদস্য ও সকল ধর্মের মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিজয়া শুভেচ্ছা। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, সারাদেশে ২৯ হাজার পূজা ম-পের কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি। এতে প্রমাণিত হয় জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা ভাল রয়েছে। তবে তিনি দুঃখ করে বলেন, একটি মহল বিদেশীদের উস্কানি দিয়ে দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চায়। এটা একমাত্র শেখ হাসিনা সরকারের শক্ত অবস্থানকে দুর্বল করার অপচেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। বাংলাদেশের দেশী-বিদেশী কারও নিরাপত্তার অভাব নেই। ভবিষ্যতেও হবে না। তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার হাতকে শক্ত করা হলে অন্যান্য সম্প্রদায়ের হাত আরও শক্ত হবে। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তরা বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশকেও একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছেন। আজ সকল সম্প্রদায়ের মানুষ এই বিসর্জন অনুষ্ঠানে এসেÑ আমরা যে সবাই অসাম্প্রদায়িক জাতি সেটা দেখিয়েছে; তার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। পরে মন্ত্রপাঠ শেষ করে বিসর্জন অনুষ্ঠানের সমাপ্ত হয়।
×