ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্গোৎসব সামনে রেখে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৫ অক্টোবর ২০১৫

দুর্গোৎসব সামনে রেখে বিশেষ নিরাপত্তা  ব্যবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ১৯ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব। ২৩ অক্টোবর বিজয়াদশমীর মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এ অনুষ্ঠান শেষ হচ্ছে। আসন্ন সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে সারাদেশে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দুর্গোৎসবের বিসর্জন ও মহরমের তাজিয়া মিছিল একই দিন হওয়ায় দুটি অনুষ্ঠান ঘিরে থাকছে বিশেষ নিরাপত্তা। বিজয়াদশমী ও তাজিয়া মিছিলের জন্য আলাদা রাস্তা নির্ধারণ করা হয়েছে। পুজোম-পে বিদেশীদের যাতায়াত নিশ্চিত করতে কৌশলী নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। যাতায়াতকারী বিদেশীদের সম্পর্কে আগাম তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। পুজো উপলক্ষে দেশের ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। এখন পর্যন্ত কোন প্রকার নাশকতার আশঙ্কার তথ্য মেলেনি। দেশের বিভিন্ন পুজোম-পে আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর বসানো হচ্ছে। পাশাপাশি সর্বক্ষণিক বিদ্যুত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে স্থাপন করা হয়েছে জেনারেটর। পুজোম-পসহ আশপাশের এলাকায় নজরদারি করতে পুলিশ ও র‌্যাবের তরফ থেকে বিপুলসংখ্যক কন্ট্রোল রুম ও সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। আপদকালীন মুহূর্ত মোকাবেলা করতে প্রস্তুত থাকছে পুলিশ ও র‌্যাবের বম্ব ডিসপোজাল টিম, র‌্যাবের ডগ স্কোয়াড, ক্রাইসিস রেসপন্স টিম, র‌্যাবের হেলিকপ্টার এমনকি সোয়াতের মতো হাইটেকনোলজির টিম। বিজিবিকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। প্রতিটি পুজোম-পে পুলিশ ও র‌্যাবের কন্ট্রোল রুমের মোবাইল নম্বর সেঁটে দেয়া হয়েছে। পুজোম-পের আশপাশে যানবাহন চলাচলের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বিসর্জনের স্থানগুলোতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকছে। বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শকের কার্যালয়ে এক মতবিনিময় ও অপরাধ সভা শেষে পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক এসব কথা জানান। তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে কোন নাশকতার আশঙ্কার খবর পাওয়া যায়নি। গোয়েন্দারা সারাদেশেই নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। দুর্গোৎসব ও মহরমের তাজিয়া মিছিলের বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। সম্প্রতি দুইজন বিদেশী খুনের ঘটনাকে মাথায় রেখেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ মহাপরিদর্শক আরও বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসবের বিসর্জন ও মহরমের তাজিয়া মিছিল একই দিন পড়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে বিজয়াদশমীর মিছিল যাতায়াতের রাস্তা আলাদাভাবে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এমনকি আলাদা আলাদা সময়ও নির্ধারণ করা হয়েছে। তাজিয়া মিছিল ও বিজয়াদশমীর মিছিল আলাদা আলাদা রাস্তা দিয়ে যাবে। তাজিয়া মিছিলের সময় পুজোর বিসর্জন হবে না। অথবা বিসর্জনের সময় তাজিয়া মিছিল হচ্ছে না। যদি হয় সেক্ষেত্রে কোন অনুষ্ঠানের ওপর কোন অনুষ্ঠানের ন্যূনতম প্রভাবও পড়বে না। যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতেই এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশ প্রধান বলেন, পুজোম-পে স্থানীয় গণ্যমান্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে পুলিশবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। স্থানীয় পুলিশের নম্বর পূজা উদ্যাপন কমিটিকে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও পুলিশের পেট্রোল টিম, র‌্যাব, আনসার, এপিবিএন, কমিউনিটি পুলিশ সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করবে। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মাহ্ফুজুল হক নুরুজ্জামান জানান, গত বছর ঢাকা বিভাগে ৭ হাজার ৬৬টি ম-পে পুজো অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার ঢাকা বিভাগে ৭ হাজার ৮১টি ম-পে পুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সব পুজোম-পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকল জেলার পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এবার খুবই পরিকল্পিত ও কৌশলী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এবার সারাদেশের পুজোম-প ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা থাকছে। গ্রাম পর্যায়ের ম-পেও থাকছে পুলিশী নিরাপত্তার পাশাপাশি বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি। পুজোম-পে অনেক বিদেশী যাতায়াত করে থাকেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেশের প্রতিটি থানা এলাকায় থাকা বিদেশীদের সঙ্গে পুলিশের তরফ থেকে আগাম যোগাযোগ করা হচ্ছে। তারা কোন পুজোম-পে অনুষ্ঠান দেখতে যাবেন কিনা, সে বিষয়ে আগাম জেনে নিচ্ছে পুলিশ। তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে কৌশলী অবস্থান নেয়া হয়েছে। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তার দিক খেয়াল রাখতে গোয়েন্দা নজরদারি বা সাদা পোশাকে পুলিশ নজর রাখছে। এদিকে র‌্যাবের তরফ থেকেও সারাদেশে নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। রাজধানীতে ৫টিসহ সারাদেশেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক কন্ট্রোল রুম স্থাপন করছে র‌্যাব। নির্বিঘেœ পুজো অনুষ্ঠানে সহায়তা করতে সর্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকছে পুলিশ ও র‌্যাবের বম্ব ডিসপোজাল টিম, র‌্যাবের ডগ স্কোয়াড, ক্রাইসিস রেসপন্স টিম এমনকি সোয়াতের মতো হাইটেকনোলজির টিম। বিজিবিকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। প্রতিটি পুজোম-পে পুলিশ ও র‌্যাবের কন্ট্রোল রুমের নম্বর সেঁটে দেয়া হয়েছে। যাতে যেকোন ধরনের প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। পুলিশ ও র‌্যাব স্ট্যান্ডবাই থাকছে। কল পাওয়ামাত্র দ্রুত ঘটনাস্থলে হাজির হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়া সারাদেশে চেকপোস্ট বসানো হচ্ছে। প্রতিমা বিসর্জনের দিন রাস্তা, জলাশয়, খাল ও নদী-ঘাটসমূহে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ ও নৌ-টহল অব্যাহত থাকবে। থাকছে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা।
×